এখন যাঁদের দেখছি/ঘরোয়া গানের সভা

সাঁইত্রিশ

ঘরোয়া গানের সভা

 নিজের স্মৃতি মঞ্জুযার সঞ্চয়ই আমার অবলম্বন। কাজেই মাঝে মাঝে নিজের কথা না ব’লেও উপায় নেই। এবারেও নিজের প্রসঙ্গ নিয়েই লেখা সুরু করব।

 আমার স্বর্গীয় পিতৃদেব রাধিকানাথ রায় নিজেকে পণ্ডিতজন মনে না করলেও ইংরেজী ও বাংলা সাহিত্যে ছিলেন লব্ধপ্রবেশ। তাঁর রচনাশক্তিও ছিল। কখনো প্রকাশ করতেন না বটে, কিন্তু দার্শনিক প্রবন্ধ রচনা করতেন এবং সেগুলি সুলিখিত। তাঁর খুব একটি ভালো অভ্যাস ছিল। তিনি ধার ক’রে বই পড়তেন না, কিনে পড়তেন। ইংরেজী ও বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখকগণের গ্রন্থাবলী ছিল তাঁর সংগ্রহশালায়। সাহিত্য সাধনার প্রেরণা লাভ করেছি আমি আমার পিতৃদেবের কাছ থেকেই

 পিতৃদেবই আমার মনে বপন করেছেন সঙ্গীতের বীজ। তিনি নিজে যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। অনেকরকম বাজনা বাজাতে পারতেন—বিশেষ ক’রে ফ্লুট ও এসরাজ বাদনে তাঁর নামডাক ছিল যথেষ্ট। এখনো চোখের সামনে দেখি, বাবা এসরাজ বাজাচ্ছেন, আর তাঁর দুই পাশে দাঁড়িয়ে আমার দুই ভগ্নী সমস্বরে গান গাইছে। এ ছিল প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আমার জ্যেষ্ঠতাতপুত্র স্বর্গত সতীশচন্দ্র রায় ছিলেন গতযুগের একজন বিখ্যাত গায়ক। গ্রামোফোনের রেকর্ডেও তাঁর কয়েকটি গান তোলা আছে। সতীশদাদাকে নিয়ে বাবা প্রায়ই গান-বাজনার আয়োজন করতেন এবং নিজে বাজাতেন কোনদিন তবলা ও কোনদিন এসরাজ। গভীর রাত্রি পর্যন্ত গান-বাজনা চলত এবং আসরে থাকত না তিলধারণের ঠাঁই। সেইসঙ্গে মাঝে মাঝে অন্যান্য গায়করাও আসরের শোভাবর্ধন করতেন। বাল্যকাল থেকে এই পরিবেশের মধ্যে মানষ হয়ে আমারও মনের ভিতরে গেঁথে গিয়েছিল গানের শিকড়।

 আমার বয়স যখন বছর পনেরো, তখন গ্রামোফোনের মাধ্যমে স্বর্গীয় গায়ক লালচাঁদ বড়ালের নাম ফিরছে বাংলার ঘরে-বাইরে লোকের মুখে মুখে। তাঁর বসতবাড়ী ছিল প্রেমচাঁদ বড়াল ষ্ট্রীটে। একদিন সাহস সঞ্চয় ক’রে তাঁর কাছে গিয়ে ধরনা দিলুম। সিঁড়ি দিয়ে দ্বিতলে উঠে দেখলুম, একটি ঘরের দরজার সামনে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। সৌম্য মুখ, দোহারা চেহারা, সাজ-পোশাক বেশ ফিটফাট।

 তিনি সুধোলেন, “কি দরকার বাবা?”

 বললুম, “আজ্ঞে, আপনার কাছে গান শিখতে চাই।”

 লালচাঁদবাবু, স্মিতমুখে জানালেন, তিনি গুরুগিরি করেন না।

 তারপর গেলুম তখনকার আর একজন প্রথম শ্রেণীর গায়ক স্বর্গীয় মহিম মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি স্বর্গীয় রাধিকা গোস্বামীর অন্যতম প্রধান শিষ্য। তাঁর গানের গলাও ছিল সুমধুর। তিনি আগে শুনতে চাইলেন আমার কণ্ঠস্বর। তারপর শুনে বললেন, “বেশ, আমি তোমাকে গান শেখাব।”

 ব্রজদুলাল ষ্ট্রীটের একখানা ছোট বাড়ীতে ছিল মহিমবাবুর সঙ্গীতবিদ্যালয়। রাধিকা গোস্বামীও মাঝে মাঝে সেখানে এসে দই-চারদিন থেকে যেতেন। গান শিখতে আসত সেখানে আরো কয়েকজন ছাত্র। তাদের সঙ্গে আমারও কিছুদিন কেটে গেল সেইখানেই।

