কড়ি ও কোমল/চিঠি
চিঠি।
শ্রীমতী ইন্দিরা। প্রাণাধিকাসু।
ষ্টীমার “রাজহংস।” গঙ্গা।
চিঠি লিখ্ব কথা ছিল,
দেখ্চি সেটা ভারি শক্ত।
তেমন যদি খবর থাকে
লিখ্তে, পারি তক্ত তক্ত।
খবর বয়ে বেড়ায় ঘুরে
খবরওয়ালা ঝাকা-মুটে।
আমি বাপু ভাবের ভক্ত
বেড়াইনাকো খবর খুঁটে।
এত ধুলল, এত খবর
কল্কাতাটার গলিতে!
নাকে চোকে খবর ঢেকে
দু-চার কদম চলিতে।
এত খবর সয়না আমার
মরি আমি হাঁপােষে!
ঘরে এসেই খবর গুলো
মুছে ফেলি পাপোষে।
আমাকেত জানই বাছা!
আমি একজন খেয়ালি।
কথাগুলো যা’ বলি, তার
অধিকাংশই হেঁয়ালি।
আমার যত খবর আসে
ভোরের বেলা পূব দিয়ে।
পেটের কথা তুলি আমি
পেটের মধ্যে ডুব দিয়ে।
আকাশ ঘিরে জাল ফেলে।
তারা ধরাই ব্যবসা।
থাক্গে তোমার পাটের হাটে
মধুর কুণ্ডু শিবু সা।
কল্পতরুর তলায় থাকি
নইগো আমি খবুরে।
হাঁ করিয়ে চেয়ে আছি
মেওয়া ফলে সবুরে।
তবে যদি নেহাৎ কর
খবর নিয়ে টানাটানি।
আমি বাপু এক্টি কেবল
দুষ্ট মেয়ের খবর জানি!
দুষ্টমি তার শোন যদি,
অবাক হবে সত্যি!
এত বড় বড় কথা তার
মুখখানি একরত্তি।
মনে মনে জানেন তিনি।
ভারি মস্ত লোকটা।
লোকের সঙ্গে না-হক কেবল
ঝগড়া কর্বার ঝোঁকটা।
আমার সঙ্গেই যত বিবাদ
কথায় কথায় আড়ি।
এর নাম কি ভদ্র ব্যাভার!
বড্ড বাড়াবাড়ি।
মনে করেছি তার সঙ্গে
কথাবার্ত্তা বন্দ করি।
প্রতিজ্ঞা থাকে না পাছে
সেইটে ভারি সন্দ করি।
সে না হলে সকাল বেলায়
চামেলি কি ফুটবে!
সে নৈলে কি সন্ধে বেলায়
সন্ধে তারা উঠবে।
সে না হলে দিনটা ফাঁকি
আগাগোড়াই মস্করা।
পোড়ারমুখী জানে সেটা
তাই এত তার আস্কারা।
চুড়ি-পরা হাত দুখানি
কতই জানে ফন্দি।
কোন মতে তার সাথে তাই
করে আছি সন্ধি।
নাম যদি তার জিগেস কর
নামটি বলা হবে না।
কি জানি সে শােনে যদি
প্রাণটি আমার রবে না।
নামের খবর কে রাখে তার
ডাকি তারে যা খুসি।
দুষ্ট, বল দস্যি বল
পােড়ারমুখি রাক্ষুসী!
বাপ মায়ে যে নাম দিয়েছে
বাপ মায়েরি থাক্সে।
ছিষ্টি খুঁজে মিষ্টি নামটি
তুলে রাখুন্ বাক্সে!
এক জনেতে নাম রাখ্বে
অন্নপ্রাশনে।
বিশ্ব সুদ্ধ সে নাম নেবে
বিষম শাসন এ!
নিজের মনের মত সবাই
করুক নামকরণ।
বাবা ডাকুন্ “চন্দ্রকুমার”
খুড়াে “রামচরণ”!
ধার-করা নাম নেব আমি
হবে না ত সিটি।
জানই আমার সকল কাজে
Originality।
ঘরের মেয়ে তার কি সাজে
সঙস্কৃত নাম।
এতে কেবল বেড়ে ওঠে
অভিধানের দাম।
আমি বাপু ডেকে বসি
যেটা মুখে আসে,
যারে ডাকি সেই তা বােঝে
আর সকলে হাসে!
দুষ্ট মেয়ের দুষ্টমি—তার
কোথায় দেব দাঁড়ি।
অকুল পাথার দেখে শেষে
কলমের হাল ছাড়ি!
শােন বাছা, সত্যি কথা
বলি তােমার কাছে—
ত্রিজগতে তেমন মেয়ে,
একটি কেবল আছে!
বর্ণিমেটা কারাে সঙ্গে
মিলে পাছে যায়—
তুমুল ব্যাপার উঠ্বে বেধে
হবে বিষম দায়!
হপ্তাখানেক বকাবকি
ঝগ্ড়াঝাটির পালা,
এক্টু চিঠি লিখে, শেষে
প্রাণটা ঝালাফালা।
আমি বাপু ভালমানুষ
মুখে নেইক রা।
ঘরের কোণে বসে বসে
গোঁফে দিচ্চি তা।
আমিই যত গােলে পড়ি
শুনি নানান্ বাক্যি।
খোঁড়ার পা যে পানায় পড়ে
আমিই তাহার সাক্ষি।
আমি কারো নাম করিনি
তবু ভয়ে মরি।
তুই পাছে নিস্ গায়ে পেতে
সেইটে বড় ডরি!
কথা এক্টা উঠ্লে মনে
ভারি তোরা জ্বালাস্।
আমি বাপু আগে থাক্তে
বলে হলুম খালাস্।