কথামালা (১৮৭৭)/দাঁড়কাক ও ময়ূরপুচ্ছ

দাঁড়কাক ও ময়ূরপুচ্ছ

এক স্থানে কতকগুলি ময়ূরপুচ্ছ পড়িয়া ছিল। এক দাঁড়কাক, দেখিয়া, মনে মনে বিবেচনা করিল, যদি আমি এই ময়ূরপুচ্ছগুলি আপন পাখায় বসাইয়া দি, তাহা হইলেই আমিও ময়ূরের মত সুশ্রী হইব। এই ভাবিয়া, দাঁড়কাক ময়ূরপুচ্ছগুলি আপন পাখায় বসাইয়া দিল, এবং দাঁড়কাকদের নিকটে গিয়া, তোরা অতি নীচ ও অতি বিশ্রী, আর আমি তোদের সঙ্গে থাকিব না, এই বলিয়া, গালাগালি দিয়া, ময়ূরের দলে মিশিতে গেল।

 ময়ূরগণ, দেখিবা মাত্র, তাহাকে দাঁড়কাক বলিয়া চিনিতে পারিল, সকলে মিলিয়া, তাহার পাখা হইতে, এক একটি করিয়া, ময়ূরপুচ্ছগুলি তুলিয়া লইল, এবং তাহাকে নিতান্ত অপদার্থ জ্ঞান করিয়া, এত ঠোকরাইতে আরম্ভ করিল যে, দাঁড়কাক, জ্বালায় অস্থির হইয়া, পলায়ন করিল। অনন্তর, সে পুনরায় আপন দলে মিলিতে গেল। তখন, দাঁড়কাকেরা উপহাস করিয়া কহিল, অরে নির্ব্বোধ! তুই ময়ূরপুচ্ছ পাইয়া, অহঙ্কারে মত্ত হইয়া, আমাদিগকে ঘৃণা করিয়া ও গালাগালি দিয়া, ময়ূরের দলে মিলিতে গিয়াছিলি; সেখানে অপদস্থ হইয়া, আবার আমাদের দলে মিলিতে আসিয়াছিস। তুই অতি নির্লজ্জ। এই রূপে যথোচিত তিরস্কার করিয়া, তাহারা সেই নির্ব্বোধ দাঁড়কাককে তাড়াইয়া দিল।

 যাহার যে অবস্থা, সে যদি তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহা হইলে, তাহাকে কাহারও নিকট অপদস্থ ও অবমানিত হইতে হয় না।