 কিন্তু বেশীদিন নয়। গান নিয়ে মেতে থাকতে থাকতেই আমার মনের মধ্যে প্রবলতর হয়ে উঠল সাহিত্যের নেশা। তানপুরা তুলে রেখে কাগজ, কলম ও দোয়াত নিয়েই আমার কেটে যেতে লাগল সারাক্ষণ। হাতমক্স করতে করতে আর গলা সাধবার সময় পেতুম না।

 নিজে গায়ক হলুম না বটে, কিন্তু সঙ্গীতকে ভুলতে পারলুম না। ভালো গান শোনবার লোভে নানা আসরে গিয়ে হাজিরা দিতে লাগলুম। তখনকার দিনে জলসার ছড়াছড়ি ছিল না। রঙ্গালয়ে শোনা যেত নিম্নতর শ্রেণীর গান এবং রঙ্গালয়ের বাইরে ঘরোয়া গানের সভা বসাতেন ধনী ব্যক্তিগণ বা সম্পন্ন গৃহস্থরা। আজ রঙ্গালয়ে গানের পাট প্রায় তুলে দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু চারিদিকেই দেখা যায় গানের অতি বাড়াবাড়ি। গ্রামোফোন আছে, সিনেমা আছে, রেডিও আছে, আর আছে বড় বড় সঙ্গীত– সম্মিলন। গান হয়ে উঠেছে সর্বসাধারণের সম্পত্তি। ফ্যালো কড়ি, মাখো তেল। আগে কড়ি ফেলতেন ধনীরা এবং তেল মাখতে পেতেন কেবল তাঁরাই, সমজদার ব’লে যাঁদের আমন্ত্রণ করা হ’ত। এমন কথাও মাঝে মাঝে মনে হয়, একালে গানের আধিক্য হয়েছে যতটা, ততটা হয় নি গণের আধিক্য। আজ স্বল্প জলেও পুঁটি মাছরা সাঁতার কাটতে পারে পরমানন্দে, কিন্তু সেকালকার গুণীদের বৈঠকে স্বল্পবিদ্যার খাতির ছিল না।

 শ্রীনির্মলচন্দ্র চন্দ্রের বাসভবনে তাঁর খুল্লতাত ব্যাচাবাবু মাঝে মাঝে যে মাইফেলের আয়োজন করতেন, অনায়াসেই এখনকার সঙ্গীতসম্মিলনীর সঙ্গে তার তুলনা করা যায়। কেবল কলকাতার বড় বড় গাইয়ে নন, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পীরা আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে যোগদান করতে আসতেন। আরো বড় বড় আসর ছিল। সঙ্গীতের প্রতি প্রভূত অনরোগ থাকলেও একালের অধিকাংশ ব্যক্তিই সাধারণ সঙ্গীত– সম্মিলনে আসন গ্রহণ করতে পারেন না। কারণ ভালো আসনগুলি এমনি অগ্নিমূল্য যে মধ্যবিত্তদের চিত্তে আগ্রহ থাকলেও বিত্তে কুলায় না। কিন্তু সেকালে সুরসিকরা ট্যাঁক গড়ের মাঠ হ’লেও বড় বড় ঘরোয়া আসরে গিয়ে আসীন হ’তে পারতেন অনায়াসেই। এবং সঙ্গীতসুধার সঙ্গে সঙ্গেই থাকত কিছু কিছ 'অধিকন্তু'। অর্থাৎ বিনামূল্যে পানের খিলি ও সিগারেট প্রভৃতি। আগেকার ধনীদের দস্তুরমত দিল ছিল। এখনকার ধনীরা একলসেঁড়ে নিজের নিজের ফূর্তি নিয়েই মশগুল, পাঁচজনের সঙ্গে মিলে-মিশে উৎসব করার কথা তাঁদের মনেও জাগে না।

