গ্রাম্য উপাখ্যান/বাদল গ্রামের ভৌগোলিক বিবরণ

বাদল গ্রামের ভৌগোলিক বিবরণ।

 কোন বিখ্যাত শিক্ষক বলিয়াছেন যে বালকদিগকে প্রথম ভূগোল এই প্রকারে শিক্ষা দেওয়া উচিত; প্রথমে যে গ্রামে সে বসতি করে সেই গ্রামের চতুঃসীমা, তৎপরে যে জেলায় সে গ্রাম সংস্থিত, তৎপরে যে প্রদেশে ঐ জেলা অবস্থিত, তৎপরে যে দেশে ঐ প্রদেশ অবস্থিত, তৎপরে যে মহাদেশে ঐ দেশ অবস্থিত তাহার, এবং তৎপরে সাধারণতঃ পৃথিবীর ভৌগোলিক বিবরণ, তৎপরে সৌরজগতের বিবরণ, এবং সর্ব্বশেষে সমস্ত বিশ্বের সাধারণ বিবরণ শিখান কর্ত্তব্য। এইরূপে বালকের ভৌগোলিক বুদ্ধি ক্রমে ক্রমে বিকশিত করিয়া দেওয়া কর্ত্তব্য। যদ্যপিও উক্ত শিক্ষক বালকের ভৌগোলিক বুদ্ধি বিকশিত করিবার চোটে (যেমন আমরা বলিয়া থাকি মুখস্য চোটাৎ কিম্বা কলমস্য চোটাৎ) ভূগোলের সীমা অতিক্রম করিয়াছেন তথাপি বালককে ভূগোল শিক্ষা দিবার বিষয়ে অনেক পরিমাণে তাঁহার উপদেশ অনুসরণ করা কর্ত্তব্য। আমরা বাল্যকালে এই প্রণালী অনুসারে ভূগোল বিদ্যায় শিক্ষিত হই নাই, কিন্তু শিক্ষকের বিনা উপদেশে আমরা আপনা হইতেই ঐ প্রণালী কিয়ৎ পরিমাণে অনুসরণ করিয়াছিলাম। আমরা ভূগোল শিখিবার প্রথম অবস্থায় আমাদিগের নিজ গ্রামের অর্থাৎ বাদল গ্রামের চতুঃসীমা জানিতে বিশেষ কৌতুহল প্রকাশ করিয়াছিলাম। পাঠকবর্গকে আমরা উহার চতুঃসীমার বিবরণ দিবার সময় কিয়ৎপরিমাণে ছেঁদো কথা ব্যবহার করিব। সভ্যতার প্রধান লক্ষণ ছেঁদো কথা ব্যবহার করা। বিখ্যাত ফরাসীস রাজনীতিজ্ঞ টেলি রাঁ (ফরাসীস্ ভাষায় চন্দ্রবিন্দুর ছড়াছড়ি) বলিয়াছেন যে আমাদের মনের ভাব গোপন করিবার জন্যেই ভাষা সৃষ্ট হইয়াছে। তবে বঙ্গদেশ এখনও সম্পূর্ণরূপে সভ্য হয় নাই,অর্দ্ধসভ্য হইয়াছে; অতএব আমরা বাদল গ্রামের চতুঃসীমার বিবরণ অর্দ্ধেক ছেঁদো কথায় এবং অর্দ্ধেক সাদা কথায় দিব। বাদল গ্রামের পূর্ব্ব-পশ্চিম সীমা ছেঁদো কথায় এবং উত্তর দক্ষিণ সীমা সাদা কথায় বলিব। বাদল গ্রামের পশ্চিম দিকে সঙ্গীত-নায়ক রাজশ্রী শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের বাহুলীন যন্ত্র অপর ভাষায় যে নাম দ্বারা প্রকাশ হয় সেই নামের গ্রাম। উহার পূর্ব্ব দিকে গড়াই গ্রাম। পাঠকবর্গ মনে করিবেন না যে ঐ স্থানটী গড়ানে বলিয়া ঐ গ্রামের নাম গড়াই হইয়াছে। ছেঁদো কথার প্রণালী অনুসারে উহা গড়াই শব্দে আমরা নির্দ্দেশ করিলাম। বাদলগ্রামের উত্তরে ব্রহ্মপুর ও কামডৌরি গ্রাম কায়স্থ-কৌস্তুভ-প্রণেতা রাজনারায়ণ মিত্র যিনি এমন পুরাতত্ত্বানুসন্ধায়ী ছিলেন যে তাঁহার নিকট আমাদিগের বান্ধববর শ্রীমান্ রাজেন্দ্রলাল মিত্র (আমরা লোককে উপাধি প্রদানে প্রথমোক্ত মিত্র মহাশয়ের প্রণালী অনুসরণ করিয়া থাকি।) কোথায় আছেন! তিনি এই কথা বলেন