এখন যাঁদের দেখছি/সেরাইকেলার রাজাসাহেব

আট

সেরাইকেলার রাজাসাহেব

 উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ ও পাটনা প্রভৃতির মত সেরাইকেলাও এতদিন ছিল একটি করদ রাজ্য। আকারে বৃহৎ নয়। সম্প্রতি ভারতের অন্তর্গত হয়েছে।

 কিছুকাল আগে সেরাইকেলাকে বিহারের ভিতরে চালান ক’রে দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তার উপরে আছে উড়িষ্যার ন্যায়সঙ্গত দাবি। কারণ সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের উড়িয়া ব’লেই মনে করে এবং উড়িয়া ভাষাতেই কথা কয়। বাংলাদেশের সঙ্গেও তার যথেষ্ট সংস্রব আছে, কারণ সে বাংলারই প্রতিবেশী এবং সেরাইকেলার বাসিন্দারা বাংলাভাষাও বেশ বোঝে।

 কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিবেশী হ’লেও তেরো-চৌদ্দ বৎসর আগেও আমি সেরাইকেলার নাম পর্যন্ত জানতুম না, কারণ তার কোন বিশেষ অবদান বাংলাদেশের ভিতরে এসে পৌঁছয়নি।

 তাই স্বর্গত প্রমোদ-পরিচালক হরেন ঘোষ যখন প্রস্তাব করলেন, “সেরাইকেলার রাজাসাহেবের কাছ থেকে আমন্ত্রণ এসেছে। ওখানকার স্থানীয় নাচ দেখতে যাবেন?” আমি প্রলুব্ধ হলুম না। বহুকাল আগে ইংলণ্ডের এক যুবরাজের কলকাতা আগমন উপলক্ষে এখানে ময়ূরভঞ্জের পাইকদের নাচ দেখানো হয়েছিল এবং সে নাচ হয়েছিল অত্যন্ত লোকপ্রিয়। কিন্তু সেরাইকেলার নাচ কখনো দেখিনি বা তার কথাও কারুর মধ্যে শুনিনি। কাজেই অবহেলাভরে হরেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলুম। পরের বৎসরে আবার এল রাজাসাহেবের আমন্ত্রণ। ইতিমধ্যে নৃত্যবিশেষজ্ঞ হরেন ঘোষের মুখে সেরাইকেলার ছউ নাচের উজ্জল বর্ণনা শ্রবণ ক’রে মনের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে প্রভূত কৌতূহল। গ্রহণ করলাম দ্বিতীয় বারের আমন্ত্রণ। কলকাতা থেকেই রাজাসাহেবের অতিথিরূপে ট্রেণে গিয়ে আরোহণ করলুম।

 ছউ নাচ দেখলুম যথাসময়ে। পাহাড়, প্রান্তর, কান্তার ও নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝখানে সহর থেকে দূরে গ্রাম্য পরিবেশের মধ্যে মনুষ্যসৃষ্ট চারুকলার এত ঐশ্বর্য যে লুকিয়ে থাকতে পারে, এমন কল্পনা মনেও আসেনি। কেবল পরিকল্পনার মাধুর্ষে ও বিস্ময়প্রাচুর্যে নয়, ছন্দসৌকুমার্যে, ভঙ্গি-বৈচিত্র্যে ও কাব্যলালিত্যেও সেরাইকেলার এই ছউ নৃত্য আমার চিত্তকে ক’রে তুললে সমৃদ্ধ ও উৎসবময়। ভারতের অধিকাংশ প্রাদেশিক নৃত্যের মত- এ নাচ একদেশদর্শী নয়, মানুষের বিচিত্র জীবনকে এ দেখতে ও দেখাতে চেয়েছে সকল দিক দিয়েই। পৌরাণিক, আধুনিক, লৌকিক, আধ্যাত্মিক, ঐতিহাসিক, সাংসারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, কাল্পনিক ও বস্তুতান্ত্রিক তাবৎ চিত্রই ফুটে ওঠে এই নাচের ছন্দোবদ্ধ আঙ্গিক অভিনয়ের ভিতর দিয়ে। উদয়শঙ্করের আবির্ভাবের আগেই এমন এক সর্বতোমুখ নৃত্য বাংলাদেশের পাশেই সেরাইকেলার সীমাবদ্ধ ক্ষুদ্র আয়তনের মধ্যে লালিত হয়ে এসেছে, অথচ সে সংবাদ বাইরের কেহই পায়নি। বাংলাদেশে এই অপূর্ব নৃত্যের কাহিনী সর্বপ্রথমে প্রকাশিত হয় আমার দ্বারা সম্পাদিত “ছন্দা” পত্রিকায়, সে হচ্ছে মাত্র এক যুগ আগেকার কথা।

