কমলাকান্তের পত্র (১৯২৩)/নারীর শত্রু

২৪

নারীর শত্রু

আমি চিরদিন শুনে আসচি—নারীর নির্য্যাতন পুরুষে করে, শাস্ত্রে লোকাচারে, পুরুষই ইহপরকালে নারীর চির শত্রুরূপে বিদ্যমান। একথা কোন কোন পুরুষের মুখেও প্রকাশ হয়েচে এবং এখন নারীও ঐ কথাই বল্‌তে সুরু করেচে। কিন্তু কথাটা একদম মিথ্যা কথা। নারীর শত্রু নারী, পুরুষ নয়; তা’র আমি প্রমাণ দেব।

 আসামী কবুল দিলেই যে তা’র নিরপরাধিতা প্রমাণ করা যায় না তা নয়, যাঁরা Evidence Act পড়েছেন তাঁরা তা জানেন। কবুল যদি শেষ প্রমাণ হ’ত, তা হ’লে সাক্ষী সাবুদের হাঙ্গামা একেবারে উঠে যেত, সুধু কবুলের উপরেই ফাঁসী হ’য়ে যেত। তবে কবুল করলে, নিরপরাধিতা প্রমাণ করা কিছু শক্ত হ’য়ে পড়ে এই মাত্র। কবুলটা কাটানর জন্য দেখাতে হয় যে, অনেক সময় অপরাধ না করেও মানুষ কবুল করে, অনেক সময় অপরের বোঝা নিজের ঘাড়ে নেবার জন্য লোকে কবুল করেচে এমন ঘটনা অনেক ঘটেচে, নির্য্যাতনের চোটে মিথ্যা কবুল করাটাই সোজা পথ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই রকম করে’ কবুলকারীর অনুকূলে অন্ততঃ benefit of doubt এনে দিতে হয়। এক্ষেত্রে যদি আমি আসামী পুরুষের পক্ষে সেটাও কর্ত্তে পারি, তা হ’লেও তা’কে অব্যাহতি দিতে হবে। আর যদি কবুল করা সত্বেও আমি প্রকৃত অপরাধীকে দেখিয়ে দিতে পারি, তা হ’লে পুরুষকে honourably acquit কর্ত্তে হ’বে।

 নারীর প্রধানতঃ তিনটী অবস্থা আমি কল্পনা করে’ নিলুম—কন্যা, বধূ, গৃহিণী। আদিম মনুষ্য থেকে আরম্ভ করে’ আজ পর্য্যন্ত যুগে যুগে নারীর সমাজে স্থান নির্দ্দেশ কর্ত্তে কর্ত্তে নেমে এসে, বর্ত্তমান সমাজে নারী সম্বন্ধে ব্যবস্থার আলোচনা করব না—এ historical survey থেকে আমার বিশেষ কোন লাভ হবে না—যুগে যুগে, মোটের উপর আমাদের দেশে নারীর একই অবস্থা।

 আমি বধূ থেকেই আরম্ভ করি, ক্রমে চক্রটা পূর্ণ করে’ কন্যায় এসে শেষ করব। পুত্র বিবাহ কর্ত্তে যাচ্চেন, দ্বার-দেশে পালকী, গরুর গাড়ী, ঘোড়ার গাড়ী বা মোটরকার দাঁড়িয়ে; বর যাত্রা কর্ব্বেন। শঙ্খধ্বনির (কবি বলেছেন,—শাঁক নয় রোদন-ধ্বনি) মধ্যে মাতা প্রশ্ন করেন—বাবা কোথায় যাচ্চ? পুত্র উত্তর দিলেন—মা তোমার দাসী আনতে যাচ্ছি। মাতা আশীর্ব্বাদ কল্লেন; বর দুর্গা বলে’ যাত্রা কল্লেন। এই ত সুরু—এই যে সুর বেঁধে দিলেন মাতাঠাকুরাণী, সেই সুরেই গাওনা চলল, বধূ-ঞ্জীবনের শেষ পর্যন্ত—তা সে শেষটা কেরোসিনেই হ’ক, বা শ্বশ্রু-ঠাকুরাণীর পরলোক গমনেই হ’ক, অথবা শ্বশুরঠাকুরের পরলোক গমনের পর, শ্বশ্রু-ঠাকুরাণীর dowagerত্ব প্রাপ্তিতেই হ’ক।