যে কামডৌরি গ্রামে বিখ্যাত সেনবংশীয় রাজা শ্রীমান্ সুযোগ্য সেনের কামোদ্রেক নামক রমণীয় উদ্যান ছিল। তাহাতেই কামডৌরী নাম হইয়াছে। বাদল গ্রামের দক্ষিণ দিকে নোনা ও বনহুগলী গ্রাম। পাঠকবর্গ নোনা গ্রাম নাম শুনিলেই ঐ নাম আতার মাসতুত ভাই নোনার নাম হইতে উৎপন্ন হইয়াছে এমত অবশ্য‍ই নির্দ্দেশ করিবেন। কিন্তু বনহুগলী নামের উৎপত্তি কোথা হইতে হইল তাহা আমরা এপর্যন্ত অবধারণ করিতে সক্ষম হই নাই। হুগলী সহরে বন নাই, বনহুগলী বনাকীর্ণ স্থান এই জন্য বনহুগলী নাম হইয়াছে, কি অন্য কারণে হইয়াছে তাহা আমরা বলিতে পারি না। এবিষয় নির্দ্ধারণ করিবার জন্য পুরাতত্ত্বানুসন্ধায়ীদিগের একটা মহাসভা হওয়া কর্ত্তব্য। বাদল গ্রামের উত্তর সীমায় দিঘি নামক প্রকাণ্ড সরোবর সংস্থিত। বাদল গ্রামে যদিও অন্যান্য দিঘি আছে, যথা রায় দিঘি, কিন্তু এই দিঘিটি সর্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ বলিয়া কেবল দিঘি নামে খ্যাত, যেমন ইংরাজীতে বলে “The দিঘি”। এই দিঘি এক্ষণে অনেকটা মজিয়া গিয়াছে। আমাদিগের স্মরণ হয় আমাদিগের বাল্যকালে উহা অসংখ্য শতদল-শোভিত অতি বিস্তীর্ণ সরোবর ছিল। মধ্যস্থানে খানিকটা জায়গায় পদ্ম দেখা যাইত না। জলের গভীরতা জন্য তৎস্থানে পদ্ম জন্মিত না। লোকে বলে যে ঐ স্থানে জলের নিম্নে একটা মন্দির আছে। দুর্গামোহন মুখোপাধ্যায় পাড়ার কতিপয় বালককে টটাটিটি ইংরাজী শিখাইবার জন্য স্কুলমাষ্টার নামে খ্যাত ছিলেন। তিনি যেমন স্কুলমাষ্টার ছিলেন তেমনি জেলে ও ছিলেন। মাছ ধরিতে তিনি বড় ভাল বাসিতেন। তিনি এই দুই পরস্পর অসম বৃত্তি আপনাতে সংযোগ করিয়ছিলেন। ইনি একবার আমাদিগকে বলিয়াছিলেন যে তিনি একবার ডোঙ্গা করিয়া ঐ দিঘির মধ্যস্থানে কেঁচা দিয়া যেমন মাছ বিদ্ধ করিতে যাইবেন অমনি কেঁচার অগ্রভাগ সেই মন্দিরের ছাদের উপর ঠন্ করিয়া লাগিয়াছিল। ঐ দিঘির এক দিকের উপকূলে জঙ্গল মধ্যে ত্রিপুরা সুন্দরীর মঠ নামে একটী মন্দির ছিল। এক্ষণে তাহার ভগ্নাবশেষ অতি অল্পই আছে। দিঘির উত্তরে একটী নীলকুঠি ছিল। এই নীলকুঠির সাহেবের সহিত বাদলগ্রামের লোকের একবার বিবাদ হয় তাহাতে নীলকুঠির সাহেব অশ্বারূঢ় হইয়া নিজ সৈন্য সামন্ত লইয়া বাদল গ্রাম আক্রমণ করেন, তাহাতে বাদল গ্রামের লোকেরা তাঁহাকে উত্তম মাধ্যম দেয়। মার খাইয়া সাহেবের পো ভূমিসাৎ হয়েন এবং তাঁহার নাক্ দিয়া ভল ভল করিয়া রক্ত বাহির হয়। আমাদিগের যৌবনকালে হেনসন্ নামে এক সাহেব এই কুঠির কর্ত্তা ছিলেন। তাঁহার সহিত এক দিন কথোপকথনের সময় ইংলণ্ডের লর্ডদিগের কথা উঠিলে তিনি বলিলেন “The Lords of England are bloody cut-throats” অর্থাৎ ইংলণ্ডের লর্ডেরা ভয়ানক নর-হন্তা। ইহাতে ইংলণ্ডের জমীদার ও প্রজার