কাহাকে?/দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।
সে তর্কের ঐখানেই সমাপ্তি। টেবিলে বসিয়া অন্য নানা কথা-বেশীর ভাগ বিলাতের গল্পই চলিল।—প্রথমে উঠিল ইংলণ্ডের শীতের কথা তাহা হইতে বরফে স্কেট করার বর্ণনা। শুনিয়া দিদি বলিলেন—“আমাদের নিতান্তই কৃপার পাত্র মনে করবেন না, এদেশে বসেও আমরা জমাট বরফ দেখেছি। সেই নইনিতালে—কেমন মণি?”
দিদি ডাক্তারের গল্পের উত্তরে একথা বলিলেন,—আমিও তাঁহার উত্তর স্বরূপ বলিলাম—“কিন্তু আপনি যে রকম বলছেন এ সে রকম অবশ্য নয়—এ শুধু বরফের একটা প্রকাণ্ড স্তূপ। দুই পাহাড়ের মাঝখানে, শীতের সময় যে বরফ পড়েছিল—তারি খানিকট মাটি চাপা পড়ে গরমি কালেও আর কি গলতে পায়নি। একটা পাশ শুধু গলে গিয়ে মস্ত একটা বাড়ীর মত দেখতে হয়েছে—সে দিকটা যেন তার খোলা দরজা। এক জায়গায় নীচের থেকে বরফ গলে সুন্দর বরফের সেতু হয়ে আছে!
দিদি। জায়গাটি কি নিরিবিলি। কেবল ঝরণার শব্দ ধরে ধরে আমরা সেখানে পৌঁছেছিলুম।
আমি। বাস্তবিক জায়গাটি বড় সুন্দর। লতাপাতা, ফুল, পাহাড়, ঝরণা, নদী, বরফ, প্রভৃতি প্রকৃতির যত কিছু সুন্দর বস্তু-সব যেন একত্র জোট বেধে লোকচক্ষু এড়াবার অভিপ্রায়ে সেই একটুখানি অপ্রশস্ত স্থানে ঘেঁসাঘেসি করে আপ নাদের সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে। সেই নিভৃত সবুজ পাহাড়ের কুঞ্জে শাদা বরফের ঘরবাড়ী যখন সহসা চ’খে পড়ে—মনে হয় এ কোন পরীর রাজ্যে এসে পড়লুম!
দিদি। ঠিক বলেছিল! মণি কিন্তু বেশ বলে? আমি এমন বর্ণনা করে বলতে পারিনে!”
এই অযাচিত অকাল-প্রশংসায় লজ্জিত বিরক্ত হইয়া আমি চুপ হইয়া গেলাম,—ভগিনীপতি দিদিকে বলিলেন—“তোমার আর কি আমারি মত দশা। যা দেখেছ তা এক রকম ভুলে বসে আছ তা বর্ণনা করবে কি বল?
দিদি। আমার মনে ত আর দিনরাত মক্কেলের ভাবনা জাগছে না, যে অন্য সব ভুলে বসে থাকব?
ভগিনীপতি। আচ্ছা বল দেখি তবে বরফট কেমন দেখতে!
দিদি। না তাকি বলতে পারি? কিন্তু তোমাকে ত আর আমি পরীক্ষা দিতে বসিনি।
ভগিনীপতি। তবে আমিই পরীক্ষা দিই। কি চমৎকার সাদা ধবধবে! The sublimest, beautifulest, grandest—
দিদি। আর চালাকি করতে হবে না!
ডাক্তার বলিলেন—২৪ ঘণ্টা হাতে পেয়েও তোমার যে আশ মেটে না দেখছি হে; এই আধঘণ্টা ফাউটুকুও দখল করতে চাও। সমস্ত গল্পটা নিতান্তই যে একচেটে করে নিচ্ছ।”
ভগিনীপতি। I beg your pardon. I shall keep as quiet as a dummy.
