এখন যাঁদের দেখছি/নরেশচন্দ্র মিত্র

সতেরো

নরেশচন্দ্র মিত্র

 ১৯২১ খৃষ্টাব্দের কথা। বাংলা অভিনয়-ধারার মোড় ঘুরিরে দেবার জন্যে বাঙালীরা যা করতে পারলে না, পার্সী ম্যাডানদের দ্বারা সাধিত হ'ল সেই কর্তব্য। প্রফেসর এবং য়ুনিভার্সিটি ইনষ্টিটিউটের প্রথিতযশাঃ শৌখীন অভিনেতা শিশিরকুমার ভাদুড়ী সাধারণ রঙ্গালয়ে যোগ দিয়ে ঐ বৎসরের ডিসেম্বর মাসে আত্মপ্রকাশ করলেন আলমগীরের ভূমিকায়।

 য়ুনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের নাট্য-সম্প্রদায়ের কথা নিয়ে সাধারণ দর্শকরা বড় একটা মাথা ঘামাতো না। সেখানকার শিল্পীরা বিশেষভাবে ছাত্র-সমাজের কাছেই পরিচিত ছিলেন। হঠাৎ সেখান থেকে শিশিরকুমারের মত একজন যুগান্তকারী শিল্পীর অভাবিত আবির্ভাব দেখে বিস্মিত জনসাধারণের তথা থিয়েটারের মালিকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হ’ল ঐ ইনষ্টিটিউটের দিকে।

 শৌখীন রঙ্গালয়ের প্রতি ছিল না আমার বিশেষ শ্রদ্ধা। প্রায়ই দেখেছি, নিতান্ত অচলরাও সেখানে অত্যন্ত সচল ব’লে বিখ্যাত হন। তাই আবাল্য নাট্যকলার অনুরাগী হয়েও ইনষ্টিটিউটের কোন নাট্যানুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকবার জন্যে আমার মনে জাগেনি আগ্রহ। শিশিরকুমারের আবির্ভাবের পর আমিও ইনষ্টিটিউট সম্বন্ধে কৌতূহলী হয়ে উঠলুম। সেখানে ভালো অভিনেতা আছেন আরো কে কে, বিশেষজ্ঞদের কাছে সেই খোঁজ নিতে লাগলুম। কেবল আমি নই, থিয়েটারের মালিকরাও নিচ্ছিলেন খোঁজ-খবর। লোকপরম্পরায় শোনা গেল সেখানকার আর একজন প্রতিভাবান অভিনেতার নাম তিনি শ্রীনরেশচন্দ্র মিত্র।

 ১৯২২ খৃষ্টাব্দ। একদিন মিনার্ভা থিয়েটারের মালিক স্বর্গীয় উপেন্দ্রনাথ মিত্র ও সেখানকার অধ্যক্ষ স্বর্গীয় সতীশচন্দ্র রায় আমার বাড়ীতে এসে যে প্রস্তাব করলেন তার সারমর্ম হচ্ছে এইঃ ম্যাডানরা শিশিরবাবুকে নামিয়ে অন্য সব থিয়েটারের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। দর্শকরা দেখতে চায় শিক্ষিত ও নূতন অভিনেতাদের মুখ। য়ুনিভার্সিটি ইনষ্টিটিউটের নরেশবাবুর খুব নামডাক শোনা যায়। শিশিরবাবুর “চাণক্যে”র সঙ্গে কাত্যায়নের ভূমিকায় তিনি নাকি অতুলনীয় অভিনয় করেন। তাঁকে যাতে সাধারণ রঙ্গালয়ে—অর্থাৎ মিনার্ভা থিয়েটারে নামাতে পারা যায়, সেজন্যে আমাকে সাহায্য করতে হবে।

 সাহায্য তো করব কিন্তু নরেশচন্দ্রের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই, তখনও পর্যন্ত তাঁকে আমি চোখেও দেখিনি। কাকে অবলম্বন ক’রে তাঁর সঙ্গে করব সংযোগ স্থাপন?

 সিমলা পাহাড়ের পদস্থ সরকারী কর্মচারী ও শৌখীন অভিনেতা স্বর্গীয় রাধিকানন্দ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘকালের ছুটি নিয়ে তখন কলকাতায় এসেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে আমার অল্পস্বল্প পরিচয় হয়েছিল। তাঁকে একদিন জিজ্ঞাসা করলুম, “নরেশচন্দ্র মিত্রকে চেনেন?”

 তিনি বললেন, “চিনি বৈকি।”

 আমি বললুম, “মিনার্ভার কর্তারা নরেশবাবুকে নিজেদের দলে টানতে চান, আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেবেন?”

