কথামালা (১৮৭৭)/সর্প ও কৃষক
সর্প ও কৃষক
শীতকালে, এক কৃষক, অতি প্রত্যুষে, ক্ষেত্রে কর্ম্ম করিতে যাইতেছিল; দেখিতে পাইল, এক সর্প, হিমে আচ্ছন্ন ও মৃতপ্রায় হইয়া, পথের ধারে পড়িয়া আছে। দেখিয়া, তাহার অন্তঃকরণে দয়ার উদয় হইল। তখন সে ঐ সর্পকে উঠাইয়া লইল, এবং বাটীতে আনিয়া, আগুনে সেকিয়া, কিছু আহার দিয়া, তাহাকে সজীব করিল। সাপ, এই রূপে সজীব হইয়া উঠিয়া, পুনরায় আপন স্বভাব প্রাপ্ত হইল, এবং কৃষকের শিশু সন্তানকে সম্মুখে পাইয়া, দংশন করিতে উদ্যত হইল।
কৃষক দেখিয়া, অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া, সর্পকে সম্বোধন করিয়া কহিল, অরে ক্রূর! তুই অতি কৃতঘ্ন। তোর প্রাণ নষ্ট হইতেছিল দেখিয়া, দয়া করিয়া, গৃহে আনিয়া, আমি তোরে প্রাণদান দিলাম; তুই, সে সকল ভুলিয়া গিয়া, আমার পুত্রকে দংশন করিতে উদ্যত হইলি। বুঝিলাম, যার যে স্বভাব, কিছুতেই তাহার অন্যথা হয় না। যাহা হউক, তোর যেমন কর্ম্ম, তার উপযুক্ত ফল পা। এই বলিয়া, কুপিত কৃষক, হস্তস্থিত কুঠার দ্বারা, সর্পের মস্তকে এমন প্রহার করিল যে, এক আঘাতেই তাহার প্রাণত্যাগ হইল।