দিদি। সেই ভাল। তুমি চুপ করে থাক আমরা গল্প করি। বরফটা জানেন, দেখতে আমাদের খাবার বরফের মত মোটেই নয়। বাইরেটা ঠিক যেন তার নুনের গুঁড় জমাট বাঁধা— আর ঘরের ভিতরের দেয়ালগুলো মোমের মত চমৎকার মোলায়েম আর একটু কাল কাল। মাটির সঙ্গে মিশেছে কি না।
ভগিনীপতি। গিন্নিদের আবার তখন খেয়াল হোল-বরফ খানিকটা ভেঙ্গে বাড়ী আনতে হবে!
দিদি। তুমি ত আর ভাঙ্গনি—তবে সে কথা আবার তোল কেন? আমরা দুবোনে ভাঙ্গতে চেষ্টা করলুম তা পারব কেন? হাতে কেবল নুনের মত গুঁড় উঠে আসতে লাগলো।
ডাক্তার। আমি থাকলে নিশ্চয়ই আপনাদের হুকুম তামিল করতুম—বরফ খানিকটা ভেঙ্গে সঙ্গে আনতুম।
দিদি। (ভগিনীপতিকে) দেখলে! এঁর কাছে শেখো মেয়েদের কেমন ক’রে প্রসন্ন করতে হয়।
ভগিনীপতি। Good gods! ওঁর কাছে আমি শিখতে যাব! আমি কি আর আমার সময় ওসব করিনি? বিয়ের আগে হাতে কত কাঁটা বিধিয়ে গোলাপ ফুল তুলে দিয়েছি— এরই মধ্যে সে সব ভুলে গেছ?
দিদি। (সলজ্জে) আচ্ছা বেশ থাম থাম। (ডাক্তারের প্রতি) তাপর আপনি গল্প করুন। বাস্তবিক নদীনালা বরফে জমাট বেঁধে মাটীর মত শক্ত হয়েছে,—তার উপর দলে দলে সব সুন্দর সুন্দরীরা পরীর মত স্কেট করছে—সে না জানি কি, চমৎকার দেখতে! আপনি বোধ হয় দেখে খুবই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন?
ভগিনীপতি। কি দেখে! স্কেটিং না বরফ,—না সুন্দর সুন্দরী?
দিদি। সমস্তই। কিন্তু তোমাকে ত আর জিজ্ঞাসা করছিনে।
ডাক্তার। হ্যাঁ মুগ্ধ হয়েছিলুম বোধ হয়,—হবারিত কথা।– তবে সেদেশের ভিতরের সৌন্দর্য্য আমাকে এতই মোহিত করে ছিল, যে বাইরের কোন দৃশ্য আর তেমন আশ্চর্য্য মনে হয়নি! সেখানে কি জ্বলন্ত জীবন্ত স্বাধীনতা, কি অদম্য উদাম উৎসাহ! আমাদের দেশের মত অলস বিশ্রাম যেন তারা জানে না। এক জনে দশজনের কাজও করে, দশজনের আমোদও করে। আমার কলেজের প্রায় প্রত্যেক ছোকরাকেই দেখতুম—যথা সময়ে লেকচার শোনে—surgical operation শেখে;—পালায় পালায় dutyতে থাকে, রাত জেগে পড়াশুনাও করে,— আবার ফুটবল, হকি, বোটরেস—সকল রকম খেলাতেই যোগ দেয়; ডিনার পার্টি, বল, থিয়েটার ঘুরতেও বাকি রাখে না। আমিত তাদের energy দেখে প্রথম প্রথম অবাক হয়ে যেতুম!
ভগিনীপতি। নইলে আর ইংলণ্ড ও ইণ্ডিয়ায় তফাৎ হবে কেন বল?
