কথা (১৯১২)/নকল গড়
নকল গড়
(রাজস্থান )
জলস্পর্শ করব না আর-
চিতাের-রাণার পণ—
বুঁদির কেল্লা মাটির পরে
থাকবে যতক্ষণ।
কি প্রতিজ্ঞা, হায় মহারাজ,
মানুষের যা’ অসাধ্য কাজ
কেমন করে সাধবে তা আজ!
কহেন মন্ত্রীগণ।
কহেন রাজা, সাধ্য না হয়
সাধব আমার পণ।
বুঁদির কেল্লা চিতাের হতে
যােজন তিনেক দূর।
সেথায় হারাবংশী সবাই
মহা মহা শূর।
হামু রাজা দিচ্চে থানা
ভয় কারে কয় নাইক জানা,
তাহার সদ্য প্রমাণ রাণ।
পেয়েছেন প্রচুর।
হারাবংশীর কেল্লা বুঁদী।
যােজন তিনেক দূর।
মন্ত্রী কহে যুক্তি করি-
আজকে সারারাতি
মাটি দিয়ে বুঁদির মত
নকল কেল্লা পাতি।
রাজা এসে আপন করে
দিবেন ভেঙে ধূলির পরে,
নইলে শুধু কথার তরে
হবেন আত্মঘাতী।—
মন্ত্রী দিল চিতাের মাঝে
নকল কেল্লা পাতি।
কুম্ভ ছিল রাণার ভৃত্য
হারাবংশী বীর
হরিণ মেরে আসচে ফিরে
স্কন্ধে ধনু তীর।
খবর পেয়ে কহে-কেরে
নকল বুঁদি কেল্লা মেরে
হরাবংশী রাজপুতেরে
করবে নতশির?
নকল বুঁদী রাখব আমি
হারাবংশী বীর।
মাটির কেল্লা ভাঙতে আসেন
রাণা মহারাজ।
দূরে রহ-কহে কুম্ভ,
গর্জ্জে যেন বাজ।
বুঁদীর নামে করবে খেলা,
সইব না সে অবহেলা,—
নকল গড়ের মাটির ঢেলা
রাখব আমি আজ।
কহে কুম্ভ—দুরে রহ
রাণা মহারাজ!
ভূমির পরে জানু পাতি
তুলি’ ধনুঃ শর
একা কুম্ভ রক্ষা করে
নকল বুঁদীগড়।
রাণার সেনা ঘিরি তারে
মুণ্ড কাটে তরবারে,
খেলা গড়ের সিংহদ্বারে
পড়ল ভূমিপর।
রক্তে তাহার ধন্য হল
নকল বুঁদীগড়