কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/সন্ধ্যা-সঙ্গীত/অসহ্য ভালবাসা
অসহ্য ভালবাসা
বুঝেছি গো বুঝেছি সজনি,
কি ভাব তোমার মনে জাগে,
একান্ত আমার ভালবাসা
এত বুঝি ভালো নাহি লাগে!
এত বুঝি পার না সহিতে,
এত ভার পার না বহিতে।
যখনি গো নেহারি তোমায়—
মুখ দিয়া, আঁখি দিয়া, বাহিরিতে চায় হিয়া,
শিরার শৃঙ্খলগুলি ছিঁড়িয়া ফেলিতে চায়,
ওই মুখ বুকে ঢাকে, ওই হাতে হাত রাখে,
কি করিবে ভাবিয়া না পায়,
যেন তুমি কোথা আছ খুঁজিয়া না পায়!
মন মোর পাগলের হেন প্রাণপণে শুধায় সে যেন
“প্রাণের প্রাণের মাঝে কি করিলে তোমারে গো পাই,
যে ঠাই র'য়েছে শূন্য, কি করিলে সে শূন্য পূরাই।”
এইরূপে দেহের দুয়ারে
মন যবে থাকে যুঝিবারে,
তুমি চেয়ে দেখ মুখ-বাগে
এত বুঝি ভালো নাহি লাগে
তুমি চাও যবে মাঝে মাঝে
অবসর পাবে তুমি কাজে
আমারে ডাকিবে একবার
কাছে গিয়া বসিব তোমার।
মৃদু মৃদু সুমধুর বাণী
কব তব কানে কানে রাণী।
তুমিও কহিবে মৃদু ভাষ,
তুমিও হাসিবে মৃদু হাস,
হৃদয়ের মৃদু খেলাখেলি;
ফুলেতে ফুলেতে হেলাহেলি।
চাও তুমি দুখহীন প্রেম,
ছুটে যেথা ফুলের সুবাস,
উঠে যেথা জোছনা-লহরী,
বহে যেথা বসন্ত-বাতাস।
নাহি ঢাও আত্মহারা প্রেম,
আছে যেথা অনন্ত পিয়াস,
বহে যেথা চোখের সলিল,
উঠে যেথা দুখের নিশ্বাস।
প্রাণ যেথা কথা ভুলে যায়,
আপনারে ভুলে যায় হিয়া,
অচেতন চেতনা যেথায়
চরাচর ফেলে হারাইয়া।
এমন কি কেহ নাই, বল্ মোরে, বল্ আশা,
মার্জনা করিবে মোর অতি—অতি ভালবাসা।