কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/সন্ধ্যা-সঙ্গীত/শান্তি-গীত



শান্তি-গীত


ঘুমা হুঃখ হৃদয়ের ধন,
ঘুমা তুই, ঘুমারে এখন।
সুখে সারা দিনমান শোণিত করিয়া পান
এখন ত মিটেছে তিয়াষ?
দুঃখ তুই সুখেতে ঘুমাস্!

আজ জোছনার রাত্রে বসন্ত পবনে,
অতীতের পরলোক ত্যজি শূন্য মনে,
বিগত দিবসগুলি শুধু একবার
পুরানো খেলার ঠাঁই দেখিতে এসেছে
এই হৃদয়ে আমার;
যবে বেঁচেছিল তারা এই এ শ্মশানে
দিন গেলে প্রতিদিন পুড়াত যেখানে
একেকটি আশা আর একেকটি সুখ,—
সেইখানে আসি তারা বসিয়া রয়েছে
অতি ম্লান মুখ।
সেখানে বসিয়া তারা সকলে মিলিয়া
অতি মৃদুস্বরে
পুরানো কালের গীতি নয়ন মুদিয়া
ধীরে গান করে।



দুঃখ তুই ঘুমা!
ধীরে—উঠিতেছে গান—
ক্রমে ছাইতেছে প্রাণ,
নীরবতা ছায় যথা সন্ধ্যার গগন।
গানের প্রাণের মাঝে, তোর তীব্র কণ্ঠস্বর
ছুরির মতন—
তুই—থাম্ দুঃখ থাম্,
তুই—ঘুমা দুঃখ ঘুমা!

কাল্ উঠিস্ আবার,
খেলিস্ তুরন্ত খেলা হৃদয়ে আমার।
হৃদয়ের শিরাগুলি ছিঁড়ি ছিঁড়ি মোর
তাইতে রচিস্ তন্ত্রী বীণাটির তোর
সারাদিন বাজাস্ বসিয়া
ধ্বনিয়া হৃদয়।–
আজ রাত্রে র’ব শুধু চাহিয়া চাঁদের পানে
আর কিছু নয়।–