কথামালা (১৮৭৭)/শিকারী কুকুর
এক ব্যক্তির একটি অতি উত্তম শিকারী কুকুর ছিল। সে যখন শিকার করিতে যাইত, কুকুরটি সঙ্গে থাকিত। ঐ কুকুরের বিলক্ষণ বল ছিল, শিকারের সময়, কোনও জন্তুকে দেখাইয়া দিলে, সে সেই জন্তুর ঘাড়ে এমন কামড়াইয়া ধরিত যে, উহা আর পলাইতে পারিত না। এই রূপে, যত দিন তাহার শরীরে বল ছিল, আপন প্রভুর যথেষ্ট উপকার করিয়াছিল।
কালক্রমে, ঐ কুকুর বৃদ্ধ হইয়া অত্যন্ত দুর্ব্বল হইয়া পড়িল। এই সময়ে, তাহার প্রভু এক দিন, তাহাকে সঙ্গে লইয়া, শিকার করিতে গেলেন। এক শূকর তাঁহার সন্মুখ হইতে দৌড়িয়া পলাইতে লাগিল। শিকারী ব্যক্তি ইঙ্গিত করিবা মাত্র, কুকুর, প্রাণপণে দৌড়িয়া গিয়া, শূকরের ঘাড়ে কামড়াইয়া ধরিল, কিন্তু পূর্ব্বের মত বল ছিল না, এজন্য ধরিয়া রাখিতে পারিল না, শূকর অনয়াসে ছাড়াইয়া চলিয়া গেল।
শিকারী ব্যক্তি, ক্রোধে অন্ধ হইয়া, কুকুরকে তিরস্কার ও প্রহার করিতে আরম্ভ করিল। তখন কুকুর কহিল, মহাশয়! বিনা অপরাধে, আমারে তিরস্কার ও প্রহার করেন কেন। মনে করিয়া দেখুন, যত দিন আমার বল ছিল, প্রাণপণে আপনকার কত উপকার করিয়াছি; এক্ষণে বৃদ্ধ হইয়া, নিতান্ত দুর্বল ও অক্ষম হইয়া পড়িয়াছি বলিয়া, তিরস্কার ও প্রহার করা উচিত নহে।