কথামালা (১৮৭৭)/শৃগাল ও কৃষক
শৃগাল ও কৃষক
ব্যাধগণে ও তাহাদের কুকুরে তাড়াতাড়ি করাতে, এক শৃগাল, অতি দ্রুত দৌড়িয়া গিয়া, কোনও কৃষকের নিকট উপস্থিত হইল, এবং কহিল, ভাই! যদি তুমি কৃপা করিয়া আশ্রয় দাও, তবে এ যাত্রা আমার পরিত্রাণ হয়। কৃষক আপন কুটীর দেখাইয়া দিল। শৃগাল, কুটীরে প্রবেশ করিয়া, এক কোণে লুকাইয়া রহিল। ব্যাধেরাও, অবিলম্বে তথায় উপস্থিত হইয়া, কৃষককে জিজ্ঞাসা করিল, অহে ভাই! এ দিকে একটা শিয়াল এসেছিল, কোন দিকে গেল, বলিতে পার। সে কহিল, না; কিন্তু কুটীরের দিকে অঙ্গুলিপ্রয়োগ করিল। তাহারা, কৃষকের সঙ্কেত বুঝিতে না পারিয়া, তৎক্ষণাৎ তথা হইতে চলিয়া গেল।
ব্যাধেরা প্রস্থান করিলে, শৃগাল, কুটীর হইতে নির্গত হইয়া, চুপে চুপে চলিয়া যাইতে লাগিল। ইহা দেখিয়া, কৃষক ভর্ৎসনা করিয়া শৃগালকে কহিল, যা হউক ভাই! তুমি বড় ভদ্র; আমি বিপদের সময়, আশ্রয় দিয়া, তোমার প্রাণ রক্ষা করিলাম। কিন্তু তুমি, যাইবার সময়, আমারে একটা কথার সম্ভাষণও করিলে না। শৃগাল কহিল, ভাই হে! তুমি কথায় যেমন ভদ্রতা করিয়াছিলে, যদি অঙ্গুলিতেও সেইরূপ ভদ্রতা করিতে, তাহা হইলে, আমি, তোমার নিকট বিদায় না লইয়া, কদাচ কুটীর হইতে চলিয়া যাইতাম না।
এক কথায় যত মন্দ হয়, এক ইঙ্গিতেও তত মন্দ হইতে পারে।