মধ্যে কি সদ্ভাব তাহা বিলক্ষণ অনুভব করা যাইতেছে। নীলের কারখানায় লোকসান হওয়াতে নীলকুঠির মালিক নীলকুঠি পরিত্যাগ করেন। এই নীলকুঠি পরিত্যক্ত হইলে সন্ধ্যার সময় তাহার ছাদের উপর বসিয়া আমরা পদ্মসুরভিসংযুক্ত সন্ধ্যার দক্ষিণ বায়ু সেবন করিতাম। ঐ পদ্মবন মধ্যে অনেক বিগ্‌ড়ি হাঁস সঞ্চারণ করিত। ঐ হাঁস মারিবার জন্য মধ্যে মধ্যে আমাদিগের বন্দুক ছুঁড়ার সংকল্প হইতে, কিন্তু বাঙ্গালী ছেলের শূরত্বসূচক সকল সংকল্পের ন্যায় তাহা কখন কার্য্যে পরিণত হয় নাই। গ্রামের মধ্যস্থলে ধ পুকুর নামে পুষ্করিণী আছে। “ধ পুকুর” শব্দ ধোবা পুষ্করিণীর সংক্ষেপ। গ্রামের অধিকাংশ লোকে অদ্যাপি তাহার জল ব্যবহার করে। ঐ পুষ্করিণীর উপকূল গ্রামের একটী বিখ্যাত স্থান, যে হেতু তথায় দু একটী গুরুতর ঘটনা ঘটিয়া গিয়াছে। ভারতবর্ষের পুরাবৃত্ত-লেখকেরা সেই সকল ঘটনা পুরাবৃত্তে তুলিতে ভুলিয়া গিয়াছেন, কিন্তু সেই সকল ঘটনা এমনি গুরুতর যে পুরাবৃত্তে উঠা কর্ত্তব্য। প্রথম ঘটনাটী এই; নিকটস্থ গ্রাম হইতে আগত একবার কোন বরযাত্রীর দলের লোকের সহিত গ্রামভাটী লইয়া বাদল গ্রামের লোকের এরূপ বচসা উপস্থিত হইয়াছিল যে তাহারা তাহাদিগকে মারিয়া বেদম্ করিয়াছিল এবং বরের পালকী ভাঙ্গিয়া পুষ্করিণীতে ফেলিয়া দিয়াছিল। বরকে পদব্রজে ভাবী শ্বশুরালয়ে যাইতে হইয়াছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটী এই;—গ্রামের নাগবংশীয় কোন মহাত্মা ব্যক্তির ধোবা পুষ্করিণীর তীরবাসী কোন ধোবার স্ত্রীর সহিত প্রসক্তি হওয়াতে ধোবার পাটের উপরে তাহাকে ফেলিয়া পাটে যেরূপ কাপড় আচড়ায় কুপিত স্বামী সেইরূপ তাহার শরীরের উপর কাপড় আচড়াইয়া তাহাকে মারিয়া ফেলিয়াছিল। ধোবা পুষ্করিণীর কিছু দক্ষিণে সরল নামে একটী বৃহৎ সরোবর আছে। সর শব্দে পুষ্করিণী বুঝায়। এই শব্দ হইতে, কিম্বা পুষ্করিণীটা সরল চতুষ্কোণাকৃতি এই জন্য উহার নাম সরল হইয়াছে কিনা তাহা পুরাতত্ত্ববিশারদ পণ্ডিতদিগের বিচারার্থ অর্পিত হইল। এই সরল পুষ্করিণীর উপকূলস্থ বনের ভিতর ককাইচণ্ডী নাম্নী দেবীর ক্ষুদ্র মন্দির আছে। দেবীর নাম ককাইচণ্ডী, তাহার কারণ এই যে তিনি সর্ব্বদা ককিয়া আছেন, অর্থাৎ জিব বাহির করিয়া আছেন। গ্রামের কোন ব্যক্তিকে কোন কারণ বশতঃ এক দিন দুপুর রাত্রে ঐ বনমধ্য দিয়া আসিতে হইয়াছিল। তৎপর দিন তিনি বলিলেন যে, তিনি উহার মধ্য দিয়া আসিতে আসিতে দেখিলেন যে, ককাইচণ্ডীর স্বামী মহাজটাজুটসমন্বিত কালভৈরব দুইটা জ্বলন্ত লৌহদণ্ড পরস্পর প্রতিঘাত করিয়া সহস্র সহস্র মহাস্ফুলিঙ্গ বাহির করিয়া বন আলোকিত করিতেছেন। ইউক্লিডের জ্যামিতির তত্ত্বে আমাদের যেরূপ ধ্রুব বিশ্বাস, আমরা তখন তাঁহার ঐ কথায় সেইরূপ বিশ্বাস করিয়াছিলাম।

