খুনী কে/তৃতীয় পরিচ্ছেদ

তৃতীয় পরিচ্ছেদ।

 ভবানীপ্রসাদ প্রস্থান করিলে পর, লালমোহন আমার দিকে চাহিয়া ঈষৎ হাস্য করিলেন। বলিলেন, “এমন করিয়া লোককে বৃথা আশা দেওয়া আপনার ন্যায় জ্ঞানবান্ ব্যক্তির উচিত হয় নাই। আপনি যখন স্পষ্টই দেখিতেছেন যে, যতীন্দ্রনাথই দোষী, এবং তাঁহার আর অব্যাহতির উপায় নাই, তখন তাঁহার একজন প্রিয় বন্ধু ও আত্মীয়কে সান্ত্বনা দিবার জন্য মিথ্যা বলা ভাল হইয়াছে কি?”

 লালমোহনের কথা শুনিয়া আমার বড় রাগ হইল। কিন্তু তাহা প্রকাশ না করিয়া হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করিলাম, “কে বলিল, আমি যতীন্দ্রনাথকে দোষী বলিয়া সাব্যস্ত করিয়াছি? যদি তাহাই করিব, তবে আর এতদূরে কি করিতে আসিয়াছি? আমি তাঁহার মুক্তির উপায় দেখিতে পাইয়াছি এবং আশা করি, শীঘ্রই তাঁহাকে মুক্ত করিব। এখন আমাকে একবার তাঁহার সহিত দেখা করাইয়া দিউন।”

 যতীন্দ্রনাথ থানাতেই ছিলেন, তাঁহাকেও ঐ অফিসের মধ্যে আনাইয়া অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলাম। তখন লালমোহন বাবু অফিসঘরে ছিলেন না। তাঁহার অসাক্ষাতে যদি কোন নূতন কথা আমাকে বলে, এই বিবেচনা করিয়া, লালমোহন বাবুকে সেই সময় একটু বাহিরে থাকিতে বলিয়াছিলাম, কিন্তু তাঁহার নিকট হইতে আর অধিক কিছু শুনিতে পাই নাই। তিনি যেরূপ পূর্ব্বে বলিয়াছিলেন, এখনও সেইরূপ বলিলেন। আমি এক-একবার মনে করিতাম, তিনি বোধহয় হত্যাকারীকে জানেন এবং তাহাকে গোপন করিবার চেষ্টায় আছেন। কিন্তু তাঁহার কথা শুনিয়া আমার সে ভ্রম দূর হইল। ইহার কিছুক্ষণ পরে লালমোহন বাবু আসিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,—“যতীন্দ্রনাথ অমন সুন্দরী জমীদার-কন্যাকে বিবাহ করিতে অসম্মত কেন, জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন?”

 আ। হাঁ—তাঁহার অস্বীকারের বিশেষ কারণ আছে।

 লা। কি?

 আ। যতীন্দ্রনাথ কলিকাতার কোন দরিদ্রের রূপসী কন্যার রূপে মুগ্ধ হইয়া তাহাকে বিবাহ করিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছেন।

 লা। অমলাও ত বেশ সুন্দরী শুনিয়াছি?

 আমি হাসিয়া বলিলাম, “সুন্দরী সকলেই। যে যাহার চক্ষে যেমনটী দেখায়। তোমার চক্ষে তোমার স্ত্রী যেমন সুন্দরী, তেমনটী কি আর কেহ হইতে পারিবে?”

 লা। সে কথা যাউক, এখন আমাকে কি করিতে হইবে বলুন?

 আ। ডাক্তারের পোষ্ট মরটমের রিপোর্ট পাইয়াছেন কি?

 লা। পাইয়াছি।

 আ। সেখানি কোথায়?

 লা। আমার নিকটই আছে। এই বলিয়া কাগজখানি বাক্সের মধ্য হইতে বাহির করিয়া আমার হস্তে প্রদান করিলেন। উহা পড়িয়া আমি বুঝিতে পারিলাম, দামোদরের মাথার খুলির যে অংশ ফাটিয়া গিয়াছে, তাহাতে বােধ হয়, কোন লােক পশ্চাৎ হইতে আসিয়া দামােদরকে আঘাত করিয়াছিল।

 লালমােহন বাবু পরিশেষে আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “যদি বাস্তবিকই যতীন্দ্রনাথ কাহাকেও বিবাহ করিতে অঙ্গীকার করিয়া থাকেন, তবে তিনি সে কথা তাঁহার পিতাকে বলেন নাই কেন?”

 আ। সে কথা তাঁহার পিতা জানিতে পারিলে তাঁহাকে বাটী হইতে দূর করিয়া দিতেন।

 লা। এখন আপনি কি মনে করেন? যতীন্দ্র দোষী কি না?

 আ। আমার বিশ্বাস—নির্দ্দোষী।

 লা। তবে দামোদরকে কে হত্যা করিল? খুনী কে?

 আ। সেইটীই ত বিষম সমস্যা।