গল্পস্বল্প/পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।

 পরিষ্কার জল বাতাস পাওয়া সর্ব্বদা স্বায়ত্ব নহে, কিন্তু নিজের দেহ এবং নিজের ঘরদ্বার বস্ত্রাদি পরিষ্কার রাখা সম্পূর্ণই আমাদের নিজের উপর নির্ভর করে। স্নান, অঙ্গ প্রক্ষালনাদি অনেক বিষয়ে হিন্দুজাতিগণ যেমন অন্য জাতিদিগের আদর্শস্বরূপ, তেমনি আর কতকগুলি পরিষ্করণীয় বিষয়ে তাঁহাদিগকে অমনোযোগী দেখা যায়। যেমন, প্রতিদিন আমরা স্নান করি বটে, কিন্তু তৈল মাখিবার পর উত্তমরূপে অঙ্গ মার্জ্জনা করিনা। প্রতিদিন আমরা জলকাচা বস্ত্র পরি বটে, কিন্তু ময়লা কাপড় পরিতে, ময়লা বিছানায় শুইতে, আমরা তেমন কষ্ট অনুভব করি না। দুই বেলা আমাদের গৃহে ঝাঁট পড়ে সত্য, কিন্তু তথাপি আমাদের গৃহ ঠিক পরিষ্কার নহে। একটা ভাত ঘরে পড়িলে আমাদের গৃহের ছাল উঠিয়া যায়, কিন্তু অনেক সময় ঘরের মধ্যে থুথু কাশী ফেলিতে আমাদের আপত্তি হয় না। প্রদীপের তেলে তেলে গৃহের কোন কোন স্থান একবারে আটা হইয়া যায়। আর জিনিস পত্র এমন অসজ্জিত ভাবে গৃহের যেখানে সেখানে ফেলা ছড়া থাকে যে ঘর গুলা অনেক সময় আস্তাকুঁড়ের দশা প্রাপ্ত হয়।

 এই সকল বিষয়েও যাহাতে পরিষ্কার ভাবের ব্যত্যয় না হয় তাহার প্রতি দৃষ্টি রাখাও আমাদের একান্ত কর্ত্তব্য।

 তেলমাখা শরীরের পক্ষে উপকারক কিন্তু তেল মাখিয়া সাবান অথবা বেশন দ্বারা উত্তমরূপে গাত্র মার্জ্জনা করা স্বাস্থ্যের জন্য অতীব আবশ্যক।

 রজকের দোষে অর্থাৎ ধোপা বস্তু ধৌত করিয়া আনিতে সাধারণতঃ বহু বিলম্ব করায়, প্রায়ই বাধ্য হইয়া আমাদিগকে ময়লা কাপড় পরিধান করিতে হয়। কিন্তু এরূপ অবস্থায় সাজিমাট দিয়া ঘরে সহজেই বস্ত্রাদি পরিষ্কার করিয়া লওয়া যাইতে পারে। ময়লার প্রতি আন্তরিক বিতৃষ্ণার উদ্রেক হইলে অবশ্যই এই উপায় অবলম্বিত হইবে সন্দেহ নাই।

 ঘর দ্বার কেবল সম্মার্জনী-মার্জ্জনা ব্যতীত যাহাতে পরিপাটীরূপে সজ্জিত থাকে তাহার দিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। অতি অল্প পরিশ্রমেই ইহা সম্পন্ন হইতে পারে। জিনিষপত্রগুলি যথাস্থানে সন্নিবেশিত ও ঘরের কোলঙ্গায় বা টেবিলে দুই একটি ফুলদানীর উপর দুই চারটি ফুল রাখিলে ঘরটি কেমন সুবিন্যস্ত ও নয়নপ্রীতিকর হয়। বারান্দায়, উঠানে অল্প স্বল্প ফুলের টব সাজাইয়া রাখিলে কেমন সুন্দর দেখিতে হয়। এইরূপ গৃহসজ্জায় আমাদের নয়ন ও মনের পরিতৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য্য-জ্ঞান এবং সুরুচিরও উৎকর্ষ লাভ হয়। বলা বাহুল্য, সৌন্দর্য্য-জ্ঞান আমাদের যত বাড়িবে পরিষ্কারভাবের প্রতিও তত আমাদের লক্ষ্য বাড়িবে। এখন আমরা যেরূপময়লার মধ্যে বিনাকষ্টে থাকিতে পারি—তখন তাহা কষ্টকর জ্ঞান করিয়া আপনা হইতেই পরিত্যাগ করিব এবং উক্তরূপ পরিচ্ছন্নতায় আমাদের শরীর মন উভয়েই স্ফূর্ত্তি সাধন হইবে। সুতরাং সর্ব্বতোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকিবার দিকে আমাদের সকলেরই—বিশেষতঃ আমাদের স্ত্রীলোকদিগের বিশেষ লক্ষ্য রাখা কর্ত্তব্য। গৃহিণীগণ উক্তরূপ পরিষ্কৃতি এবং গৃহ পারিপাট্যের আবশ্যকতা বুঝিলেই তাহা সুচারুরূপে সাধিত হইতে পারিবে।