 আগেকার বদান্যতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। সাহিত্যগুরু রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন “বিচিত্রা বৈঠক”। সুপ্রশস্ত আসর—বৃহতী জনতারও স্থান সংকুলান হ’ত। সেখানে থিয়েটার হ’ত, যাত্রা হ’ত, নাচ হ’ত, দেশী-বিদেশী গুণীর গান হ’ত এবং সেই সঙ্গে হ’ত কবিতা বা নাটক বা গল্প বা প্রবন্ধ পাঠ ও বিবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা। বৈঠকের নিজস্ব ও প্রকাণ্ড পুস্তকাগারে যে সব মহার্ঘ্য গ্রন্থ রক্ষিত ছিল, কলকাতার কোন বিখ্যাত লাইব্রেরীতেও তা পাওয়া যেত না। সভ্যরা ইচ্ছা করলেই যে কোন বই বাড়ীতে নিয়ে যেতে পারতেন। 'বিচিত্রা'র সভ্য-শ্রেণীভুক্ত ছিলেন বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি—একাধারে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর বরপুত্র। তাঁরা ইচ্ছা করলেই মুক্তহস্তে প্রচুর টাকা চাঁদা দিতে পারতেন। আবার সভ্যদের মধ্যে আমার মত এমন অনেক লোকও ছিলেন, যাঁদের ধনগৌরব উল্লেখ্য নয় আদৌ। যিনি রাজাসনে ব’সে লক্ষ লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখেন এবং যাঁরা স্বপ্ন দেখেন ছেঁড়া কাঁথায় শয়ে, তাঁদের উভয়েরই সামনে ছিল 'বিচিত্রা'র দ্বার উন্মুক্ত। তাঁরা উভয়েই লাভ করতেন সেখানে সমান অধিকার, সমান ব্যবহার, সমান আতিথেয়তা। এবং তাঁদের কারুকেই ব্যয় করতে হ’ত না একটিমাত্র সোনার টাকা বা রূপোর টাকা বা কাণাকড়ি। 'বিচিত্রা’র বহু সভ্যই আজও ইহলোকে বিদ্যমান। কিন্তু অনুরূপ কোন প্রতিষ্ঠানের আয়োজন ক’রে তাঁদের চিত্তরঞ্জন করতে পারেন, এমন কোন ব্যক্তিই আজ বাংলাদেশে বর্তমান নেই। এখন যাঁদের দেখছি তাঁদেরও অনেকেই ব’সে আছেন টাকার পাহাড়ের টঙে। সোনাদানার ভার বইতে পারে তো গদর্ভরাও, কিন্তু ললিত কলার আসরে রাসভ-সঙ্গীতের স্থান কোথায়?

 গেলবারে সুকবি শ্রীফণীন্দ্রনাথ রায়ের কথা বলেছি। তাঁর শ্বশুরবাড়ী শান্তিপুরে। একদিন তাঁর সঙ্গে আমরা দল বেঁধে সেখানে গিয়ে হাজির হলুম। শান্তিপুর হচ্ছে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ স্থান। চৈতন্যদেবের পবিত্র পায়ের ধূলো বুকে নিয়ে শান্তিপুরে পরিণত হয়েছে বৈষ্ণবদের তীর্থক্ষেত্রে। এখানে আছে তাঁর অনেক অবদান। কিন্তু সে সব কিছুর জন্যে আমরা আকৃষ্ট হইনি শান্তিপুরের দিকে। আমরা বেরিয়ে পড়েছিলুম কলকাতার বাইরে গিয়ে খানিকটা হাঁপ ছাড়বার জন্যে। রাণাঘাট থেকে পদব্রজে চূর্ণি নদীর খেয়াঘাটের দিকে চল্লুম। চন্দ্রপুলকিত রজনী। পথের দুইধারে বনে বনে আলোছায়ার মিলনলীলা। চারদিকের নিস্তব্ধতার মধ্যে সুরসংযোগ করছে গানের পাখীরা। এক জায়গায় বনের আড়ালে বেজে উঠল কার বাঁশের বাঁশী। সেই নিরালায় জ্যোৎস্নার বন্যায় মুরলীমূর্চ্ছনায় আমারও মন হয়ে উঠল সঙ্গীতময়। বাঁশীর তান তেমন মিষ্ট আর কখনো লাগে নি—বোধ করি এ স্থান-কালের গুণ। ঠিক সময়ে ঠিক সুরটি যদি প্রাণের তন্ত্রীতে এসে লাগে, তবে তা আর ভোলা যায় না।

 কিন্তু সে যাত্রা আমাদের শাস্তিপরে যাওয়া সার্থক হয়েছিল আর একটি বিশেষ কারণে। শুনুলাম বিখ্যাত হারমোনিয়াম বাদক (এখন স্বর্গীয়) শ্যামলাল ক্ষেত্রীর শিষ্য বীণবাবু, (ভদ্রলোকের ডাকনামটিই কেবল মনে আছে) শান্তিপরেই বাস করেন। সন্ধ্যাবেলায় আমরা দল বেঁধে তাঁর বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত হলুম। আমাদের দলে ছিলেন “অর্চ্চনা”র সহকারী সম্পাদক স্বর্গীয় কৃষ্ণদাস চন্দ্র, প্রসিদ্ধ গল্পলেখক ও অ্যাডভোকেট এবং “অর্চ্চনা”র সম্পাদক শ্রীকেশবচন্দ্র গুপ্ত, কবি শ্রীফণীন্দ্রনাথ রায়, সাহিত্যিক শ্রীঅমরেন্দ্রনাথ রায় এবং আরো কেউ কেউ, সকলের নাম স্মরণে আসছে না।

