কথামালা (১৮৭৭)/সিংহ ও ইঁদুর

সিংহ ও ইঁদুর

এক সিংহ পর্ব্বতের গুহায় নিদ্রা যাইতেছিল। দৈবাৎ একটা ইঁদুর, সেই দিকে যাইতে যাইতে, সিংহের নাসারন্ধ্রে প্রবিষ্ট হইয়া গেল। প্রবিষ্ট হইবা মাত্র, সিংহের নিদ্রাভঙ্গ হইল। পরে, ইঁদুর নির্গত হইলে, সিংহ ঈষৎ কুপিত হইয়া, নখর প্রহার করিয়া, তাহার প্রাণ সংহারে উদ্যত হইল। ইঁদুর, প্রাণভয়ে কাতর হইয়া, বিনয় করিয়া কহিল, মহারাজ! আমি না জানিয়া অপরাধ করিয়াছি, ক্ষমা করিয়া আমায় প্রাণ দান করুন। আপনি সমস্ত পশুর রাজা, আমার মত ক্ষুদ্র পশুর প্রাণ বধ করিলে, আপনকার কলঙ্ক আছে। সিংহ শুনিয়া ঈষৎ হাস্য করিল, এবং দয়া করিয়া, ইঁদুরকে ছাড়িয়া দিল।

 এই ঘটনার কিছু দিন পরে, সিংহ, ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে করিতে, এক শিকারীর জালে পড়িল; বিস্তর চেষ্টা পাইল, কিছুতেই জাল ছাড়াইতে পারিল না। পরিশেষে, প্রাণরক্ষা বিষয়ে নিতান্ত নিরাশ হইয়া, সে এমন ভয়ঙ্কর গর্জ্জন করিতে লাগিল যে, সমস্ত অরণ্য কম্পিত হইয়া উঠিল।

 সিংহ, ইতিপূর্ব্বে, যে ইঁদুরকে প্রাণ দান করিয়াছিল, সে ঐ অরণ্যের অনতিদূরে বাস করিত। এক্ষণে সে, পূর্ব্ব প্রাণদাতার স্বর চিনিতে পারিয়া, সত্বর সেই স্থানে উপস্থিত হইল, এবং তাহার এই বিপদ দেখিয়া, ক্ষণমাত্র বিলম্ব না করিয়া, জাল কাটিতে আরম্ভ করিল, এবং অল্প ক্ষণের মধ্যেই, সিংহকে বন্ধন হইতে মুক্ত করিয়া দিল।

 কাহারও উপর দয়া প্রকাশ করিলে, তাহা প্রায় নিষ্ফল হয় না। যে যেমন ক্ষুদ্র প্রাণী হউক না কেন, উপকৃত হইলে, সে, কখনও না কখনও, প্রত্যুপকার করিতে পারে।