কাহাকে?/চতুর্থ পরিচ্ছেদ
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
যখন জ্ঞান হইল, দুইটি সোৎস্নক নয়নের সস্নেহ দৃষ্টি নয়নে স্থাপিত দেখিলাম। বুঝিলাম আমার সেই মোহের অবস্থা—যে অবস্থায় আমি আত্মহারা হইয়। অতীতে বর্ত্তমানে মিশাইয়া ফেলি, বাল্যের স্মৃতিগঠিত যৌবনস্বপ্নে একে অন্য ভ্রম করি,—এ আমার সেই স্বপ্নাবিষ্ট অবস্থা; তাই মিষ্টার ঘোষের নয়নে আমার বাল্যলখার স্নেহদৃষ্টি নিরীক্ষণ করিতেছি। কিন্তু তখনি সে ভ্রম ভাঙ্গিল; বুঝিলাম ইনি তিনি নহেন-ইনি ডাক্তার। আমাকে সজ্ঞান দেখিয়া ডাক্তার বলিয়া উঠিলেন—“Thank God, the danger is past, she is all right now.”
দিদি আমার পাশেই বসিয়াছিলেন; তিনি এক চামচ ঔষধ আমার মুখের কাছে ধরিয়া স্নেহকণ্ঠে বলিলেন—“মণি এইটুকু থেয়ে ফেল।”
আমি বলিলাম “আমার হয়েছে কি-ওষুধ খাব কেন?”
ভগিনীপতি বলিলেন—“না কিছুই হয়নি—ওষুধ না—সরবৎ দেওয়া যাচ্ছে—খেয়ে ফেল দেখি,—I say Doctor—রমানাথ একবার এখন দেখতে আসতে চায়; আসতে পারে কি?”
ডাক্তার বলিলেন—“এখনো বোধ হয় কিছুক্ষণ disturb না করাই ভাল,—If she gets a little sound sleep her nervous system will recover its natural tone, এখন আমরা ও যাই—আমারো আর এখানে থাকার আবশ্যক দেখিনে। আপনার স্ত্রী উঁহাকে এখন ঘুম পাড়াবার চেষ্টা করুন। যদি বলেন, কাল আমি বরঞ্চ একবার এঁকে দেখতে আসব— আসতে পারি কি?”
ভগিনীপতি বলিলেন—“নিশ্চয়ই। আজ আপনি না থাকলে কি বিপদেই পড়তে হোত—I don't know how to thank—”
আর শুনিতে পাইলাম না, তাঁহারা চলিয়া গেলেন।—এতক্ষণ যেন কি একটা অজ্ঞাত জলস্ত লৌহভার আমার হৃদয়ে রুদ্ধ হইয়া ছিল, সহসা অশ্রুশ্রোতে গলিয়া বাহির হইয়া উঠিল, আমি দুইহাতে দিদির কটিদেশ বেষ্টন করিয়া—তাঁহার কোলে মাথ। রাখিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিলাম—“দিদি আমি কি পাগল হ’য়ে যাচ্ছি?” দিদি আমার মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে আদর করিয়া বলিলেন—“লক্ষ্মি মণি আর কথা ক’সনে—ডাক্তার ঘুমাতে বলেছে—চুপ করে থাক—এখনি ঘুম আসবে।”