 ভারতনাট্যম্, কথাকলি, মণিপুরী বা কথক প্রভৃতি নৃত্য প্রচুর প্রশস্তি লাভ করেছে, কিন্তু ওদের কোনটির মধ্যেই প্রকাশ পায় না আধুনিক যুগধর্ম, ওরা প্রাণপণে আঁকড়ে আছে অতীতকেই। আমরা ওদের দেখি, খুসি হই, উপভোগ করি, অভিনন্দন দি, কিন্তু বিংশ শতাব্দীর সভ্যতার কোলে মানুষ হয়ে ওদের প্রাণের আত্মীয় ব’লে মনে করতে পারি না, কারণ ওদের মধ্যে খুঁজে পাই না বর্তমানের প্রাণবস্তু। এইজন্যেই উদয়শঙ্কর যখন অতীতের সঙ্গে যোগসূত্র অবিচ্ছিন্ন রেখে নব নব পরিকল্পনায় আধুনিক মনের খোরাক জোগাবার ভারগ্রহণ করলেন, তখনই তিনি হয়ে উঠলেন আবালবৃদ্ধবনিতার প্রেয় স্বজন। তাঁরও বিশেষ গুণপনা এবং সৃষ্টিক্ষম প্রতিভার দিকে সর্ব প্রথমে বাংলাদেশের রসিকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল মৎসম্পাদিত “নাচঘর” পত্রিকাতেই।

 কিন্তু উদয়শঙ্করের আগেও যে অতীতের ঐতিহ্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ না ক’রেও গোঁড়ামির শৃঙ্খল ছিঁড়ে ভারতীয় নৃত্যকলার মধ্যে যুগোপযোগী নূতনত্ব আনবার চেষ্টা হয়েছিল, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই ছউ নাচ। তবে সে সত্য বহু দিন পর্যন্ত সকলের অগোচরে থেকে গিয়েছিল চক্ষুষ্মান সমালোচকের অভাবে।

 ছউ নাচের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিপালক হচ্ছেন সেরাইকেলার রাজা শ্রীআদিত্যপ্রতাপ সিং দেও বাহাদুর। নাচ দেখবার পর তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হ’ল। আমি বললাম, “রাজাসাহেব, সেরাইকেলার এমন একটা অপূর্ব অবদানের কথা বাইরের লোক জানে না। দুঃখের বিষয়, তাঁদের জানাবার জন্যে কোন উল্লেখযোগ্য চেষ্টাও হয়নি।”

 সেখানে আরো কেউ কেউ উপস্থিত ছিলেন। কে একজন বললেন, “এ নাচকে আমরা সেরাইকেলার নিজস্ব ব’লে মনে করি। একে দেশের বাইরে নিয়ে গেলে আরো অনেকেই এর নকল করতে পারে।” অর্থাৎ তাঁর ধারণা, সাত নকলে আসল খাস্তা হওয়ার সম্ভাবনা।

