কিশোরদের মন/প্রথম পরিচ্ছেদ
কিশোরদের মন
এই লেখায় এই অংশে একটি চিত্র থাকা উচিৎ। যদি আপনি তা দিতে পারেন, তবে, দয়া করে সাহায্য:চিত্র দেখুন। |
হাই ইস্কুল
ক্লাসের যেখানটাতে বস্ত সুবিনয়, বিমল বস্ত ঠিক তারি পেছনের বেঞ্চে।
থার্ড ক্লাস্। এই ক্লাসে পড়াশুনার তেমন চাড়্ নেই। ছেলেরা, এই ক্লাসে একটু জিরিয়ে নেয়।
ফার্ষ্ট ছেলে ছিল না বটে সুবিনয়, কিন্তু, মাষ্টার মহাশয়ের ডান দিকের ফার্ষ্ট সীটেই সে বস্ত।
জজের ছেলে সে। পড়াশুনায় ইংরেজিটা সে খুব ভালো জান্ত।
একদিন, ইংলিশের ঘণ্টা; ইংরেজি পড়া হতে হতে, একটা প্রশ্নের উত্তর সুবিনয় ঠিকমত দিতে পার্লে না। হেড্মাষ্টার মহাশয় তার পেছনের ছেলেটিকেই প্রশ্নটা আবার জিজ্ঞেস্ কর্লেন।
বিমল উঠে উত্তরটা দিলে।
উত্তরটা এত সুন্দর হ’ল যে, ক্লাসশুদ্ধ সব ছেলে বিমলের দিকে প্রশংসার দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।
সুবিনয়ের মুখচোক ঘেমে উঠ্ল। কিন্তু, ঘণ্টা শেষ হয়ে গেলে, সেই দিনই সে বিমলের সঙ্গে ভাব কর্লে।
টিফিনের সময়টা যে আজ কেটে গেল কোথা দিয়ে, কেউ যেন তা টের পেল না!
পরদিন সুবিনয়, বিমল, ঠিক পাশাপাশি বসত।
ক্লাসের সেরা ছেলেরা আর মাঝারি ছেলেরা, সকলেই বুঝ্তে পার্লে, আর আর আওয়ারে যদিও ওরা fox কি cow (—যার মানে coward), কি আর কিছু, কিন্তু ইংরেজির ঘণ্টায় ওরা দুজনেই lion.
Fox ভাব্বার একটা কারণ ছিল। সেটা এই যে, বিমল ছিল ক্লাসের মধ্যে নামজাদা চঞ্চল ছেলে। যদিও অল্পদিন সে এসে ভর্ত্তি হয়েছে।
আর তেম্নি, সুবিনয় ছিল ক্লাসে বিখ্যাত দাতা ছেলে। ছুরিটে, পেন্সিল্টে, বইটে, খেলার কি পিক্নিকের চাঁদা, এ তার কাছে একবার চাইলেই হ’ত।
এই জন্যে ছেলেরা তার ‘কামধেনু’ বা ক্লাসের cow নাম দিয়েছিল।
আর বোর্ডে যেতে সে ভয় পেত বলে’ তার coward নামটা যে তারা দিয়েছিল, তা যে একেবারেই খাট্ত না, তাও নয়।
বিমলের ছিল এক অদ্ভুত বেশ। সে একটা ছেঁড়া পাঞ্জাবি গায় দিয়েই প্রায় আস্ত। পাঞ্জাবিটার পিঠের মাঝখানে, India-র ম্যাপের মত খানিকটে জায়গা কি করে’ উড়ে গিয়েছিল। এই জন্যে হরেন্ তাকে ডাক্ত—‘দেশী জিওগ্রাফি’।
পাঞ্জাবিটে ছেঁড়া হলেও, খুব পরিষ্কার থাক্ত। বোধ হয় যে, রোজ সে সাবানে কাচ্তো।
কেন যে সেটাকে সে ছাড়্ত না কি সারাত না, তা কেউ বুঝ্তে পার্ত না। জিজ্ঞেস্ কর্লে বল্ত—“বেশি ভাল জামা গায় দিতে গেলে বিলাসিতা হবে। আর, জামাটা ত এই শরীরের ঘর, ওতে একটা জান্লা থাকা ভালো।”
আসলে, ঐ পাঞ্জাবিটে ওর মা’র হাতের তয়েরি। ওটা গায় না দিলে ওর ভালো লাগে না। আর ছেঁড়া জায়গাটা যদি সারাতেই হয়, ত বাড়ী গিয়ে সে মা’র হাতেই সারাবে! দরজীর হাত ওতে দিতে দেবে,—সে, বিমল নয়।