আমি থামিলাম, কিন্তু অশ্রধারা থামিল না; শত ধারায় উথলিয়া উঠিতে লাগিল, অথচ এ দুঃখ যে কেন—কেন যে কাঁদিতেছি তাহ কিছুই বুঝিলাম না; সুখ দুঃখ কিছুরই অনুভূতি আমার তখন ছিল না। কাঁদিতে কাঁদিতে—ছেলেমামুযের মত কাঁদিতে কাঁদিতে, দিদির স্নেহাদরের মধ্যে আমি ঘুমাইয়। পড়িলাম। সমস্ত রাত্রি ঘুমাইয়া কাটিল; অথচ সুনিদ্রা নহে; ঘুমাইয়াও মনে হইতেছিল যেন জাগিয়া আছি—অথবা জাগিয়া জাগিয়া ঘুমাইতেছি–মাথার মধ্যে কত রকম দৃশ্য কত রকম ঘটনা ছায়াবাজির মত একটির পর একটি কেমন অবিশ্রান্ত গতিতে ঘুরিয়া ফিরিয়া চলিয়া যাইতেছিল। এই যেন কে ছিল কে নাই, একজনের সহিত গল্প করিতেছিলাম—সে আর একজন হইয়া পড়িল,—কাহার বাড়ীতে যেন নিমন্ত্রণে যাইব—সাজ সজ্জা করিতেছি—কিছুতেই সজ্জা শেষ হইতেছে না;–বাড়ীর বাহির হইয়াছি, গাড়ি খুঁজিতেছি—কিছুতেই খুঁজিয়া মিলিতেছে না; অবশেষে পায়ে চলিতেছি—পথ ফুরাইতেছে না, যদি বা পথ ফুরাইল কাহার বাড়ী যাইতে কাহার বাড়ী আসিয়াছি,—এই রকম সব হিজিবিজি স্বপ্ন;–শেষ স্বপ্নটি কেবল বেশ স্পষ্ট—এত স্পষ্ট—যে তাই এখনো আমার জ্বলন্তরূপে মনে আছে। স্বপ্না দেখিলাম যেন আমার বিবাহ হইতেছে, আমি আগ্রহ দৃষ্টিতে বরের দিকে চাহিলাম; কিন্তু মনে হইল এ সে নহে; নিতান্ত ব্যথিত হৃদয়ে চক্ষু নত করিলাম—তাঁহার চরণে দৃষ্টি পড়িল-অমনি হৃদয় আনন্দে মগ্ন হইয়া উঠিল—আমি আহ্লাদের আবেগে বলিয়া উঠিলাম—“এ সেই সেই!” ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখিলাম বেশ আলো হইয়াছে। এইরূপ স্বপ্নময় ঘুম সত্ত্বেও জাগিয়া অনেকটা সুস্থ বোধ করিলাম।
মনে পড়িল,—দুজনের এক একটি কথা আবার যেন নূতন করিয়া আদ্যোপান্ত শুনিতে লাগিলাম। চারিদিকের বায়ুমণ্ডলে পরিবর্ত্তন অনুভব করিলাম-আপনাকে আপনি ভিন্ন বলিয়া অনুভব করিলাম;—বুঝিলাম কাল যাহা ছিল—আজ আর তাহা নাই-কাল যে আমি ছিলাম-আজ আর সে আমি নহি! হৃদয়ে নৈরাশ্য বেদনা জাগিল; কিন্তু এ নৈরাশ্যে ঔপন্যাসিক করুণ কষ্টের দারুণতা, অসহনীয়তা উপলব্ধি করিলাম না; কিম্বা সে যেমনই হৌক তবু আমার দেবতা—তবু তাহার চরণে হৃদয় বিকাইব, মনে এমনতর ভাবেরও উদয় হইল না। পরিপূর্ণ বিশ্বাসে প্রতারিত বোধ করিয়া এ যেন প্রত্যাখ্যাত ভিক্ষুক দুর্ব্বাসা মুনির ন্যায় গর্ব্বাহত নিরাশক্ষুব্ধ হইলাম, প্রতারকের উপর ভীষণ ক্রোধের উদয় হইল। কেবল তাহার উপর নহে; নিজের উপরেও ক্রুদ্ধ হইলাম—কি করিয়া আমি এমন লোককে দেবতা মনে করিয়াছিলাম! সঙ্গে সঙ্গে বিকটতর একটা আনন্দ জন্মিল এই যে, সে ভ্রান্তি হইতে নিস্কৃতি লাভ করিয়াছি। তুলনায় ডাক্তারের প্রতি খুব শ্রদ্ধা জন্মিল—তাঁহার করুণ সহৃদয় ভাবে পুরুষোচিত মহত্ব দেখিতে লাগিলাম।
