কলির বৌ ঘরভাঙ্গনী/দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক
দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক।
শুভঙ্কর দাসের বাটী।
শুভঙ্করের স্ত্রী মেঘমালা উপবিষ্টা।
মাধব দাস আসীন
মাধব। বৌ ঠাকুরুণ! আমাকে চারিটা জলপান দিন্ দেখি, আজি ঘোষালদের বাড়ীর বড় আন্ধাপুকুর নাড়া দিয়াছে যদি গুটী ৫। ৬ কৈ পাই তবে বিকেলকার কর্ম্ম হইবে, ডাইল খাইতে২ আর ভাল লাগে না, প্রার এক সপ্তাহ যাবৎ ডাইল খাইতেছি।
মেঘ। (কিছুকাল পরে চারিটা) মৌল্কা প্রদান।
মাধব। (কিছুকাল মৌনভাবে থাকিয়া) মুড়ি চিড়া নাই?
মেঘ। না, থাকিলেত দিতামই তোমার নামে কি আমি লুকাইয়া রাখিয়াছি, তুমি কি আমার শত্রু না দুষ্মুণ।
মাধব। কেন, গত তিলাসংক্রান্তের আগের দিন যে মুড়ি ভাজিয়াছিলে তাহা কি হইল?
মেঘ। (ত্যক্ত হইয়া) যা তোর কাছে, আমি এত নিকেশ দিতে বসি নাই, যা দিচ্চি তা খাবার হয় খাও, না হয় চলে যাও।
মাধব। আচ্ছা কাল দাদা যে মিরপূরের হাট হতে খেজুরে গুড় এনেছেন, তা হতে একটু গুড় দিন।
মেঘ। (নাসিকা কুঞ্চিত করিয়া) এ কোথাকার উৎপাত এসে পড়ে মল্লো—একেবারে দেখি কাল২ কোরে খেলে, যা দিচ্ছি তা খাবার হয় খাও, না হয় চলে যাও, গুড় তোমার জন্যে আনা হয় নাই।
মাধব। আমার নামেই নাই, যখন দাদা চাবেন তখন মুড়ি গুড়, বাতাসা সকলি বের হবে, দাদাই কেবল বাড়ির মালিক, আমি আর বাড়ির মালিক না?
মেঘ। (ক্রুদ্ধ হইয়া) তুমি বাড়ির চাকর।
মাধব। শোন বৌ, তুমি এত লম্বা২ কথা বলো না মুখ সামলাইয়া কথা বল, দাদা আমার সহোদর ভাই তুমি পরের ঝি, উড়ে এসে পুড়ে খাচ্চ—আমাদের সোণার সংসার মাটি কল্লে।
মেঘ। কি! এত বড় কথা, আমার স্বামী রোজগার করে দেয় আর বাড়ি বসে খেয়ে২ গায় তেল হয়েছে, আয় তোর তেল মজিয়ে দি। (এই বলিয়া ঝারু লইয়া মারিতে উদ্যত)।
মাধব। শোন বৌ ভাল হবেন। তুমি হলে স্ত্রীলোক আমি পুরুষ আমার গায়ে হাত তুলিলে লোকে তোমাকেই মন্দ বোলবে, (এই বলিয়া একপায় দুপায় জমিদারের নিকট নালিশ করিতে মাধবের গমন)