খুনী কে/পঞ্চম পরিচ্ছেদ

পঞ্চম পরিচ্ছেদ।

 থানায় ফিরিয়া আসিয়া আমি স্নানাহার সমাপন করিলাম। পরে বিশ্রামার্থ নির্দ্দিষ্ট গৃহে উপস্থিত হইলাম।

 ক্ষণকাল বিশ্রামের পর আমি লালমোহনকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “দামোদর মৃত্যুর পূর্ব্বে যে কথা বলিয়াছিল, তাহার কোন অর্থ বুঝিয়াছেন?

 লালমোহন উত্তর করিলেন, “না—আমি সে কথা ভুলিয়া গিয়াছিলাম, কথাটা বড় অস্পষ্ট।”

 আ। অস্পষ্ট হইলেও তাহার অর্থ আছে।

 লা। কি বলুন দেখি?

 আ। দামোদর কি বলিয়াছিল, মনে আছে?

 লা। “আম সদ্দা” না কি ঐ রকম একটা কথা বলিয়াছিল।

 আ। ঠিক বলিয়াছেন। কিন্তু আপনি উহার কোন অর্থ বুঝিতে পারেন নাই?

 লা। না।

 আ। রাম সর্দ্দার।

 লা। সে কে?

 আ। সেই খুনী। দামোদর বলিতে ইচ্ছা করিয়াছিল, রাম সর্দ্দার আমায় খুন করিয়াছে, কিন্তু সকল কথা স্পষ্টরূপে প্রকাশ করিতে পারে নাই।

 লা। রাম সর্দ্দার কে? তাহার বাসই বা কোথায়?

 আ। সে কথা পরে হইবে। এখন আর একটা কথা, হত্যাকারী যে পথ দিয়া জলার ধারে গিয়াছিল, তাহাতে বোধ হয়, সে এখানকার একজন পাকা লোক। অনেকদিন হইতে সে এখানে বসবাস করিয়া আসিতেছে।

 লা। ঠিক বলিয়াছেন। কিন্তু আপনি হত্যাকারীর আকৃতি জানিলেন কিরূপে? তাহার, আকৃতি যে দীর্ঘ, তাহা কেমন করিয়া জানিলেন?

 আ। কেন? দুইটা পদচিহ্নের মধ্যবর্ত্তী স্থান দেখিয়া। যে যত লম্বা হয়, সে তত লম্বা লম্বা পা ফেলিয়া থাকে।

 লা। সে যে খোঁড়া, কিরূপে জানিলেন?

 আ। পায়ের দাগ দেখিয়া। এক পায়ের দাগ যত স্পষ্ট অপর পায়ের দাগ তত নয়। সে একপায়ে বেশী জোর দিয়া চলে। কাজেই সে খোঁড়া।

 লা। আর তাহার ডান হাতের জোর নাই, এ কথা কেমন করিয়া জানিলেন?

 আ। দামোদরের মাথায় যেখানে যেরূপ ভাবে আঘাত লাগিয়াছে, তাহা ডানহাতে মারিলে ওরূপ ধরণের জখম হইত না। হত্যাকারী যে নিশ্চয়ই বামহস্তে পশ্চাৎ দিক হইতে আঘাত করিয়াছে, তাহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হইতেছে। এ কথা পরে দেখিবেন ডাক্তারের সাক্ষাতেই প্রমাণিত হইবে।

 আমার কথা শুনিয়া, লালমোহনের মুখ প্রসন্ন হইল। তিনি হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “আমরা একই জায়গায় একই রকম জিনিষ ও দাগ দেখিয়া আসিলাম। কিন্তু আমি চক্ষু থাকিতেও অন্ধ; দেখার মত দেখিতে পারিলাম না। আপনি যে একজন নিরীহ ব্যক্তির জীবন রক্ষা করিতে পারিবেন, ইহাই আপনার যথেষ্ট পুরস্কার। অন্য কোন পুরস্কার আপনার যোগ্য হইতে পারে না।”

 আমি এখন লালমোহনের কথায় আন্তরিক আনন্দিত হইলাম। আত্মপ্রশংসায় নহে, তাঁহার একটী কথা আমার প্রাণে লাগিয়াছিল। আমি একজন নির্দ্দোষী লোকের জীবন রক্ষা করিয়া যে, পুরস্কার লাভ করিলাম, অন্য কোন পুরস্কার তাহার তুলনায় বাস্তবিকই তুচ্ছ বলিয়া বোধ হইল। খানিক পরে বলিলাম, “দারোগা বাবু। এখন একবার চলুন, শেষ কাজটা সারিয়া ফেলি।”