ডাক্তার। সেদেশে সব কাজেরই এমন একটা সুচারু শৃঙ্খলা যে তাতে ক’রে কাজও ঢের সহজ হয়ে আসে—আর বেশী কাজও করা যায়। জীবনগুলো সেদেশে যেন ঠিক ঘড়ির কাঁটার চালে চলে। নিমন্ত্রণ খেতেই যাও—দেখাশুনা করতেই যাও, বা কাজের জন্যই কারো কাছে যাও, সব তাতেই যেন ট্ৰেণ ধরতে যোচ্ছ—এমনিভাবে সময়ের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়। কোন একটা engagement থাকলে প্রথম প্রথম আমি এমন অস্থির হয়ে পড়তুম, late হবার ভয়ে হয় ত বা আধঘণ্টা আগে থাকতেই হাজির হয়ে দরজার কাছে পাচালি করে বেড়াচ্ছি।
আমি। বিলাতের গল্প শুনলে আমার এমন সে দেশে যেতে ইচ্ছা করে।
ডাক্তার। আমার ত মনে হয় শিক্ষিত স্ত্রীপুরুষ সকলেরি একবার করে অন্ততঃ সে দেশে যাওয়া উচিত। সেখানকার সেই মুক্ত স্বাধীন বায়ু নিশ্বাসে গ্রহণ করলেও আমাদের মত নির্জীব জীব নতুন জীবন পায়, তারও যেন জীর্ণ সংস্কার হয়। যে সব Idea এ দেশে বলে কল্পনাতে পোষণ করতেও লজ্জা বোধ হয়, সে দেশে বসে সেই সবই সত্য সাধনার বিষয় বলে মনে হোত। এখন বলতেও লজ্জ করে, কিন্তু আমারই তখন মনে হোত আমি একলাই যেন এ দেশটাকে ওলট পালট করতে পারি। এদেশের বদ্ধমূল কুসংস্কারগুলাকে দুট কথার জোরে— বারুদের মত তোড়ে ওড়াতে পারি। এখন দেখছি নিজের বিশ্বাস রক্ষা করাই কত কঠিন—তা আবার দেশগুদ্ধ reform করব!
ভগিনীপতি। বিধাতা আমাদের মেরেছেন—তার উপায় কি? ইংলণ্ডের মত ক্লাইমেট যদি ইণ্ডিয়ার হোত তাহলে কি আর আমাদের এমন দশা হয়?
দিদি। না এমন কাল রূপ নিয়েই জন্মাই? শোনা যায় এক কালে নাকি আমরাও সুন্দর ছিলুম-যখন প্রথমে পঞ্চনদ পার হয়ে এদেশে বাস করতে আসি! বাস্তবিক যখন এই সামনের মাঠটায় ইংরাজের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মোমের পুতুলের মত মুখগুলি দেধি—তখন আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছা হয় না-ভগবান আমাদের জাতকে কেন অমন সুন্দর করলেন না? তারা যেখানে থাকে যেন তারা ফোটায়!
ভগিনীপতি। এত দুঃখ কেন? কালোরূপে ও ত ভুবন মজেছে। তোমাদের–
দিদি! সুন্দর রূপে আরো মজে!
ভগিনীপতি। তা বলা যায় না। কি বল হে? সে সুর্য্যের দেশ থেকেও ত বিনা ফোস্কায় তাজা ফিরে এসেছ, এখন দেখ এদেশে এসে চাঁদের আলোতে স্থির থাক কি না? আমার দশা ত দেখতেই পাচ্ছ।
দিদি। তা নয়গো তা নয়। সূর্য্যের আলোতে ঝলসে উঠলেই লিন্ তখন চাঁদের আলোতে ঠাণ্ডা হতে আস। নইলে কি আর দেশকে মনে পড়ে? বাস্তবিক সেদেশে যেতে যেতেই সবাই কি ক’রে তার নিজেদেশ-আত্মীয়স্বজন সব ভুলে যায়— আমার ভারী আশ্চর্য্য মনে হয়।
ভগিনীপতি। আমার কি মনে হয় জান? সেদেশের এত charm সত্ত্বেও তবুও যে তারা একেবারে দেশ ভোলে না, তবুও যে বাঙ্গালি থাকে,—দেশে ফেরে,—বিয়ে না করে ফেরে, আর ফিরেই বিয়ে করে—এইটেই বেশী আশ্চর্য্য!
দিদি। তা যাওনা, তোমাকে ত কেউ বারণ করে নি, কেউত পা বেঁধে রাখেনি।
ভগিনীপতি। এই এই! জানছেন কি না তা হবার যো নেই-একেবারে শিকলি বাঁধা।
তাঁহাদের মানাভিমান চলিল,—আমি বলিলাম—“তাপর আপনার আর কি ভাল লাগত সেদেশে!