আমাকে সুস্থ দেখিয়া দুপুরের পর দিদি অসুখের কথা পাড়িলেন—“অনেক দিন তোর হিষ্টিরিয়া হয়নি,—ভেবেছিলুম একেবারে সেরে গেছে, আবার রাত জেগে নভেল পড়েছিলি বুঝি? তোর সঙ্গে যদি কিছুতে পারা যায়! আচ্ছা নিজের জন্য না হোক আমাদের কষ্ট মনে ক’রেও কি সাবধান হতে নেই।
আমি বলিলাম—“কই অসাবধান ত আমি মোটেই হই নি—”
দিদি। “তবে হঠাৎ অমনতর হোল কেন? কাল যে ভাবনা গেছে—তা আর বলার নয়। দরজার কাছে গিয়েই দেখি—তুই পড়ে। চেঁচিয়ে উঠতেই এঁরা ওঘর থেকে এসে পড়লেন। ভাগ্যিস ডাক্তার কাছে ছিল—তাই রক্ষে। আহা রমানাথ বেচারার যে মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল সে আর কি বলব! তাপর তোকে ত ঘরে উঠিয়ে আনা গেল, সে একবার দেখেও যেতে পারলে না, শুনলুম নাকি ভারী বিষণ্ণ হয়ে বাড়ী গেছে।”
আমি বলিলাম-ক্রুদ্ধ বিদ্রুপের স্বরে বলিলাম-“বিষণ্ণ হয়ে বাড়ী যেতে পারেন কিন্তু সে আমার অসুখের জন্যে নয়-নিজে ধরা পড়েছেন—সেই জন্যে। দিদি আমরা নিতান্তই ভুল বুঝেছি, প্রতারিত হয়েছি”—
বলিতে বলিতে নয়ন অশ্রুতে ভাসিয়া উঠিল, অগ্নিময় ক্রোধাশ্রুতে ভাসিয়া উঠিল। দিদি উৎকণ্ঠিত স্বরে বলিলেন—
“তোর কথা ত কিছুই বুঝতে পারছিনে—কাল কি তোকে ঐ ভাবের কথা কিছু বলেছে নাকি? কঁদিস নে আবার অসুখ করতে পারে—স্থির হয়ে সব বল দেখি কি হয়েছে।”
স্থির হইয়া না পারি অস্থির ভাবেই সমস্ত খুলিয়া বলিলাম। দিদি শুনিয়া যেন হাঁফ ছাড়িয়া বলিলেন—“তবু ভাল এই ব্যাপার? আমার এমন ভয় হয়েছিল—যে না জানি কি!”
আমি ক্রুদ্ধস্বরে বলিলাম—“না জানি কি! একজনের সঙ্গে বিবাহে প্রতিশ্রত হয়ে অন্য জনের সঙ্গে প্রেমের ভাণ-একি সামান্য ব্যাপার হোল?”
দিদি। না ভান হতেই পারে না; তোকে যে সে ভালবাসে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ও বিলাতের কথা ছেড়ে দে। প্রথমতঃ কথাটা কতদূর সত্যি মিথ্যে তার ঠিক নেই। তারপর ধর যদি কারো সঙ্গে তার বিয়ের কথা হয়েই থাকে, কিন্তু বিয়ে ত আর হয় নি—তা হলে আর এতই রাগের কারণ কি? সব দেশেইত এমন কত শত engagement গড়ছে আবার ভাঙ্গছে—এই সেদিন যে আমার মামাত দেওরের গায়ে হলুদ হয়েও বিয়ে ফিরলে—আর এ তো বাঙ্গালী ইংরাজের engagement, দুজনের স্বভাব, দুজনের অবস্থার পার্থক্য একবার ভেবে দেখ দেখি। কোন একটা মোহের মুহূর্ত্তে দুজনে আজন্ম একত্ব শপথ করতে পারে,—কিস্তু তার পরমুহূর্ত্ত থেকেই অনুতাপ করার কথা—বিয়ে করার যথার্থ উদ্দেশ্য যা পরস্পরের সুখ,এ বিয়েতে আমার ত মনে হয় তার সম্ভাবনা একেবারে শূন্য। এ অবস্থায় আমিত বলি, কথা রাখার চেয়ে ভাঙ্গাই ভাল। নিজের আহাম্মকীতে যেন নিজেকেই সে অসুখী করলে কিন্তু আর একজনের চিরজীবনের সুখাসুখও যখন—”