 ভারতবর্ষে আর্টের কোন কোন ক্ষেত্রে এই রকম সংকীর্ণ মনোবৃত্তি পোষণ করা হয়—বিশেষ ক’রে “ক্লাসিকাল” সঙ্গীতকলার। ওস্তাদরা সঙ্গীতের বিশেষ বিশেষ গুপ্তকথা বাইরে কারুর কাছে ব্যক্ত করতে চাননি, তা জানতে পেরেছে বংশানুক্রমে কেবল তাঁদের উত্তরাধিকারীরাই।

 পরমাণু–বোমার নির্মাণপদ্ধতি লুকিয়ে রাখা উচিত, কারণ তা সুলভ হ’লে পৃথিবী থেকে মনুষ্যজাতি লুপ্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ললিতকলা করে বিশ্বের কল্যাণসাধন। যা সর্বজনভোগ্য, তাকে সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে বন্দী রাখা স্বার্থপরতা।

 উপরন্তু অনুকরণের দ্বারা শ্রেষ্ঠ আর্টের মহিমা কোনদিনই ক্ষুন্ন হয়নি। অননুকরণীয় হচ্ছেন কাব্যে রবীন্দ্রনাথ, চিত্রে অবনীন্দ্রনাথ, অভিনয়ে শিশিরকুমার, নৃত্যে উদয়শঙ্কর প্রভৃতি। অনুকারীরা যখনই এঁদের অবলম্বন করেছেন, হাস্যাস্পদ ছাড়া আর কিছুই হ’তে পারেননি। পরে আমি ছউ নাচেরও (‘শ্রীদুর্গা’ নৃত্যের) অনুকরণ দেখেছি। কিন্তু সে অনুকৃতি দেখে আমার মনে পড়েছে চেরাগের তলায় অন্ধকারের কথা।

 হরেন ঘোষের চেষ্টায় অবশেষে রাজা আদিত্যপ্রতাপের মত পরিবর্তন হয়। সেরাইকেলার নির্মোক ভেঙে ছউ নাচ প্রথমে কলকাতায় আসে এবং তারপর যায় য়ুরোপেও।

 সেরাইকেলার যে প্রতিবেশের মধ্যে ছউ নাচ অনুষ্ঠিত হয়, দেশের বাইরে গিয়ে তাত্থেকে তাকে বঞ্চিত হ’তে হয়েছিল। ছউ নাচের স্বাভাবিক আসর হচ্ছে যাত্রার আসরের মত, শিল্পীদের চারিদিকেই দর্শকরা আসন গ্রহণ করে মণ্ডালাকারে। আধুনিক নাচঘরের অপ্রশস্ত আবেষ্টনের মধ্যে তার আবেদন ও স্বাধীনতা কতকটা ক্ষুণ্ণ না হয়ে পারে না। কিন্তু তবু এখানে এবং পাশ্চাত্য দেশেও ছউ নাচ দেখে সবাই তুলেছিল ধন্য ধন্য রব। তাইতেই বোঝা যায় তার আবেদন হচ্ছে সার্বজনীন এবং তাকে প্রাদেশিক নৃত্য ব’লে গণ্য করা যেতে পারে না। আমাদের অধিকাংশ প্রাদেশিক নৃত্য সম্বন্ধে এমন কথা বলা যায় না। জন্মভূমির—বিশেষতঃ ভারতের-বাইরে গেলে তাদের পক্ষে জনপ্রিয়তা অর্জন করা কঠিন হয়ে উঠবে। কারুর প্রধান ভাষা হচ্ছে মুদ্রা, কারুর ভঙ্গী এবং কারুর বা নূপুরের বোল। যারা অধ্যবসায় সহকারে সে সব ভাষা শেখেনি, তাদের কাছে মাঠে মারা যায় নাচের সৌন্দর্য।