 উপরে আমরা বাদল গ্রামের যে চতুঃসীমা এবং উহার অভ্যন্তরস্থ যে সকল স্থান বর্ণন করিলাম, সে চতুঃসীমার মধ্যে সেই সকল স্থানে বাল্যকালে আমরা কি আনন্দের সহিত সঞ্চরণ করিতাম। যে কালে কলার ছটায় শামুকের শাঁস বাঁধিয়া পুকুরে ফেলিয়া রামের পিতা দশরথ ধরিতাম এবং বাকসফুলের মধু পান করিয়া ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতাম তখন কি মনোহর কাল ছিল। সে কালে সকল বস্তু কি মনোহর বোধ হইত।

Oh! would I were a boy again
When life seemed formed of sunny years
And all the heart then know of pain
Was wept away in transient tears.
A time when meadow, grove and stream
The earth and every common sight
To me did seem
Apparelled in celestial light
The glory and freshness of a dream.

বালক হইতে পুনঃ চায় মোর মন
হর্ষদীপ্ত বর্ষময় যবে দেখাইত
মানবায়ু; যাহা কিছু হৃদয়-বেদন
বারেক অশ্রুবর্ষণে ধুইয়া যাইত।

যখন স্বর্গীয় জ্যোতিঃ পরিধান করি
সুস্বপ্নের নবীনতা ও দীপ্তি ধরি
ভাতিত প্রান্তর, কুঞ্জ, সামান্য তটিনী,
যৎসামান্য দৃশ্য আর সামান্য মেদিনী।

 আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি, যে এই কালে দশরথ ধরা ও বাকস পুষ্পের মধু পান করা প্রধান আমোদ ছিল। এতদ্ব্যতীত মাছ ধরা, ভিন্ন ভিন্ন উদ্যান হইতে কাঁচা আঁব সংগ্রহ করা এবং কড়াই সুঁটি–ক্ষেতে পড়িয়া কড়াই সুঁটি খাওয়া, এইরূপ আরও কয়েকটী আমোদ ছিল। মাছ ধরিবার জন্য আমরা কি আগ্রহের সহিত চার ও মসলা তৈয়ারি করিতাম এবং যখন মাছে ছিপের ফাতনা একবার ডুবাইত একবার উঠাইত তখন আমাদিগের স্পন্দমান হৃদয়ে কি উল্লাস উপস্থিত হইত। তাহার পর মৎস্য খেলান কি উল্লাসজনক তাহা বর্ণনা করা যায় না। যে সকল উদ্যান হইতে কাঁচা আঁব কিম্বা অন্য ফল সংগ্রহ করিতাম সে সকল উদ্যানের রক্ষকেরা আমাদিগকে বড় কিছু বলিতেন না। যে সকল কড়াই সুঁটির ক্ষেতে পড়িয়া আমরা কড়াই সুঁটি খাইতাম সে সকল ক্ষেতের কৃষকেরাও বড় কিছু বলিত না। কিন্তু উহার মধ্যে এক জন দুষ্ট কৃষক একবার “কে ও” বলিয়া তেড়ে আসাতে আমাদিগেয় দলস্থ ষণ্ডামার্ক বীর বালকেরা কড়াই সুঁটি লইয়া অনায়াসে চম্পট্ দিল, কিন্তু মাঝের পাড়ার বোসেদের বাটীর একটী বালক, যিনি স্কুল ছাড়িয়া সবে কলেজে ঢুকিয়াছেন এবং যিনি আমাদিগের মধ্যে অতি ধীর ও বিদ্বান বলিয়া খ্যাত ছিলেন, তিনিই কেবল ধরা পড়িলেন। কথাই আছে “বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা।” ফলের প্রতি বালকের লোভ চিরকাল প্রসিদ্ধই আছে। নরকুল যে বানরকুলসম্ভূত তাহার প্রমাণ সকলের মধ্যে এই সর্ব্বাপেক্ষা বিশিষ্ট প্রমাণটী ডারউইন সাহেব তাঁহার গ্রন্থে দেন নাই কেন আমরা বলিতে পারি না। সকল দেশের বালকেরাই উদ্যান লুণ্ঠনকারী বলিয়া প্রসিদ্ধ। সকল দেশের বালকদের একই প্রকার স্বভাব।

