নিত্যকাল।

ওহে মহাকাল! দেখি কি ভাব তোমার,
ভাবি ভ্রমচক্রে মন ঘুরিছে আমার।
কত যে দেখাও খেলা অখিল ভুবনে,
সসীম মানবমতি বুঝিবে কেমনে।
যদি যাই তব মূলে চিন্তাতন্তু ধরি,
পথ হারা হয়ে পথে ঘুরে ঘুরে মরি।
কিম্বা যদি যেতে চাই তব অন্ত দেশে,
না পেয়ে তোমার শেষ, ফিরে আসি শেষে।
অতএব আদি অন্ত বিহীন এ কায়
পাইলে কোথায় কাল বল হে আমায়।
হেরিয়া তোমার লীলা হইল নিশ্চয়,
সকলি করিতে পার তুমি হে সময়।
করেছ সাগর খাতে গহন কানন,
তুলেছ নদীর মাঝে ত্রিতল ভবন।
যে পথে চালাও তুমি শকট সকল,
সেই পথে আন পরে নাবিকের দল।
সিংহকুল সমাকুল কানন ভিতর,
করেছ মানব পূর্ণ বিস্তর নগর।

রিলাসির নিকেতনে শিবার আলয়
কে আর করিতে পারে বল হে সময়।
তোমার সংহার মূর্ত্তি ভাবিলে, অন্তর
ভয়ে ভীত হয়ে সদা কাঁপে থর থর।
অসীম বিক্রম তুমি অজেয় জগতে,
নিদয় হইলে রক্ষা নাহি কোন মতে।
ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ কৃপ আর ধনঞ্জয়,
ভীম পরাক্রম ভীম আদি বীরচয়,
পরাক্রান্ত মহাবীর আলেগ্‌জাণ্ডর,
বীর্য্যবান্‌ বনাপার্ট সম্রাট্‌ আক্‌বর,
আর কত শত বীর কে করে গণন,
সকলে তোমার করে পেয়েছে নিধন।
কেবল রহিবে তুমি কিছু নাহি রবে,
জানি সব তব মুখে কবলিত হবে।
রাজা প্রজা দীন হীন কিবা ধনবান্‌,
পড়িলে তোমার কোপে সবাই সমান।
না কর গৌরব তুমি পুণ্যশীল নরে,
পাপীর পরশে ঘৃণা না কর অন্তরে।—
কিন্তু যে মানব সদা পুণ্য পথে চরে,
সে তোমার মূর্ত্তি দেখে কভু নাহি ডরে,

আহা মরি! কিসুন্দর হস্তিনা নগর,
কত যত্নে করেছিল কত নৃপবর।
ভারতের নানা রত্ন করি আহরণ,
সাধে দিয়াছিল তায় বিবিধ ভূষণ।
কি কহিব তার শোভা বলা নাহি যায়,
যাহা বল তাই হয় সম্ভব তাহায়।
কেমনে নিদয়। তাহা করিলে সংহার,
হায় রে সময় তব গতি বুঝা ভার।
খলতার কথা তব কি কব সময়!
স্মরিলে অতুল খেদে বিদরে হৃদয়।
জননী-জীবন-ধন সন্তান-রাতন,
যার সম নাহি আর স্নেহের ভাজন,
করিলে যাহারে কোলে হৃদয় জুড়ায়,
অমৃত বিস্বাদ, যার মধুর কথায়,
নয়নের রসাঞ্জন চন্দ্রানন যার,
হেরিলে উথলে সুখ-সাগর অপার।
যদি শিশু মা ম বলে সম্বোধন করে,
ধরা ধামে বসি মাত চাঁদ পান করে,
অরে রে কঠিন কাল! পাষাণহৃদয়!
চুরি কর সে রতন হইয়া নিদয়।

পতিপ্রাণা রমণীর হৃদয়ের ধন,
কেমনে অকৃপ কাল! কররে হরণ!
হারাইলে চক্রবাকে চক্রবাকী প্রায়,
পতিহীনা সতী কাঁন্দে পড়িয়া ধরায়।
কোন প্রাণে ওহে কাল। দেখ তা নয়নে,
কেমন তোমার ভাব বুঝে কোন জনে।