আমি শেষ পর্যন্ত স্থিরভাবে শুনিতে পারিলাম না, বলিয়। উঠিলাম–"কিন্তু তার সুখদুঃখ ভেবেই কি এ বিয়ে ভাঙ্গা হয়েছে? যে ভ্রান্তনারী সর্ব্বত্যাগী হয়ে এখনো পূর্ণ বিশ্বাসভরে তার পথ চেয়ে আছে, সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করে গোপনে গোপনে যে পুরুষ আর একজনকে ভালবাসা জানায় বিবাহ-প্রস্তাব করে—সে খুব সাধু পুরুষই বটে। দিদি তুমি এমন প্রশান্তভাবে এ ঘটনা কি করে যে দেখছ আমি ত ভেবেই পাইনে।”
দিদি বলিলেন “আমার ভিতরকার কথাটা কি জানিস, আমি অন্তর থেকে তাকে এতে দোষী বলে বিশ্বাস করতে পারছিনে। বিলাতের মেয়েদের কুহক ত প্রসিদ্ধ কথা,আমার মনে হচ্ছে নেহাৎ কোনরূপ একটা পাকে চক্রে পড়ে বেচারার এমনতর বিভ্রাট ঘটেছিল। তাকে জিজ্ঞাসা করলেই এর এমন একটা সদুত্তর পাওয়া যাবে যে তখন সে মেয়ের চেয়ে তার উপরেই বেশী মায়া করবে।”
আমি। তুমি বুঝি ভেবেছ এসব কথা আমি তার কাছে তুলতে যাব?
দিদি। তোর তুলতে হবে না সে নিজেই তুলবে সেজন্য ভাবনা নেই, না হয় আমরা জিজ্ঞাসা করব। কিন্তু যার সঙ্গে বিয়ে স্থির হয়ে গেছে—তার সঙ্গে বুঝি আর এ কথা তোলা যায় না?”
আমি। বিয়ে স্থির এখনো হয়নি, আমার মোটেই ইচ্ছা নেই।
দিদি বিস্ময়ে রাগে বলিলেন “তুই ক্ষেপেছিস নাকি, এই সামান্য কারণে বিয়ে বন্ধ হবে! ওকথা মনেও আনিস্নে, তাহলে সমাজে কি কলঙ্কের সীমা থাকবে; সে পুরুষমানুষ তার কি, তোর সঙ্গে না হলে এখনি অন্য আর একজন সেধে মেয়ে দেবে, আর তোর নামে এ থেকে এত কথা উঠবে যে পরে বিয়ে হওয়াই ভার হবে।
আমি। নাইবা বিয়ে হল, আমি ত সে জন্য কিছুমাত্র ব্যস্ত নই।
দিদি। তা ছাড়া এটাও ভেবে দেখ তুই যে এমন কোরে নিজের চিরজীবনের সর্ব্বনাশ করতে চাচ্ছিস সেকি কোন একটা ন্যায়ের অনুরোধে? তুই যে জন্য তাকে দোষী করছিস—এতে তোরও কি ঠিক সেই একই রকম অন্যায় করা হচ্ছে না? যে তোকে প্রাণপণে ভালবাসছে, মিথ্যা কারণে তাকে কি তুই চিরঅসুখী করতে যাচ্ছিস নে?
আমি। মিথ্যা কারণ!
দিদি। নিশ্চয়ই। আমি বেশ জানি তার কাছে আসল ঘটনা শুনলে বুঝতে পারবি—তার তেমন দোষ নেই। অস্তুতঃ তার এতে কি বলার আছে সেটা শোন—শুনে ভারপর যা হয় স্থির করিস। খুনী যে তারও বক্তব্য না শুনে বিচার হয় না; আর যে তোকে এত ভালবাসে তার পক্ষে তুই একটা কথা না শুনে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে যাচ্ছিস? তোর দেখছি নিতান্তই কঠিন প্রাণ!