ডাক্তার। সব চেয়ে আমার কি ভাল লাগত শুনবেন? সেদেশের স্ত্রীলোকদের
ভগিনীপতি। সৌন্দর্য্য! Good heavens আমি যে আর এক রকম এক রকম বোঝাচ্ছি!
দিদি। আপনি,ত দিব্যি! আমাদের মুখের উপর ও কথাটা বলতেও বাধলো না আপনার?
ডাক্তার হাসিয়া বলিলেন—“মাপ করবেন,—কিন্তু ও কথাটা আমি বলিনি,—আপনার স্বামী বলেছেন। আমি বলছিলুম আমার সব চেয়ে ভাল লাগত, সেদেশের মেয়েদের স্বাধীনতা, আত্মনির্ভর ভাব। দিন দিন সেদেশে স্ত্রীলোকের কার্য্যক্ষেত্র বাড়ছে—এমন কি পলিটিক্সে পর্য্যন্ত তারা হস্তক্ষেপ করেছে। পুরুষেরা এজন্য বিরক্তি প্রকাশ করে-ঠাট্ট তামাসা করে— অথচ আসলে এজন্য তাদের সন্মানের চক্ষেই দেখে, তাদের হাতেই কলের পুতুলের মত নাচে। দেশের উপর, প্রতিজীবনের উপর স্ত্রীলোকের কিরূপ influence এবং এই influence সমাজের পক্ষে কিরূপ আবশ্যক, কিরূপ হিতকর, এবং এর অভাবে আমরা এদেশে কিরূপ পশুজীবন বহন করি—সেদেশে না গেলে তা বোঝা যায়না।”
আমি। কিন্তু আমাদের দেশের লোক ত আর এদেশে স্ত্রীলোকদের সঙ্গে মেশে না। সেখানে গিয়ে সম্পূর্ণ নূতন রকম অবস্থায় পড়ে প্রথমটা তাদের কিরকম অবস্থা হয় না জানি?
ডাক্তার। অন্যের কিরূপ হয় জানিনে। আমার কথা আমি বলতে পারি। আমার বড় শোচনীয় অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। যে সামান্য ভাসতে পারে—তাকে যদি সরু দড়িতে বেঁধে মাঝগঙ্গায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাতে সে যেমন হাবু ডুবু খেতে খেতে তীরে ওঠে—এ ও আর কি অনেকটা সেই রকম ব্যাপার?
দিদি হাসিয়া বলিলেন—“কি রকম!”
ডাক্তার। না জানি তাদের চাল চলন, ধরণধারণ, আদব কায়দা, এমন কি ভাষা পর্য্যন্ত। আমরা শিখেছি বয়ের ভাষা;— ফিলজফি পড়েছি, সয়েন্স পড়েছি,হিষ্ট্রী পড়েছি, সে সম্বন্ধে কথা উঠলে বরঞ্চ একঘণ্টা বকে যেতে পারি; কিন্তু ছোট ছোট সেণ্টেন্সে, প্রশ্নের উপর উত্তরে, কথার উপর কথা ঘুরিয়ে, ইনিয়ে বিনিয়ে—রসিকতা করে গল্প চালান, তাত শিখিনি। স্ত্রীলোকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলে এমন nervous এমন awkward feel করতুম! কি কথা কব ভেবেই পেতুম না। শুধু তাই নয়, এত দিন দেশে ডিক্সনারী দেখে দেখে সামান্য একটা অ্যাকসেণ্টের বিশুদ্ধতা ধরে এত হেঙ্গাম করে যে ইংরাজি উচ্চারণ শিখেছি—তাতে দেখি লাভ হয়েছে এই যে, ইংরাজি মুখের ইংরাজি উচ্চারণ ভাল ক’রে সব বুঝতেই পারিনে। আর এক জ্বালা, থেকে থেকে শুনতে পাই—‘তুমি অমুককে cut করেছ—সে তোমাকে রাস্তায় nod করেছিল—তুমি টুপি ওঠাওনি।’ Good heavens! কে আমাকে কখন nod করলে! আমিত কিছুই দেখিনি। প্রতিদিন এই রকম excuse করতে করতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত। আসল কথা একে রাস্তার কোন দিক না দেখে চলাই আমার অভ্যাস—তাপর শাদা মুখগুলো সবই এমন একসা বলে মনে হয়-যে বিশেষ আলাপ পরিচয় না থাকলে এক আধবারের দেখা সাক্ষাতে মুখ চিনে নেওয়াই শক্ত। অন্য রকম বিপদু আবার আছে। দোকানে একপেনির একটা বো কিনতে গিয়ে, ঘরে ফিরে এসে টাকা মিলিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দেখি এক পেনির জায়গায়—অনুরোধের দায়ে ৫ পাউণ্ড খুইয়ে এসেছি। বেশ gracefully ‘না’ বলতে শেখাটা সেখানে বিশেষ আবশ্যক। নইলে আর বিপদের শেষ নেই। এই রকম প্রতিপদে কত পড়ে উঠে—তবে ষে সে দেশের মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়াতে শিখেছি—তা কি আর কহতব্য?