 ছউ নাচ একটি বারংবার প্রমাণিত সত্যকে প্রমাণিত করেছে পুনর্বার। ললিতকলার মাধ্যমে কেবল ব্যক্তিবিশেষের নয়, কোন অজানা দেশ বা জাতিও প্রখ্যাত হয়ে উঠতে পারে। পনেরো বৎসর আগে ক্ষুদ্র রাজ্য সেরাইকেলার নাম জানত কয়জন? কিন্তু ছউ নাচের প্রসাদে সেরাইকেলার নাম আজ ভারতের সর্বত্র এবং য়ুরোপেও সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। একেই বলতে পারি সাংস্কৃতিক দিগ্বিজয়।

 রাজা আদিত্যপ্রতাপ এবং তাঁর কনিষ্ঠ সহোদর স্বর্গীয় বিজয়প্রতাপের তত্ত্বাবধানে যে সব ছউ নৃত্য পরিকল্পিত হয়েছে, সংখ্যায় সেগুলি অসামান্য। ভারতনাট্যম্ ও কথাকলির নৃত্যসংখ্যা আমি জানি না, কিন্তু যে বিশ্ববিখ্যাত রুসীয় নৃত্য-সম্প্রদায় পৃথিবীভ্রমণ করেছিল, তার চেয়ে ছউ নাচের সংখ্যা অনেক বেশী। ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে সেরাইকেলা নৃত্য-সম্প্রদায় মোট একচল্লিশটি নাচ নিয়ে গিয়েছিল ইতালী, ফ্রান্স ও ইংলণ্ডে। কিন্তু সেরাইকেলার নৃত্যতালিকা এর চেয়ে ঢের বেশী দীর্ঘ— বোধ করি শতাধিক হবে।

 সাধারণত রাজা-মহারাজারা নিজেরাও শিল্পী হবার জন্যে আগ্রহপ্রকাশ করেন না, তাঁরা হন নানা কলাবিদ্যার পৃষ্ঠপোষকমাত্র। শিল্পীদের উৎসাহ দেন, অর্থ সাহায্য করেন, তার বেশী আর কিছু নয়। কিন্তু সেরাইকেলা নৃত্য-সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজা এবং রাজবংশীয় অন্যান্য ব্যক্তিগণ শিল্পীরূপেই যোগদান করেন। আদিত্যপ্রতাপ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র নন, নিজেও একজন নৃত্যশিল্পী এবং চিত্রবিদ্যাতেও সুনিপুণ। বিশেষজ্ঞ সমালোচকরা জানেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের দ্বারা যে সব মুখোস গঠিত ও চিত্রিত হয়েছে, ললিতকলায় তা উচ্চ স্থান অধিকার ক’রে আছে। সেরাইকেলার নর্তকরা নাচের সময়ে মুখোস ব্যবহার করেন। অধিকাংশ মুখোসই রাজা আদিত্যপ্রতাপের নিজের হাতেই তৈরি। বিভিন্ন রসাশ্রিত নৃত্যনাট্যের পাত্র-পাত্রীদের চারিত্রিক বিশেষত্ব সেই সব মুখোসের উপরে ফুটে উঠেছে যথাযথ বর্ণের আলেপনে ও তুলির টানে চমৎকার ভাবে।

 রাজভ্রাতা স্বর্গীয় কুমার বিজয়প্রতাপও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী এবং উড়িয়া ভাষার একজন সুলেখক। তিনি কবিতা, নাটক ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন রাজাসাহেবের দক্ষিণ হস্তের মত। সেরাইকেলার অধিকাংশ নৃত্যনাট্য পরিকল্পনা ও রচনা করেছেন তিনিই এবং সেই সঙ্গে নিয়েছেন নাচ শেখাবারও ভার।