 রাধিকানন্দ কেবল সম্মত হলেন না, সেই সঙ্গে বললেন, “আমিও মিনার্ভা থিয়েটারে নামতে চাই।”

 নরেশচন্দ্র ও রাধিকানন্দের সঙ্গে ইনষ্টিটিউটের আর একজন ভালো অভিনেতাও মিনার্ভা থিয়েটারে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পিছিয়ে যান। তাঁর নাম শ্রীজিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

 ইতিমধ্যে শিশিরকুমার ভাদড়ীর সঙ্গে দেখা। তিনি আমাদের এক বৈঠকে প্রায়ই আসতেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলুম, “নরেশবাবু কেমন অভিনয় করেন?”

 শিশিরকুমার বললেন, “নরেশ একজন গ্রেট আর্টিষ্ট।”

 —“রাধিকানন্দ?”

 —“ভালো অভিনেতা।”

 সেই বৈঠকেই একদিন নরেশচন্দ্রকে নিয়ে এলেন রাধিকানন্দ। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হ’ল।

 যথাসময়ে মিনার্ভা থিয়েটারের সঙ্গে নরেশচন্দ্র ও রাধিকানন্দের বন্দোবস্ত পাকা হয়ে গেল। ওখানকার কর্তৃপক্ষ সগর্বে ঘোষণা করলেন, “চন্দ্রগুপ্ত” নাটকের পুনরভিনয়ে “য়ুনিভার্সিটি ইনষ্টিটিউটের কোহিনূর” শ্রীযুক্ত নরেশচন্দ্র মিত্র চাণক্যের ভূমিকা গ্রহণ করবেন। এটা হচ্ছে শিশিরকুমারের আত্মপ্রকাশের কয়েক মাস পরের ঘটনা।

 ইনষ্টিটিউটে শিশিরকুমার চাণক্যের ভূমিকায় যথেষ্ট যশ অর্জন করেছিলেন। কিন্তু সাধারণ রঙ্গালয়ে তখন পর্যন্ত চাণক্য সেজে তিনি বোধ করি দেখা দেন নি, অন্ততঃ আমার স্মরণ হচ্ছে না। সাধারণ রঙ্গালয়ে ঐ ভূমিকায় তখন একা দানীবাবুরই জয়জয়কার, অন্য কেউ চাণক্য সাজতে ভরসা করতেন না।

 শিশিরকুমার নবাগত, সাধারণ নাট্যজগতে উদীয়মান। সেখানে দানীবাবুর তখন একাধিপত্য। সেই সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোন রঙ্গালয় যে লব্ধপ্রতিষ্ঠ দানীবাবুর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভূমিকার জন্যে নির্বাচিত করবেন সাধারণ নাট্যজগতে নামগোত্রহীন একজন তরুণ শিল্পীকে, এতটা কেউ কল্পনা করতেও পারেন নি। জনসাধারণ রীতিমত কৌতূহলী হয়ে উঠল। আমিও নরেশচন্দ্রের সাহস দেখে অল্পবিস্তর বিস্মিত হয়েছিলুম। কারণ সেই প্রথম আবির্ভাবকালেই হবে তাঁর শক্তির অগ্নিপরীক্ষা। নূতন ভূমিকা নয়। বহু-অভিনীত ও বহু প্রশংসিত চাণক্যের ভূমিকায় তাঁকে দেখলে লোকে দানীবাবুর সঙ্গে করবে তাঁর তুলনা। প্রথম অভিনয়েই তিনি যদি উতরে যেতে না পারেন, তবে ভবিষ্যতে তাঁর পথ হবে না কুসমাস্তৃত। মনে হয়েছিল, এ রকম ঝুঁকি নিয়ে নরেশচন্দ্র বুদ্ধিমানের কাজ করলেন না। তিনি কিন্তু অবিচলিত। অসঙ্কোচে মহলা দিতে লাগলেন। আত্মশক্তির উপরে ছিল তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস।

 অভিনয়ের রাত্রি হ’ল সমাগত। বহু পুরাতন নাটক “চন্দ্রগুপ্ত”, চাণক্যের ভূমিকায় নেই দানীবাবু, অ্যাণ্টিগোনাসের ভূমিকায় নেই প্রথিতনামা ক্ষেত্রনাথ মিত্র, তবু নবাগত নরেশচন্দ্র ও রাধিকানন্দকে দেখবার জন্যে প্রেক্ষাগৃহ পরিপূর্ণ হয়ে গেল বৃহতী জনতায়। বুঝলুম, আলমগীরের ভূমিকায় নবীন নট শিশিরকুমারের আশ্চর্য সাফল্য দেখে শিক্ষিত ও নূতন নটদের উপরে বেড়ে উঠেছে জনসাধারণের শ্রদ্ধা।