দিদি। শেষে আর কি, সব বিষয়েই খুব পাকা হয়ে উঠে ছিলেন?
ডাক্তার। তা ঠিক্ বলতে পারিনে,—আমার বাঙ্গালী বন্ধুরা শেষ পর্য্যন্ত আমাকে বলতেন-নেহাত কাঁচা।
ভগিনীপতি। তুমি দেখানে রমানাথকে কতদিন থেকে জানতে?
ডাক্তার। তিনি দেশে ফেরার অল্পদিন আগে মাত্র আমাদের একটি বন্ধুর বাড়ীতে তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ হয়।”
ভগিনীপতি। সত্যি কি সে engaged হয়েছিল?
ডাক্তার একটু খতমত খাইরা বলিলেন—“সেই রকম শুনেছিলুম বটে—কিন্তু আমি নিশ্চয়-but I am afraid it is not a fit subject for the dinner table!”
ভগিনীপতি তাঁহার সঙ্কোচ দেখিয়া বলিলেন, “you are right, let us keep it for some other time. I have certain reasons of course for asking you about him.”
সে কথা থামিল,—আমি বাঁচিলাম।
সে দিন আকাশে পূর্ণচাঁদ,—জ্যোৎস্নায় দিগদিগন্ত ভাসিয়া যাইতেছিল—আহারান্তে আমরা তাই ছাতে বসিলাম। দিদি বলিলেন—“ইংলণ্ডে ত আপনার সবই ভাল,—কিন্তু এমন চাঁদের আলো কি পেতেন?
ডাক্তার। সেটা rare ছিল বটে,—সেই জন্যই বোধ হয়— যখন জ্যোৎস্না ফুটত, বড় যেন বেশী সৌন্দর্য্য ছড়াত।”
দিদি। আপনি দেখছি—একবারে মজে গেছেন। ইংলণ্ডের সুন্দরীরাই ভাল আমরা জানতুম, আবার চাঁদের আলোও এদেশের চেয়ে বেশী সুন্দর? আপনি যে সেই চাঁদের দেশ থেকে তার অনন্ত আকর্ষণ এড়িয়ে ফিরেছেন—এ একটা পরমাশ্চর্য্য বলে মনে হচ্ছে!
তিনি তাঁহার কপোল প্রান্তের শ্মশ্রুগুচ্ছে অঙ্গুলি সঞ্চালিত করিয়া একটু হাসিয়া বলিলেন—“জানেন যে সংসারে আশ্চর্য্যই বেশী ঘটে! যেখানে সম্ভাবনা যত প্রবল সেখানে দেখবেন প্রায়ই নৈরাশ্য, আর যেখানে আপনি least সম্ভাবনা আছে ভাবছেন, least প্রত্যাশা করছেন—সেইখানেই দেখবেন তা ঘটছে।”
বলিতে বলিতে তিনি যেন চকিত নয়নে আমার দিকে চাহিলেন, জ্যোৎস্না বাহিত সেই নীরব দৃষ্টি হইতে কি এক অশ্রুতমধুর রব ধ্বনিত ছুইল, তাহার পুলক কম্পনে হৃদয়ের অন্তঃপুর স্তরে স্তরে কল্পিত আলোড়িত করিয়া সুদীর্ঘ নিশ্বাস উথলিত করিয়া তুলিল।