এপিক্টেটসের উপদেশ/যার যে কাজ
যার যে কাজ।
১। “চিরজীবন সম্মানিত হইয়াই আমাকে থাকিতে হইবে। দেশের মধ্যে আমার কোন স্থান নাই, আমি দেশের কেউ নই”— এইরূপ ভাবিয়া মনকে কষ্ট দিয়ো না। মান সম্রমের অপ্রাপ্তিকে তুমি কি অনিষ্ট জ্ঞান কর? পরকৃত পাপাচারণে যেমন তুমি পাপের ভাগী হও না, সেইরূপ পরকৃত কর্ম্মেও তোমার প্রকৃত অনিষ্ট হয় না। তুমি যখন কোন ভোজে নিমন্ত্রিত হও,—রাজ্যের কোন কর্ম্মপদে নিযুক্ত হও, —সে কি তোমার স্বকৃত কাজ? তবে, ইহাতে অসম্মানের কথা কি আছে? “আমি দেশের কেউ নই”—একথা তুমি কি করিয়া বল? যে সকল বিষয় তোমার নিজায়ত্ত, যাহাতে তুমি সর্ব্বাপেক্ষা অধিক যোগ্যতা দেখাইতে পার, শুধু সেই সকল বিষয়েই তুমি “দেশের কেউ” বলিয়া পরিচিত হইতে পার।
২। “আমার বন্ধুদের আমি কোন উপকার করিতে পারি না” — একথা কেমন করিয়া বল? বন্ধুদের উপকার করা? তাহারা তোমার নিকট হইতে অর্থ পাইবে না—পদ মান পাইবে না, একথা সত্য। এ সমস্ত কি আমাদের নিজায়ত্ত? যাহার যাহা নাই, সে কি তাহা অন্যকে দিতে পারে?
৩। “যদি না থাকে ত অর্জ্জন কর,”—লোকে এইরূপ বলে। এই সমস্ত অর্জ্জন করিতে গিয়া আমি যদি আমার ধর্ম্ম, আমার ভক্তি, আমার মহত্ত্ব, সমস্ত না হারাই, তাহা হইলে বল, কি উপায়ে উহা অর্জ্জন করিতে হইবে,—আমি তাহাই করিব। কিন্তু যে সকল জিনিস আদৌ ভাল নহে, তাহা অর্জ্জন করিতে গিয়া, যে সকল ভাল জিনিস আমার আছে—তোমার কথা-অনুসারে, আমি যদি সে সমস্ত হারাই, তাহা হইলে তোমাকে কি আমি অযথাবাদী ও অবিবেচক বলিয়া মনে করিব না? আচ্ছা, বল দেখি, তুমি এ-দুয়ের মধ্যে কোন্টি চাও। অর্থ চাও?—না, চিরবিশ্বস্ত ধর্ম্মনিষ্ঠ বন্ধুকে চাও? যদি তোমার বন্ধুর ধর্ম্মনিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা প্রার্থনীয় হয়, তাহা হইলে এমন কিছু তাহাকে করিতে বলিও না—যাহা করিতে গিয়া ঐ সমস্ত গুণ সে হারাইয়া ফেলে।
৪। “কিন্তু আমি যে তাহলে দেশের কোন কাজ করিতে পারিব না”। দেশের কাজ কাকে বলে? তোমার সে অর্থবল নাই যে তুমি একটা পুষ্করিণী খনন করাইয়া দিবে কিংবা একটা নূতন ঘাট প্রস্তুত করিয়া দিবে। দেশ, তোমার নিকট হইতে এই সমস্ত পাইবে না, সত্য। কিন্তু তাহাতে কি? দেশ ত কামারের নিকট জুতার প্রত্যাশা করে না, কিংবা মুচির নিকট অস্ত্রের প্রত্যাশা করে না। যাহার যে কাজ সে যদি তাহা সুসম্পন্ন করে, তাহা হইলেই যথেষ্ট হইল। যদি তুমি দেশের একজনকেও ধর্ম্মনিষ্ঠ ও ভগবৎ-ভক্ত করিয়া তুলিতে পার, তাহা হইলে কি তোমার দেশের কাজ করা হইল না? অতএব “আমি দেশের কোন কাজ করিতে পারিব না”—একথা কোন কাজের নহে।
৫। “তাহলে, দেশের মধ্যে, কোন্ পদ তোমাকে দেওয়া যাইতে পারে?” যে পদেই আমাকে প্রতিষ্ঠিত কর, দেখিও, যেন তাহাতে আমার ধর্ম্ম, আমার ঈশ্বরভক্তি লোপ না পায়। কিন্তু দেশের কাজ করিব মনে করিয়া যদি ঐ সমস্ত পরিত্যাগ করি, যদি দেশকে অধর্ম্মে ও পাপে নিমগ্ন করি, তাহা হইলে আমা হইতে দেশের কি-কাজ হইল?