 কেউ ভালো হারমোনিয়াম বাজান, এটা বিশেষ কৌতূহলোদ্দীপক কথা নয়। বড় বড় ওস্তাদরা সুনজরে দেখেন নি হারমোনিয়াম যন্ত্রটাকে। এদেশে তার আভিজাত্যও নেই, এক শতাব্দী আগেও এখানে হারমোনিয়ামের চলন ছিল না। শুনেছি এখানে তার আবির্ভাব হয় রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ স্বর্গীয় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগ্রহে। অথচ রবীন্দ্রনাথ নিজেই পরে গানের বৈঠকে হারমোনিয়াম বর্জন করেছিলেন। আর সত্য কথা বলতে কি, এখানে হারমোনিয়ামের অবস্থা হয়ে উঠেছে বেওয়ারিস মালের মত। যে পায় তাকে নিয়ে যখন-তখন অপটু, হাতে টানা-হেঁচড়া করে ব’লে পাড়ার লোকের কাছে অনেক সময়ে যন্ত্রটা হয়ে ওঠে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।

 কিন্তু যথার্থ গুণীর হাতে পড়লে ঐ যন্ত্রই যে কি মন্ত্রশক্তি প্রকাশ করতে পারে, সেদিন বীণবাবুর বাজনা শনেই তা প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিলুম। নামেও বীণবাব, তাঁর হাতের ছোঁয়ায় হারমোনিয়ামের ভিতর থেকেও জেগে উঠল যেন কোন্ নতুন বাজনা। ছন্দে ছন্দে ইন্দ্রজালের ব্যঞ্জনা। আমাদের বিস্মরের সীমা রইল না।

 পরে বীণবাবুর সঙ্গে কলকাতাতেও দেখা হয়েছিল। তাঁর গুরু শ্যামলালবাবুর সঙ্গে দেখা করবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করলুম। তিনিও আমাকে হ্যারিসন রোডে শ্যামলালবাবুর বাসায় নিয়ে গেলেন। অত্যন্ত অমায়িক প্রিয়দর্শন ভদ্রলোক, চারুকলাকে অবলম্বন ক’রে বিবাহ করতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁর আস্তানায় এসে ভারতের সর্বশ্রেণীর খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পীরা জটলা করতেন। শ্যামলালবাবুকে দেখলুম বটে, কিন্তু তাঁর বাজনা শোনবার সুযোগ আর সেদিন হ’ল না, পরেও হয় নি।

 স্বর্গীয় বন্ধুবর নরেন্দ্রনাথ বসুর বাসভবনে আমাদের একটি ঘরোয়া সঙ্গীতসভা ছিল। সেখানে উচ্চশ্রেণীর গানবাজনার আয়োজন হ’ত প্রতি শনিবারেই। বাংলার বাইরে থেকেও সেরা সেরা গুণীজনকে আমন্ত্রণ ক’রে আনা হ’ত। একদিন এসেছিলেন এক অতুলনীয় শিল্পী, তাঁর নাম সোনে কি সনি বাবু, ঠিক মনে করতে পারছি না, তিনি গয়ানিবাসী ভারতবিখ্যাত হারমোনিয়াম বাদক স্বর্গীয় হনুমানপ্রসাদের পুত্র। তিনিও যা বাজালেন নামেই তা হারমোনিয়াম, কিন্তু শোনালে এমন বেণুবীণার কাকলী যে, মন আমাদের ভেসে গেল সুরের সুরধনীর উচ্ছলিত ধারায় ধারায়। তারপর কেটে গিয়েছে কত বৎসর, কিন্তু আজও সেই অমূর্ত সুরের মায়া খেলা ক’রে বেড়ায় আমার মনের পরতে পরতে।

 সাধারণ হারমোনিয়াম যে শিল্পীর সাধনায় একেবারেই অসাধারণ হয়ে ওঠে, আর একদিন তার প্রমাণ পেয়েছিলুম স্বর্গীয় সঙ্গীতাচার্য করমতুল্লা খাঁয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র রফিক খাঁয়ের বাজনা শুনে। তাও হচ্ছে অরূপ অপরূপ সুরবাহার।

 বছর চারেক আগে সেরাইকেলায় গিয়ে আবার রফিক খাঁয়ের দেখা পেয়েছিলুম। তিনি তখন সেরাইকেলার রাজাসাহেবের বৈতনিক শিল্পী। সেবারে তাঁর একক বাজনা শোনবার সুযোগ পাই নি, অন্যান্য যন্ত্রীর সঙ্গে তিনি হারমোনিয়াম বাজালেন ছউ নৃত্যের তালে তালে। ঐকতানের মধ্যে শিল্পীর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আবিষ্কার করা দুষ্কর ব্যাপার।

 এই বারে আমার নিজের বাড়ীর গানের বৈঠকের কথা বলব। সেখানেও আপনারা দেখতে পাবেন আধুনিক যুগের বহু যশস্বী সঙ্গীতশিল্পীকে।