 সালঙ্কৃতা, সবস্ত্রা, কাঞ্চন মূল্য সমেতা, সোপকরণা দাসী নিয়ে বাবাজীবন বাড়ী ফিরলেন। বাবাজীবনেরা প্রায় সকলেই, এই বিবাহ ব্যাপারে এবং শুভপরিণয়ের কিছুদিন পর পর্য্যন্তও, মাতাঠাকুরাণীর তথা পিতা ঠাকুরের বড়ই “ন্যাওটো” হ’য়ে থাকেন; কেননা তখনও তিনি পিতার অন্নে পরিপুষ্ট, নিজে উপায়ক্ষম নহেন; হয়ত সবে মাত্র দু’টা পাশ করেচেন, এবং আর দুটা পা’শ কর্ত্তে কর্ত্তে দু’টী কন্যার পিতা হ’য়ে পড়লেন; সুতরাং অন্য কোন বিষয়ে না হ’লেও, কলত্র ও কন্যাগণের ভরণপোষণের জন্য পিতামাতার একান্ত আজ্ঞাবাহী হওয়া ভিন্ন তাঁর গতি কি? দাসী আনতে যাচ্চি বলে’ যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন, সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে, পরিণীতা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন থেকে, অশেষ মাতৃভক্তি প্রদর্শন দ্বারা ইহপরলোকের কল্যাণ অর্জ্জন করা, তাঁর খুবই প্রয়োজন হ’য়ে থাকে। পরিণীতার প্রতি তাঁর যে কর্ত্তব্য, তা’র সম্বন্ধে তাঁর যে দায়িত্ব, সে সব শিকেয় তোলা থাকে; কেন না তিনি স্বয়ং ভর্ত্তা হ’লে কি হয়, নিজের ভরণ পোষণের জন্য তিনি পিতার মুখাপেক্ষী—ছেলের বাপ হ’লে কি হয়; তিনি তখন বাপের ছেলে, নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন না, তিনি আবার কি করে’ পরিণীতার বোঝা বইবেন; তিনি তখনও “স্বয়মসিদ্ধঃ কথমন্যং সাধয়তি”। অতএব যাঁর দাসী তাঁর হাতে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত থাকেন।

 এই যে “শ্বাশুড়ী” যিনি (কবি বলেচেন) “কলিতে অমর” অর্থাৎ যিনি যুগে যুগে একই মূর্ত্তি পরিগ্রহ করে’ বর্ত্তমান,—যিনি ছেলের মা, সুতরাং অপর মায়ের সন্তানের উপর যাঁর শাসন দণ্ড সতত উদ্যত হ’য়েই আছে—যিনি হয়ত মাতৃরূপে অন্নপূর্ণা, স্ত্রীরূপে “সচিবঃ সখী”, ভগিনীরূপে স্নেহের প্রস্রবণ, কন্যারূপে কল্যাণরূপিণী—তিনি কোন্ অভিশাপের বশে, শ্বশ্রুরূপে জ্বালাময়ী অগ্নিশিখার মত সংসার-অরণ্যে দাবানলের সৃষ্টি করে’, বন্য-কুরঙ্গিনী বধূজনকে দগ্ধ করে মারেন, তা বিধাতাপুরুষই বলতে পারেন! খুব সৌভাগ্যবতী হ’লেও শ্বাশুড়ীর হাতে বধূজনের নিগ্রহ আছেই; সে নিগ্রহের প্রকৃতি Penal codeএর ভিতর সকল সময় না পড়লেও, সুতীক্ষ্ণ বাক্যবাণ “বরিষার বারিধারা প্রায়”, সততই ঝরতে থাকে; কবির কথায়, “উঠতে খোঁটা বস্‌তে খোঁটা শুন্‌বি সাঁজ সকাল”—তা হ’তে অব্যাহতি নেই।