আমি নিরুত্তর হইয় গেলাম।—কি করিয়া আমার মনের ভাব তাঁহাকে বুঝাইব; তিনি সাংসারিক চক্ষে এ ঘটনা দেখিতেছেন, তাঁহার অভিজ্ঞ হৃদয় বলিতেছে “সংসারে এরূপ ঘটিয়াই থাকে। দোষে গুণে মানুষ অতএব মানুষ দেবতা চাহিলে তোমাকে নিরাশা সার করিতে হইবে। তুমি শুধু দেখ সে নিতান্ত ঘৃণ্য দোষ করিয়াছে কি না? যদি না করিয়া থাকে তবেই সে ক্ষমা পাইবার পাত্র।” আমার কিন্তু নিদাঘ নিশীথের স্বপ্ন ভাঙ্গিয়াছে, নয়নে আর টিটানিয়ার প্রেম দৃষ্টি নাই, যাহার বলে কুরূপ সুরূপ হইবে, পাপে তাপে দোষে মলিনতায়, কাঁদিয়া তবু তাহাকে আমারি ভাবিতে পারিব। এখন আমার নিরপেক্ষ বিচারসক্ষম নবীন হৃদয় উচ্চতর কল্পনাপূর্ণ উচ্চতর আকাঙ্ক্ষা আদর্শে মাত্র জাগ্রত। আমার মনে এখন—যে আমার ক্ষমার পাত্র সে আমার প্রণয়ী, আমার স্বামী হইবার যোগ্য নহে; আমার স্বামীতে আমি সূর্য্যের মত জ্যোতিষ্মান গৌরবমণি দেখিতে চাই। সংসার যেমনই হৌক, পৃথিবীতে সে আমাকে স্বর্গ দেখাইবে, আমি তাহাতে দেবতা পাইব। অন্যে শুনিলে ইহা বৃথা কল্পনা বলিয়া উপহাস করিবে—কিন্তু আমার অনভিজ্ঞ হৃদয়ে ইহা আকাশকুসুম নহে, প্রকৃত সত্য, কিন্তু এ সত্য আমি অন্যকে কি করিয়া বুঝাইব? কেবল তাহাই নহে, আমার স্বামীর বর্ত্তমানটুকু লইয়াই আমি সস্তুষ্ট নহি, অতীতে বর্ত্তমানে ভবিষ্যতে তাঁহার সমস্ত জীবনে আমি আপনাকে বিরাজিত দেখিতে চাই, তাঁহার জীবনের কোন ভাগ যে আমাছাড়া ছিল বা কখনো তাহার সম্ভাবনা আছে, আমার সর্ব্বগ্রাসী প্রেমাকাঙ্ক্ষী এ চিন্তা সহ্য করিতে পারে না, এ সম্বন্ধে আমার হৃদয় পুরুষের ন্যায়,—পুরুষ পত্নীতে যেরূপ অক্ষুণ্ণ অমর পবিত্রতা, অনাদি অনন্ত নিষ্ঠতা চাহেন, আমি তেমনি আমার স্বামীর সমস্ত জীবনই আমার বলিয়া অনুভব করিতে চাহি।
আমার এ আকাঙ্ক্ষায় সহানুভূতি কে করিবে? আমি কি করিয়া বুঝাইব যে আমি তাঁহাকে ক্ষমা করিতে পারি— বিবাহ করিতে পারি—তিনি আমার স্বামী হইতে পারেন কিন্তু আমার হৃদয়ের আদর্শ আকাঙ্ক্ষা তিনি পূর্ণ করিতে পরিবেন না। তাঁহাকে হৃদয়মন্দিরে স্থান দিতে গিয়াছিলাম সত্য কিন্তু তাহা ভ্রমক্রমে; মোহভঙ্গে পরিত্যক্ত বিসর্জ্জিত ভগ্ন অঙ্গহীন মূর্ত্তিকে হৃদয়ে স্থাপন করিলে হৃদয়ের শোভা হইবে না, জীবন পর্য্যন্ত তাহাতে বিকৃত বিরূপ হইয়া পড়িবে। রমণীতে এরূপ পৌরুষিক হৃদয়ভাবের কি সহানুভূতি আছে? তাই নিরুত্তর হইয় গেলাম।