কথামালা (১৮৭৭)/কুকুর, কুক্কুট ও শৃগাল
কুকুর, কুক্কুট ও শৃগাল
এক কুকুর ও এক কুক্কুট উভয়ের অত্যন্ত প্রণয় ছিল। এক দিন উভয়ে মিলিয়া বেড়াইতে গেল। এক অরণ্যের মধ্যে রাত্রি উপস্থিত হইল। রাত্রি যাপন করিবার নিমিত্ত, কুক্কুট এক বৃক্ষের শাখায় আরোহণ করিল, কুকুর সেই বৃক্ষের তলে শয়ন করিয়া রহিল।
রাত্রি প্রভাত হইল। কুক্কুটদের স্বভাব এই প্রভাতকালে উচ্চ স্বরে ডাকিয়া থাকে। কুক্কুট শব্দ করিবামাত্র, এক শৃগাল, শুনিতে পাইয়া, মনে মনে স্থির করিল, কোনও সুযোগে, আজ এই কুক্কুটের প্রাণ নষ্ট করিয়া, মাংস আহার করিব। এই স্থির করিয়া, সেই বৃক্ষের নিকটে আসিয়া, ধূর্ত্ত শৃগাল কুক্কুটকে সম্বোধন করিয়া কহিল, ভাই! তুমি কি সৎ পক্ষী, সকলের কেমন উপকারক। আমি, তোমার স্বর শুনিতে পাইয়া, প্রফুল্ল হইয়া আসিয়াছি। এক্ষণে, বৃক্ষের শাখা হইতে নামিয়া আইস। দুজনে মিলিয়া খানিক আমোদ আহ্লাদ করি।
কুক্কুট, শৃগালের ধূর্ত্ততা বুঝিতে পারিয়া, তাহাকে ঐ ধূর্ত্ততার প্রতিফল দিবার নিমিত্ত, কহিল, ভাই শৃগাল! তুমি বৃক্ষের তলায় আসিয়া খানিক অপেক্ষা কর, আমি নামিয়া যাইতেছি। শৃগাল শুনিয়া, হৃষ্ট চিত্তে, যেমন বৃক্ষের তলায় আসিল, অমনি কুকুর তাহাকে আক্রমণ করিল, এবং দন্তাঘাতে ও নখর প্রহারে তাহার সর্ব্ব শরীর বিদীর্ণ করিয়া প্রাণ সংহার করিল।
পরের মন্দচেষ্টায় ফাঁদ পাতিলে, আপনাকেই সেই ফাঁদে পড়িতে হয়।