 এবং নরেশচন্দ্রও কারুকে হতাশ করলেন না। চাণক্যের ভূমিকায় তিনি দিলেন একটি সম্পূর্ণ নূতন ধারণা। তাঁর ভাষণ, অঙ্গহার এবং অভিনয়ভঙ্গী হ’ল এমন অভিনব যে, দানীবাবুর সঙ্গে কেউ তাঁর তুলনা করবার অবসরই পেলে না। সকলেই বুঝলে, তাঁর নিজস্ব আছে যথেষ্ট। আমিও বুঝলুম, শিশিরকুমারের কথাই সত্য। নরেশচন্দ্র হচ্ছেন “গ্রেট আর্টিস্ট।”

 চাণক্যের পর “প্যালারামের স্বাদেশিকতা” হাস্যনাট্যে মিঃ জেকবের ভূমিকা। ছোট একটি সাহেবের ভূমিকা, কিন্তু অসাধারণ নাট্য নিপুণতায় ছোটও যে কতটা বড় হয়ে উঠতে পারে, তার অকাট্য প্রমাণ দিলেন নরেশচন্দ্র। তারপর “নসীরাম” নাটকেও করলেন চমৎকার অভিনয়।

 শেষোক্ত নাট্যাভিনয়ে ঘটল একটি বিপদজনক ঘটনা! রঙ্গমঞ্চের চোরা দ্বার (trap-door) ভেদ ক’রে একখানি রথ আত্মপ্রকাশ ক’রে ধরাধাম থেকে শূন্যে গোলকধামে অদৃশ্য হয়ে যেত এবং নরেশচন্দ্র একদিন সত্য সত্যই স্বর্গধামে যেতে যেতে কোনরকমে করলেন নশ্বর দেহের মধ্যে আত্মার অস্তিত্ব রক্ষা। রথের ভিতরে ছিলেন তিনি এবং আর একজন অভিনেত্রী। অদৃশ্য তার অবলম্বন ক’রে রথ শূন্যে উঠে যখন প্রায় লোকের চোখের আড়ালে চ’লে গিয়েছে—অর্থাৎ রঙ্গালয়ের ছাদের কাছাকাছি হয়েছে, তখন হঠাৎ কল গেল বিগড়ে, রথখানা ঝুপ ক’রে শূন্য থেকে নেমে এসে তীরবেগে চোরা দ্বারের ভিতর দিয়ে চ’লে গেল আবার চোখের আড়ালে— অর্থাৎ রঙ্গমঞ্চের তলায়! সর্বনাশ ভেবে আঁতকে উঠলুম আমরা। সেটা নাটকের শেষ দৃশ্য। যবনিকা ফেলে দেওয়া হ’ল। সকলেই মঞ্চের উপরে ছুটে গেলেন। প্রত্যেকেরই ধারণা হ’ল হয় জীবন্ত অবস্থায় কারুকে পাওয়া যাবে না, নয়তো পাওয়া যাবে সাংঘাতিকভাবে আহত অবস্থায়।

 হঠাৎ দেখা গেল, অভিনেত্রীটি চোরা দ্বার দিয়ে মঞ্চের উপরে উঠে এল—তার চোখে-মুখে দারুণ আতঙ্ক। তারপর মঞ্চের উপর থেকে সবেগে দৌড় মেরে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। শুনেছি সেই বিষম দৌড় শেষ হয়েছিল একেবারে তার বাসায় গিয়ে।

 নরেশচন্দ্রও আবিষ্কৃত হলেন জীবন্ত—কিন্তু আহত অবস্থায়। চোরা দ্বার দিয়ে রথ যখন পাতালে নামে তখন রঙ্গমঞ্চের প্রান্তের সঙ্গে হয় তাঁর হাতের কনুইয়ের সঙ্ঘর্ষ। কনুইয়ের হাড় একেবারে চুরমার হয়ে যায় নি বটে, কিন্তু সেই কনুই নিয়ে তাঁকে ভুগতে হয়েছিল বেশ কিছুকাল।

 শুনলুম, রথ যখন নেমে এসেছিল মাটি থেকে ইঞ্চি কয়েক উপরে, তখন রথারোহীদের সৌভাগ্যক্রমে বিগড়ে যাওয়া কল নাকি আবার আপনা-আপনিই ঠিক হয়ে যায়। তা নইলে নরেশচন্দ্র সূক্ষ্ম দেহ নিয়ে গোলকধামে যেতেন কিনা জানি না, তবে সশরীরে আজ যে ধরাধামে বিদ্যমান থাকতেন না, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাঁকে রক্ষা করেছেন ভগবান।