 কেহ কেহ বলতে পারেন যে শ্বাশুড়ী মাত্রেই কি বধূ নির্য্যাতন করেন? আমি বলি করবার ত কথা, তবে যদি কোন স্থানে তা’র অভাব হয়, তা’র বিশেষ কারণ শ্বশ্রুঠাকুরাণীর বিচক্ষণতা, তাঁর বিবেক বুদ্ধি বা সহৃদয়তা নয়; বাক্যের প্রস্রবণ যদি না ছোটে, সেটা বাইরের কোন উপলখণ্ড স্রোতের মুখ বন্ধ করার জন্য, জলের বেগের অভাব হেতু নয়। আমি সাধারণ নিয়ম বল্লুম, তা’র ব্যতিক্রম যদি কোথাও হয়, তা’র কারণ বিশেষ ভাবে অনুসন্ধান করলে শ্বাশুড়ী ঠাকুরাণীর প্রকৃতির বাহিরে কোথাও পাওয়া যাবে, তাঁর ভিতর পাওয়া যাবে না।

 মা’র মত স্নেহময়ী শ্বাশুড়ী কি হয় না? আমি বলব সেটা নারীর প্রকৃতি-বিরুদ্ধ। নারী কারো “মত” হ’তে পারে না, হয় মা হবে, না-হয় মা হবে না,—সৎমা হবে, মা’র “মত” হ’তে পারবে না। হয় স্নেহময়ী মাতা, নয়ত বিষধরী বিমাতা; হয় নারী তোমাকে ভালোবাসবে, না হয়, তোমাকে “দুটি-চক্ষের বিষ” দেখবে; মাঝামাঝি কিছু হওয়া তা’র প্রকৃতি নয়; সুতরাং শ্বাশুড়ী যখন নববধূর মা ন’ন, তার মা’র “মত” হওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব, তিনি তা’র বিমাতাই হবেন; আর সৎমা আর শ্বাশুড়ী একই পদার্থ, একটু উল্টাপাল্টা।

 মাতা পুত্রবৎসলা, পিতা কন্যাবৎসল, ইহাই biological সত্য। পুত্রবৎসলা মাতা দেখেন, যৌনধর্ম্মের নির্ম্মম নিয়মে স্নেহাস্পদ পুত্র অপর নারীর স্নেহের পাত্র, অপর নারীকে স্নেহের ভাগ দিচ্ছে, নারী হ’য়ে মাতা তা সহ্য করতে পারেন না। স্বামী পত্ন্যন্তর গ্রহণ করলে তাঁর মনে যে ভাব হয়, স্নেহময় পুত্র অন্য নারীর স্নেহাস্পদ হ’লে তা’র অনুরূপ ভাব মাতার মনে উপস্থিত হয়। কথাটা যে রকমই শুনাক, সত্য কথা। আমাদের মেয়েলী-ছড়ায় আছে—

মেয়ে বিয়োলাম পরকে দিলাম
ছেলে বিয়োলাম পরকে দিলাম

 এই হা-হুতাশের ভিতর “পরকে” দিয়ে নিশ্চিন্ত হবার ভাব নেই, নির্ম্মম অন্তর্দাহেরই উচ্ছ্বাস আছে মাত্র।

 তারপর শ্বাশুড়ী ঠাকুরাণী যে-মেয়েটী বিইয়েচেন, সেটী তাঁর নাড়ী-ছেঁড়া রত্ন, তাঁতে আর “পরের মেয়েতে” ত তুলনাই হ’তে পারবে না। তিনি যদি দোহন-কার্য্য শেষ করে’ থাকেন, অর্থাৎ বিবাহিত হ’য়ে থাকেন ত তিনি বাপের বাড়ির বন্ধন থেকে মুক্ত, সুতরাং তাঁর নববধূর সম্বন্ধে কার্য্যের বাঁধও মুক্ত। স্নেহময় ভ্রাতা, যার সঙ্গে তিনি একসঙ্গে খেলা করেচেন, এক সঙ্গে জীবন যাপন করেচেন, আজ বিয়ে হ’য়ে কি তিনি পর হ’য়ে গেছেন যে, শৈশবের ক্রীড়া-সঙ্গী ভাইটীকে একজন “পর” এসে একচেটে করে’ নেবে, এবং স্নেহের স্রোতটা অপরদিকে চলে যাবে বা তা’র তীব্রতাটা হ্রাস হ’য়ে, যাবে? তিনিও নারী, সুতরাং (নারীর মন ভাঙ্গল ত একেবারে দুখানা) তিনি ক্রমে সনাতন মূর্ত্তি ধারণ কল্লেন, “ননদিনী রাই বাঘিনী” হ’য়ে বসলেন। তাঁর এই বর্ণনাটা আজকের নয়। ননদিনী যদি অবিবাহিতা থাকেন তা হ’লেও—ধানি লঙ্কা, ক্ষুদ্র বলে’ ঝালের অভাব হয় না।