 স্বর্গীয় কুমার শুভেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন রাজাসাহেবের পুত্র ও সম্প্রদায়ের প্রধান শিল্পী। তাঁর মধ্যে ছিল প্রথম শ্রেণীর নৃত্যপ্রতিভা। শুভেন্দ্রনারায়ণের নাচ দেখে বিলাতের সমালোচক উদয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর তুলনা করেছিলেন। তাঁর রাধাকৃষ্ণ, ময়ূর, চন্দ্রভাগা, দুর্গা, নাবিক ও সাগর প্রভৃতি অমৃতায়মান নাচের কথা কখনো ভুলতে পারব না। আজ তিনি অকালে গিয়েছেন পরলোকে, কিন্তু আজও মনের মধ্যে জীবন্ত হয়ে আছে নৃত্যপর শুভেন্দ্রনারায়ণের লীলায়িত মূর্তি।

 রাজাসাহেবের আরো দুই নৃত্যপটু পুত্র নৃত্যনাট্যে বিভিন্ন ভূমিকা গ্রহণ করেন। এই রাজবংশের আর এক অসাধারণ নৃত্যশিল্পী হচ্ছেন কুমার শ্রীহীরেন্দ্রনারায়ণ। রৌদ্র ও বীর রসের নাচে তাঁর অতুলনীয় দক্ষতা

 বহু রাজপরিবারের কথা জানি, কিন্তু এমন শিল্পী রাজপরিবার আর দেখিনি। আমাদের দেশীয় নৃপতিদের বিলাস-ব্যসনের কথা পরিণত হয়েছে প্রবাদবচনে। কিন্তু এই এক অদ্বিতীয় রাজপরিবার, যেখানে সকলেই অবহিত হয়ে থাকেন শিল্পসাধনায়। তাঁরা কেবল শিল্পী নন, প্রত্যেকেই কৃতবিদ্য, বিনয়ী ও সদালাপী। সেরাইকেলার রাণীসাহেবও শিল্পী স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী। স্বর্গত পুত্র শুভেন্দ্রনারায়ণের জন্যে তিনি যে স্মৃতিসৌধের মডেল স্বহস্তে গড়েছিলেন, তা দেখেই আমি তাঁর শিল্পবোধের পরিচয় পেয়েছিলুম। সেরাইকেলার যুবরাজও নট এবং নাট্যকার। রাজা আদিত্যপ্রতাপের প্রেরণাতেই এই পরিবারের মধ্যে যে উপ্ত হয়েছে সাহিত্য ও ললিতকলার বীজ, এটুকু অনুমান করা যায় অনায়াসেই।

 চৈত্র মাসে এখানে যে বসন্তোৎসব হয়, তার নাম “চৈত্র-পর্ব”। গাছে গাছে পাখীরা গান গায়। বনে বনে ফুল ফোটে। চোখের সামনে জাগে তরুণ শ্যামলতা। সুগন্ধনন্দিত সমীরণে পাওয়া যায় যে আনন্দের ছন্দ, তারই প্রতিধ্বনি বাজতে থাকে নরনারীর অন্তরে অন্তরে। বহিঃপ্রকৃতির সঙ্গে মিলে যায় অন্তঃপ্রকৃতি এবং ছউ নাচের নূপুরে নূপুরে সেই মিলনেরই বাণী ধ্বনিত হয়ে ওঠে। তখন বাজে বংশী, বাজে মৃদঙ্গ এবং জাঁকিয়ে বসে নাচের সভা। সভানায়ক হন স্বয়ং রাজাসাহেব।

 ছয়-সাত বৎসর আগে চৈত্র-পর্বের সময়ে শুভেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজাসাহেবের দ্বারা আমন্ত্রিত হয়ে আমি দ্বিতীয়বার সেরাইকেলায় যাই এবং তাঁর অনুরোধে একটি বৃহৎ সভায় শুভেন্দ্রনারায়ণের নৃত্যকুশলতা নিয়ে আলোচনা করি। যথাসময়ে সেই আলোচনাটি “মাসিক বসুমতী”তে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে।

 সেরাইকেলা থেকে সিনি স্টেশনে আনাগোনা করবার পথটিও আমার বড় ভালো লাগে।