কথামালা (১৯৪৪)/শৃগাল ও কৃষক

শৃগাল ও কৃষক।

ব্যাধগণে ও তাহাদের কুকুরে তাড়া করাতে, এক শৃগাল অতি দ্রুত দৌড়িয়া গিয়া, কোনও কৃষকের নিকট উপস্থিত হইল, এবং বলিল, ভাই, যদি তুমি কৃপা করিয়া আশ্রয় দাও, তবে এ যাত্রা আমার পরিত্রাণ হয়। কৃষক বলিল, তোমার ভয় নাই, আমার কুটীরে লুকাইয়া থাক। এই বলিয়া, সে আপন কুটীর দেখাইয়া দিল। শৃগাল কুটীরে প্রবেশ করিয়া এক কোণে লুকাইয়া রহিল। ব্যাধেরা, অবিলম্বে তথায় উপস্থিত হইয়া কৃষককে জিজ্ঞাসিল, ওহে ভাই, এদিকে একটা শৃগাল আসিয়াছিল, কোন্ দিকে গেল, বলিতে পার? সে কিছুই না বলিয়া কুটীরের দিকে অঙ্গুলিপ্রয়োগ করিল। তাহারা কৃষকের সঙ্কেত বুঝিতে না পারিয়া চলিয়া গেল

 ব্যাধেরা প্রস্থান করিলে পর, শৃগাল কুটীর হইতে বহির্গত হইয়া, চুপে চুপে চলিয়া যাইতে লাগিল। ইহা দেখিয়া কৃষক, ভর্ৎসনা করিয়া শৃগালকে বলিল, যাহা হউক, ভাই, তুমি বড় ভদ্র! আমি বিপদের সময়, আশ্রয় দিয়া, তোমার প্রাণরক্ষা করিলাম। কিন্তু তুমি, যাইবার সময়, আমায় একটা কথার সম্ভাষণও করিলে না। শৃগাল বলিল, ভাই হে, তুমি কথায় যেমন ভদ্রতা করিয়াছিলে, যদি অঙ্গুলিতে সেইরূপ ভদ্রতা করিতে, তাহা হইলে, আমিও তোমার নিকট বিদায় না লইয়া, কদাচ কুটীর হইতে চলিয়া যাইতাম না।

এক কথায় যত মন্দ হয়, এক ইঙ্গিতেও তত মন্দ হইতে পারে।

ব্যাধগণ—শিকারিগণ।
এ যাত্রা—এবার।
অবিলম্বে—শীঘ্র, সত্বর।
চুপে চুপে—নিঃশব্দে, আস্তে আস্তে।
বিপদ-আপদ।
ভদ্রতা—শিষ্টাচার, শিষ্টতা।

আশ্রয়—থাকিবার স্থান।
পরিত্রাণ—রক্ষা, নিষ্কৃতি।
সঙ্কেত—ইসারা, ইঙ্গিত।
ভর্ৎসনা—তিরস্কার।
সম্ভাষণ—আলাপ।
বিদায়—গমনানুমতি।