কিশোরদের মন/দশম পরিচ্ছেদ
কখন্ পূজোর ছুটি হয়ে গেছে।
তার পরের দিনগুলো ‘ছুটি’ গায়ে মেখে বেড়ালেও, তাদের, ছুটি যেন একটুও নেই। নানা রকমের ভিড়। নানা কাজের ভিড়।
পূজোর ধূমে সহর মাতিয়ে দিয়ে, অবশেষে পূজোর বাদ্য থেমে গেছে।
সহরের সদর পথে অনেক দূর ধরে’ নিরঞ্জনার প্রতিমার সঙ্গে বাজনার করুণ এলোমেলো সুর আর সহরের পাকা পথে আর চারধারের গ্রামের কাঁচা পথে হয় ত ঠিক তেমনি এলোমেলো যত লোক জনের সারি। বিকেল থেকেই, থেমে থেমে, নদীর দিকে ছুটেছে। বাজনার ঢোল যেন ঠিক সেই রূপকথার ঢোলের মতই বাজছে, তার একদিকে ঘা দিলে হাট বসে আর এক দিকে ঘা দিলে হাট ভেঙে যায়। বাজনার একদিকে সারাটি সহর যুড়ে’ উৎসবের সুর, আর তার আর একদিকের সুর বিসর্জ্জনের মলিন বিষাদে আঁকা!
দূরে নদীর বুকের উপরের আতস বাজির গলে’ পড়া আলো একটু একটু দেখা গেল। কত হাজার হাজার চোক কত দিক থেকে যে ওকেই দেখ্ছে।
রাত্রি আটটার পর থেকেই কোলাকুলি সুরু হয়ে গেছে।
মাকে, পিসীমাকে প্রণাম করে,’ বড় রাস্তায় এসে উঠে, বিমল একবার মনে করলে,
আবার থানার রাস্তা পর্য্যন্ত এসে, আবার ফিরে গেল।
গিয়ে মার কাছে বসে’ রইল।
মার মনে বিমলের নূতন ভাই বোন্দের যে মধুর ছবিখানি লেখা হয়ে ছিল, রোগের দারুণ যন্ত্রণাতেও তা মোছেনি একটুকুও। সহরে এসেই মা বলেছিলেন,
“তাদের নিয়ে আস্বি, বিমল!”
বিমল বললে,—“আন্ব ত মা, আন্ব; একটু আগে, তুই, ভাল হয়ে নে না মা!”
কিন্তু বলেই, বিমল, আর মার মুখের দিকে চেয়ে থাক্তে পার্ত না, চোখ দুটোকে নিয়ে, অন্য একদিকে চেয়ে থাক্ত।
বোধ হত, সেখানেই কি দেখ্ছে খুব!
প্রায় ক’দিন পর পরই মা বল্তেন,—“আমি ত অনেক ভালো হচ্ছি বিমল, ওদের কবে আন্ছিস্?”
বিমল থতমত খেত। আর বল্ত—“দাঁড়া মা, আগে তোর নতুন অষুদটা খাওয়ার দিন ক’টা যাক্।”
বলে’ বিমল দোরের ফাঁক দিয়ে দূরে যে তাল গাছটা দেখা যাচ্ছিল সেইটের দিকেই থাক্ত চেয়ে। কিন্তু হয় ত সে, তালগাছ-টাই দেখ্ছে না।
দেখ্ছে না সে কিছুই হয় ত, অনেকক্ষণ।
এদিকে অষুদ খাওয়ার সেই দিন ক’টা যেতে যেতে পূজো শেষ হয়ে গেল। বিজয়া শেষ হতে যাচ্ছে। আগের চাইতে মা অনেক ভাল হয়েছেন।
অষুদও বদ্লে গেছে আজ দু’দিন