কথামালা (১৮৭৭)/লবণবাহী বলদ
লবণবাহী বলদ
এক ব্যক্তি লবণের ব্যবসায় করিত। কোনও স্থানে লবণ সস্তা বিক্রয় হইতেছে শুনিয়া, সে তথায় উপস্থিত হইল, এবং কিছু লবণ ক্রয় করিয়া, বলদের পৃষ্ঠে বোঝাই করিয়া, বাটী আসিতে লাগিল। পূর্ব্ব পূর্ব্ব বারে যত বোঝাই করিত, এ বারে তাহা অপেক্ষা, অনেক অধিক বোঝাই করিয়াছিল, এজন্য বলদ অত্যন্ত কাতর হইয়াছিল। পথের মধ্যে এক নালা ছিল। ঐ নালায় অনেক জল থাকিত। নালার উপর এক সাঁক ছিল। সেই সাঁকর উপর দিয়া সকলে যাতায়াত করিত। বলদ ইচ্ছা করিয়া, সেই সাঁকর উপর হইতে, নালায় পড়িয়া গেল। নালায় পড়িবা মাত্র, অধিকাংশ লবণ জল লাগিয়া গলিয়া গেল। তখন বলদের ভার অনেক লঘু হইল; এবং সে অকাতরে চলিয়া যাইতে লাগিল।
ঐ ব্যক্তি, আর এক দিবস, সেই বলদ লইয়া, লবণ কিনিতে গিয়াছিল। সে দিবসও ঐ বলদের পৃষ্ঠে অধিক ভার চাপাইল; বলদও পুনরায়, ছল করিয়া, ঐ নালায় পড়িয়া গেল। এই রূপে, দুই দিন অত্যন্ত ক্ষতি হইলে, ব্যবসায়ী ব্যক্তি বুঝিতে পারিল, বলদ, কেবল দুষ্টতা করিয়া, আমার ক্ষতি করিতেছে, অতএব ইহাকে ইহার প্রতিফল দিতে হইল। এই স্থির করিয়া, সে ব্যক্তি, ঐ বলদ লইয়া, তূল কিনিতে গেল, এবং তূল কিনিয়া, বলদের পৃষ্ঠে চাপাইয়া, বাটী আসিতে লাগিল। বলদ পূর্ব্বের মত, ভার কমাইবার নিমিত্ত, ঐ নালায় পড়িয়া গেল।
ব্যবসায়ী ব্যক্তি, পূর্ব্ব পূর্ব্ব বারে, লবণ গলিয়া যাইবার ভয়ে, তাড়াতাড়ি করিয়া, বলদকে উঠাইত, এ বারে সে অনেক বিলম্ব করিয়া উঠাইল। অনেক বিলম্ব হওয়াতে, তূল ভিজিয়া অত্যন্ত ভারী হইল। ঐ ব্যক্তি সেই সমুদয় ভিজা তূল, বলদের পৃষ্ঠে চাপাইয়া, লইয়া চলিল। সুতরাং সে দিবস, নালায় পড়িবার পূর্ব্বে, বলদকে যত ভার বহিতে হইয়াছিল, নালায় পড়িয়া, তাহার দ্বিগুণ অপেক্ষা, অধিক ভার বহিতে হইল।
সকল সময়ে এক ফিকির খাটে না।