 যতদূর মনে পড়ে, এই দুর্ঘটনার পর “নসীরামের” অভিনয় বন্ধ হয়ে যায়। এবং নরেশচন্দ্রও ব্যক্তিগত কারণে মিনার্ভা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পর্ক তুলে দিয়ে তাজমহল ফিল্ম কোম্পানীতে যোগদান করেন। তারপর চিত্রজগতে হয় তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ। ছবি তখনও কথা কইতে শেখেনি।

 তারপর জনসাধারণের সঙ্গে নরেশচন্দ্রের আবার দেখা হয় ১৯২৩ খৃষ্টাব্দে। ষ্টার রঙ্গমঞ্চে আর্ট থিয়েটার লিমিটেড খোলেন “কর্ণার্জুন” এবং নরেশচন্দ্র গ্রহণ করেন শকুনির ভূমিকা। এই পালাটি কেবল লোকপ্রিয়তার জন্যে নয়, অন্য এক কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে। “কর্ণার্জুন” নাট্যাভিনয়েই সাধারণ বাংলা রঙ্গালয়ে সর্বপ্রথমে দেখা দেন তিনকড়ি চক্রবর্তী, অহীন্দ্র চৌধুরী, দুর্গা দাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও ইন্দুভূষণ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি অভিনেতৃগণ। “শকুনি” হচ্ছে নরেশচন্দ্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভূমিকা এবং আমার মতে সমগ্র “কর্ণার্জুন” পালায় “শকুনি”র উপরে টেক্কা মারতে পারেন নি আর কেউ।

 তারপর নরেশচন্দ্র নানা রঙ্গালয়ে অভিনয় করেছেন অসংখ্য ভূমিকায়, এখানে তার ফর্দ দাখিল করবার জায়গা নেই। তাঁর মত চৌকস নটের সংখ্যা বেশী নয়। গম্ভীর, হাস্যরসাত্মক ও সিরিয়োকমিক” প্রভৃতি সকল শ্রেণীর ভূমিকাতেই তিনি অর্জন করেছেন অসামান্য কৃতিত্ব। তিনি যে গীতি-সংবলিত ভূমিকারও মর্যাদা রক্ষা করতে পারেন, “পুণ্ডরীক” নাট্যাভিনয়ে সে প্রমাণও পাওয়া গিয়াছে। নবযুগের শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের মধ্যে এখন এক জহরলাল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া গান গাইবার শক্তি আর কারুর নেই। এ-শক্তি যাঁদের ছিল, তাঁরা এখন স্বর্গত কিংবা বিদায় নিয়েছেন রঙ্গালয় থেকে। যেমন তিনকড়ি চক্রবর্তী, নির্মলেন্দু লাহিড়ী, বিশ্বনাথ ভাদুড়ী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ও জীবন গঙ্গোপাধ্যায় প্রভৃতি।

 নরেশচন্দ্র কেবল নট নন, সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারেন নাট্যাচার্যের কর্তব্যও। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষালাভ ক’রে নাম কিনেছেন এ যুগের বহু নট-নটীই। আমি তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি দেখেছি। তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর শিক্ষক।

 চলচ্চিত্র-জগতেও নট, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসাবে আছে তাঁর যথেষ্ট অবদান। কখনো অভিনেতা এবং কখনো পরিচালকরূপে তিনি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছেন একাধিকবার। তাঁর দ্বারা পরিচালিত “স্বয়ংসিদ্ধা” ও “কঙ্কাল” প্রভৃতি চিত্রের জনপ্রিয়তা স্মরণীয়।

 ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। এক সময়ে বহু রাত্রির অধিকাংশ তাঁর সঙ্গে একত্রে যাপন করেছি। মধ্য রাত্রে রঙ্গালয়ে হ’ত যখন যবনিকাপাত, বসত তখন আমাদের বন্ধুসভা। সেখানে হাজির থাকতেন তিনি, রাধিকানন্দ মুখোপাধ্যায় এবং আরো কেউ কেউ। রসালাপে এবং গল্পগুজবে কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ভোরের পাখীর ঘুম ভাঙবার সময় যে এসেছে, কারুর থাকত না সে খেয়াল। মাঝে মাঝে সে আসরে এসে যোগ দিতেন শিশিরকুমার ভাদুড়ী। আসর সেদিন জমজমাট হয়ে উঠত, কারণ শিশিরকুমারের সংলাপের তুলনা নেই।

 জানি, সে সব দিন আর ফিরবে না। মানুষের জীবনের একটি কঠিন সত্য হচ্ছে, উপভোগ্য অতীত কোনদিন বর্তমানে পরিণত হয় না। কিন্তু যারা জীবনসন্ধ্যায় এসে উপস্থিত হয়েছে, অতীতের সুখস্মৃতিই হচ্ছে তাদের আনন্দের প্রধান সম্বল।