কিশোরদের মন/পঞ্চম পরিচ্ছেদ
আর আর বারে ছুটি ত কোথা দিয়ে পালিয়ে যায়, এবারে যেন ফুরুচ্ছেই না। আর মার গঙ্গাস্নানের যোগটাও আস্ছে না।
যা হ’ক গ্রামে বারোয়ারি কালীপূজো নিয়ে বিমল মেতে রয়েছে কদিন খুব। শৈলেন্, নরেন্, চারু, ক্ষিতীশ পাড়ার সব ছেলেদের সঙ্গে সারাদিন উৎসাহে বেজায় সে খেটেছে।
মোড়ল সে-ই।
তা’পর সন্ধ্যেয় আরতি দেখ্তে গিয়েছে সকলে।
অনেক ছেলেমেয়েরা এসেছে। আরতির ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে ওধারের ছেলেদের মুখ আব্ছা আব্ছা দেখাচ্ছে। কিন্তু যারা রংমশাল জ্বালিয়েছে তাদের আর তাদের কাছের ছেলে মেয়েদের মুখ এমন সুন্দরটি হয়ে উঠেছে, যে, দেখে বিমলের শুধু মনে হচ্ছিল যে ওরা সব ক’টি রেণু আর মণ্টু।
আর বিমলদের সারিতেই যারা এসে দাঁড়িয়েছে একটু ফিট্ফাট্ পোষাকে, আলো আর ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে বিমলের তাদের মনে হচ্ছিল যে, যেন সুবিনয়ই এসে দাঁড়িয়েছে—তাদের পাশে পূজোর মণ্ডপে!
কাঁসর আর শাঁখের সুরের সঙ্গে তার মনের সুরও যেন ফেটে যাচ্ছিল, আনন্দে চেঁচিয়ে মনের ভিতরে!
কিন্তু সে চুপ করে’ করে’ চেয়ে থাক্ছিল রঙে-ঘামানো সুন্দর প্রতিমার দিকে।
একদিন শৈলেনরা এরপরে মাছ ধর্তে গিয়েছে। তার সেই প্রকাণ্ড ছিপ্টা সঙ্গে; বিমলও। কতক্ষণ পরে পকেট থেকে একখানা খাম—আর তার ভিতর থেকে কাগজ, দ্রৌপদীর বস্ত্রের মতই, একটার পর একটা,—বের করে’ বিমল বল্লে, “এই দ্যাখ্ চিঠি।”—
তারা দেখ্লে,—কি সুন্দর সুবিনয়ের হাতের লেখাটি!
আর বিমল বল্লে,—“আর যে দেখ্ছিস্ হাঁসের ডিমের মত গোল গোল অক্ষরগুলো, এইগুলো রেণুর। আর এই যে বকের পা আকার মত জোরালো জোরালো অক্ষর, এই গুলো মণ্টুর।”
তারপর ছুটি ফুরোলো।
ছুটি ফুরোলে, ফের্বার সময় মা দুটো জামা তয়ের করে দিয়েছেন বিমলকে।
তবু সেই আগেকার জামাটা সে কিছুতেই ফেল্বে না।
বল্লে, “দ্যাখ্ মা, ওখানটায় পেছনের দিকে আর একটা পকেট রাখ্লে কেমন হয়?
সেই পকেটে, ওরা সব খেলার জিনিষ ফেলে দেবে, আর,—কী খুসীই হবে!
আমি তখন ওদের তোমার কথা বল্ব মা!”
শুনে’ মা ত হেসেই সারা।