“Boys are boys all the world over”

আমাদের শাস্ত্রে একটা শ্লোক আছে তাহাতে শস্যের হানিকর ছয় প্রকার পদার্থের উল্লেখ আছে, তন্মধ্যে গঙ্গাপাল, মুষিক ও পক্ষীর উল্লেখ আছে। এই ছয় প্রকার পদার্থকে “ঈতি” বলে। কিন্তু বালকেরা প্রধান “ঈতি”; শ্লোক রচয়িতা কেন যে তাহাদিগকে নিজ শ্লোকে উল্লেখ করেন নাই আমরা বলিতে পারি না। তাহারাও “মুষিকাখগাঃর” মধ্যে। যখন এক ঝাঁক বালককে আমাদিগের উদ্যান আক্রমণ করিতে আসিতে দেখিতে পাই তখন আমরা বাটীর পরিজনকে বলি “মুষিকাখগাঃ” আসিতেছে হে, সাবধান। কেবল বালকেরা যে এ বিষয়ে দোষী এমন নহে, কোন কোন প্রৌঢ়কেও এবিষয়ে দোষী হইতে দেখা গিয়াছে। কবি Dryden বলেন

“Men are but children of larger growth”

“প্রৌঢ় বর্দ্ধিত বালক মাত্র।” আমরা জানি কোন বিভাগের কমিসনার সাহেব একবার মফঃস্বলে গস্তের সময় কোন কড়াই সুঁটি ক্ষেতে পড়িয়া কড়াই সুঁটি খাইতে দৃষ্ট হইয়াছিলেন। ক্ষেত্র স্বামী কৃষক তাঁহার এই আচরণের বিপক্ষে বলতে সাহেব তাহাকে কড়াই সুঁটির খোসা ফেলিয়া মারিতে লাগিলেন। কমিসনার সাহেব কৃষককে কড়াই সুঁটির খোসা ছুড়িয়া মারিতেছেন ইহার একটি উত্তম ছবি হইতে পারে।

 আমরা পরে বাদল গ্রামের এক একটী ব্যক্তির নক্‌সা পাঠকবর্গকে উপহার দিব। আমরা যাহা বলিব তাহা কিছুমাত্র অলীক নহে সকলই সত্য। কেবল কোন কারণ বশতঃ কোন কোন ব্যক্তির নামের কিঞ্চিৎ রূপান্তর করিয়া দিব। আমরা যে সকল ঘটনার বিবরণ দিব, তাহা চল্লিশ বৎসর অথবা তদধিক কাল পূর্ব্বে ঘটিয়া গিয়াছে।

 আমাদিগের কোন বন্ধু ইংরাজী Spiritualist শব্দ বাঙ্গালা “আত্মাওয়ালা” শব্দ দ্বারা অনুবাদ করেন। আমরা আত্মওয়ালাদিগের মধ্যে এক জন প্রধান। আমরা ভূত নামাইতে পারি। আপাততঃ পাঠকবর্গের সম্মুখে বাদল গ্রামের পূর্ব্বনিবাসীদিগের এক একটী প্রেতাত্মা নামাইয়া তাহার পরিচয় দিয়া তাহাকে বিদায় দিব।

"Come like shadows so depart.”
“ছায়া সম এস ছায়া সম যাও”