কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/সন্ধ্যা-সঙ্গীত/হলাহল

হলাহল

এমন ক’দিন কাটে আর।
ললিত গলিত হাস, জাগরণ, দীর্ঘশ্বাস,
সোহাগ, কটাক্ষ, মান, নয়ন-সলিল-ধার,
মৃদু হাসি, মৃদু কথা, আদরের, উপেক্ষার,
এই শুধু—এই শুধু—দিন রাত এই শুধু
এমন ক’দিন কাটে আর।

কটাক্ষে মরিয়া যায়, কটাক্ষে বাঁচিয়া উঠে,
হাসিতে হৃদয় জুড়ে, হাসিতে হৃদয় টুটে,
ভীরুর মতন আসে দাড়ায়ে রহে গো পাশে,
ভয়ে ভয়ে মৃদু হাসে, ভয়ে ভয়ে মুখ ফুটে,
একটু আদর পেলে অমনি চরণ লুটে,
অমনি হাসিটি জাগে মলিন অধর-পুটে;
একটু কটাক্ষ হেরি অমনি সরিয়া যায়,
অমনি জগৎ যেন শূন্য মরুভূমি হেন,
অমনি মরণ যেন প্রাণের অধিক ভায়।
প্রণয়-অমৃত এ কি? এ যে ঘোর হলাহল—
হৃদয়ের শিরে শিরে প্রবেশিয়া ধীরে ধীরে
অবশ করেছে দেহ শোণিত করেছে জল!

কাজ নাই, কর্ম্ম নাই, বসে আছে এক ঠাঁই
হাসি ও কটাক্ষ লয়ে খেলেনা গড়িছে যত,
কভু দুলে-পড়া আঁখি—কভু অশ্রু-ভারে নত।
দূর কর—দূর করবিকৃত এ ভালবাসা
জীবনদায়িনী নহে, এ যে গো হৃদয়-নাশা!
কোথায় প্রণয়ে মন যৌবনে ভরিয়া উঠে,
জগতের অধরেতে হাসির জোছনা ফুটে,
চোখেতে সকলি ঠেকে বসন্ত-হিল্লোলময়—
হৃদয়ের শিরে শিরে শোণিত সহজে বয়—
তা নয়, একি এ হল, একি এ জৰ্জর মন,
হাসিহীন দু-অধর, জ্যোতিহীন দু-নয়ন!
দূরে যাও—দূরে যাও—হৃদয় রে দূরে যাও
ভুলে যাও ভুলে যাও—ছেলেখেলা ভুলে যাও
দূর কর—দূর কর—বিকৃত এ ভালবাসা
জীবনদায়িনী নহে, এ যে গো হৃদয়-নাশা!