 পুত্র এই সকল মেয়েলী কথায় কান দিতে পারেন না, তা’র কারণ পূর্ব্বে বলেছি; পুত্রের পিতাও অন্তঃপুরটা গৃহিণীর স্বাধিকার বলে’ কোন কথা ক’ন না; এবং কথা কওয়াটা যে সম্পূর্ণ নিরাপদ তাও নয়। বধুর পক্ষ অবলম্বন করে’ কোন কর্ত্তা যে গৃহ সংসারের শান্তি বা স্বস্তির সহায়তা কর্ত্তে পেরেচেন, তা’র প্রমাণ আমার জানা নেই; পরন্তু confusion worse confoundedই হ’য়ে উঠেচে; সুতরাং “বোবার শত্রু নেই” এই উপদেশই তিনি সাধারণত অনুসরণ করে’ থাকেন।

 যাই হক, শ্বশ্রু ঠাকুরাণী তথা তাঁর কন্যারত্নের এই সকল ব্যবহার কেউ ভোলে না, বধূটী ত নয়ই। পুরুষ-মানুষ শুনিচি লড়াই ঝগড়ার পর গাঢ়তর বন্ধুত্বের পাশে আবদ্ধ হয়েচে—কিন্তু নারী তা কখনও হয় নি, Forgive and forget নারীর সম্বন্ধে কোনদিনই চলে না। They (women) feel, though they may not say or even think it, that slight or injury admits of no atonement.

 একটা মেয়েলী ছড়া আছে—

ছোট সরাখানি ভেঙ্গে গেছে, বড় সরাখানি আছে;
হাসিমুখী বৌ, আমার হাতের আটকাল আছে।

 ব্যাপারটা এই, একখানি ছোট সরার মাপে শ্বাশুড়ী ঠাকুরাণী বধূকে ভাত মেপে দিতেন; বলা বাহুল্য তা’তে বধূর পেট ভর্‌ত না। একদিন অসাবধানে শ্বাশুড়ী ঠাকুরাণী সরাখানি ভেঙ্গে ফেল্লেন; তা দেখে বধূর মুখে একটু হাসির রেখা ফুটে উঠ্‌ল—যে হয়ত বা এইবার “মা” বড় সরাখানির মাপে ভাত দেবেন। বধূর মুখের হাসি দেখে “মা” বল্লেন—হাস্‌চ কি বউ, মনে করচ যে, ছোট সরা ভেঙ্গে গেছে বলে’ আমি বড় সরার মাপে তোমায় ভাত দেব—জেন, আমার হাতের আটকাল (অর্থাৎ আন্দাজ) আছে।

 “মা”র এই ব্যবহার বা অনুরূপ ব্যবহার ‘মেয়ে” অর্থাৎ বধূ কি ভুলতে পারে? কেন ভুলবে? সুতরাং শ্বাশুড়ী যখন dowagerত্ব প্রাপ্ত হ’ন, এবং বধূ সাম্রাজ্ঞী হ’য়ে বসেন তখন, “গাড়ি পর লা” হ’য়ে যায়। তখন যদি বধূ সুদ-সমেত শ্বাশুড়ীর প্রাপ্য ফিরিয়ে দিতে থাকেন ত আর্ত্তনাদ করলে চলবে কেন? One who sows the wind must reap the whirlwind—এত পড়েই রয়েচে। এই রকম চল্ল পরের পর; নারী যতদিন নারী থাকবে, দাসী হ’য়ে ঢুকবে আর ফাল হ’য়ে, অর্থাৎ শ্বাশুড়ী হ’য়ে, বেরুবে—ad nauseam.

 সংসারের ভিতর বধূ পুত্রের স্নেহে ভাগ বসায় বলে’ শ্বাশুড়ী জ্বলে মরেন। কর্ত্তার স্নেহে যদি কেহ ভাগ বসায় তা হ’লেও তাই হয়। কিন্তু কর্ত্তার স্নেহে যে ভাগ বসাতে পারে, সে কে? সেও নারী, কুলস্ত্রীই হ’ক আর কুলটাই হ’ক। তা’তেও তিনি জ্বলে মরেন, সংসারে অশান্তি বিশৃঙ্খলা আসে—কিন্তু বধুটীর মত, সে জ্বালা মেটাবার পাত্র হাতের কাছে থাকে না, সুতরাং জ্বালা দ্বিগুণ হ’য়ে ওঠে। একজন রমণীই বলেচেন—I must accept here as in all relations between the sexes, the validity of the man’s plea that rings—yea, and will continue to ring—through the centuries: “The woman tempted me.”

 অতএব যে দিক দিয়েই হোক, বধূর শত্রু শ্বাশুড়ী, শ্বাশুড়ীর শত্রু বধূ বা অপর নারী। পারী সহরের প্রসিদ্ধ একজন Police Commissioner কোন দুষ্কর্ম্মের Report তাঁর হুকুমের তলে আসলে, নীল পেন্সিলে প্রথম হুকুম দিতেন—Cherchez la femme, এবং সর্ব্বক্ষেত্রেই না হোক অধিকাংশ স্থানেই, অনুসন্ধানের ফলে বা’র হ’ত যে, কোন নারী ঘটিত গোলমাল নিয়েই দুষ্কর্ম্মটা সংঘটিত হয়েছে। এ স্থলেও তাই। সংসারের মধ্যে নারীর দুঃখের নিদান খুঁজে বার করতে হ’লে—Cherchez la femme, দেখবে নারীই নারীর পরম শত্রু, পরম দুঃখের কারণ নিশিদিন নির্য্যাতনের যন্ত্র স্বরূপ বিদ্যমান।

 বাঙ্গালাদেশে নারীর অবস্থা আলোচনা করবার সময় অনেকে রঘুনন্দনকে দোষ দিয়েছেন, শিক্ষার অভাবের কথা বলেছেন। ওসব একেবারেই অসঙ্গত কথা। যে দেশে রঘুনন্দন নেই এবং শিক্ষা আছে, সেখানেও নারীর সঙ্গে নারীর সম্বন্ধ মোটের উপর একই। Cattiness স্ত্রী-সুলভ গুণ বা দোষ। All women are cats—এটা ইংরাজী কথা! একজন বিদুষী ফরাসী রমণী আমাকে বলেছিলেন—Monsieur, nous sommes des chiennes. ইংলণ্ড বা ফ্রান্সে শিক্ষার অভাব নেই, আর সে দেশে রঘুনন্দনও নেই। কেউ হয়ত বলবেন, সেখানে তেমনতর শিক্ষা হয় নি, যে-শিক্ষা নারীর প্রকৃতি বদ্‌লে যায়। সে শিক্ষা China থেকে Peru পর্য্যন্ত আজও কোথাও হয় নি বটে; সুতরাং হবারও যে বড় ভরসা আছে তা নেই। আর “দেবী”দের এত শিক্ষার অপেক্ষাই বা কেন?

 তবে পুরুষ যে কবুল দিয়ে বসেছে সেটার কারণ কি? আমি একজন ইংরাজ মহিলারই কথায় তা’র উত্তর দিয়ে এই নারী-মঙ্গল শেষ করব—

 Men’s chivalry as well as their pride has woven a cloak of silence around this question; this silence has protected women—even the worst.

 কন্যার কথা বেশী করে’ বলবার আর সুযোগ হ’ল না; কন্যার পাত্র যোগাড়ের (যাতে সে পাত্র মহাশয়ের কিছুই প্রায় বলবার থাকে না, কেন না, বিবাহ ব্যাপারে তাঁকে পিতামাতার, বিশেষতঃ মাতা ঠাকুরাণীরই, নেওটো হ’তে হয়— তা পূর্ব্বেই বলিচি) কষ্ট কল্পনা করে’, আর ফুলসজ্জার তত্ত্বটা লাথি খেয়ে ফেরত আসবার সম্ভাবনাটা কল্পনা করে’ গোড়া থেকেই ছেলে-মেয়ে তফাত হ’য়ে যায়। সেটাও যাঁর জন্য, মেয়েটা তা ভোলে না,—তা’র মা’র চোখের জল, আর বাপের শুষ্ক মুখ মনে গাঁথা থাকে। আর বধূ হ’লেও সে যখন মানুষ, তখন সে’ও ওত পেতে বসে’ থাকে। সেই লাথি ফিরিয়ে দেবার সুযোগের যথেষ্ট সদ্ব্যবহার করতে ভোলে না।