চরিতাবলী/মেডক্স
মেডক্স
এই ব্যক্তি লণ্ডননগরে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি অতি দুঃখীর সন্তান; অল্প বয়সেই পিতৃহীন ও মাতৃহীন হন। তাঁহার আত্মীয়েরা তাঁহাকে এই অভিপ্রায়ে এক রুটিওয়ালার দোকানে নিযুক্ত করিয়া দেন যে, তথায় থাকিয়া কর্ম্ম শিখিয়া, উত্তর কালে ঐ ব্যবসায় অবলম্বনপূর্বক, জীবিকা নির্বাহ করিতে পারিবেন। কিন্তু, লেখা পড়া শিখিবার নিমিত্ত তাঁহার আন্তরিক ইচ্ছা ছিল। পুস্তক পাইলেই, তিনি সকল কর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া পড়িতে বসিতেন। সুতরাং, তাঁহাকে রাখিয়া রুটিওয়ালার বিশেষ উপকার বোধ হইত না। তাঁহাকে পড়িতে দেখিলে, সে অতিশয় বিরক্ত হইত।
ফলতঃ উভয় পক্ষেরই অত্যন্ত অসুবিধা ঘটিয়া উঠিল। অবাধে মনের সাধে পড়িতে পাইতেন না বলিয়া, মেডকস মনে মনে অত্যন্ত বিরক্ত হইতেন; আর তিনি কর্ম্মের সময় কর্ম্ম না করিয়া পড়িতে বসিতেন, এজন্য রুটিওয়ালা তাঁহার উপর অত্যন্ত বিরক্ত হইত। পরিশেষে, রুটিওয়ালা তাঁহাকে দোকান হইতে তাড়াইয়া দিল। আত্মীয়েরা, লেখা পড়া বিষয়ে তাঁহার অসাধারণ যত্ন দেখিয়া, তাঁহাকে স্কটলণ্ডে পাঠাইলেন এবং এই অভিপ্রায়ে অবর্ডিন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত করিয়া দিলেন যে, যাহাতে উত্তর কালে পাদরির কর্ম্ম করিতে পারেন, তদুপযুক্ত বিদ্যা শিক্ষা করিবেন।
তথায়, কিছু দিন, তিনি উত্তম রূপে অধ্যয়ন করিলেন; কিন্তু, নানা কারণে বিরক্ত হইয়া, ঐ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়া দিয়া, ইংলণ্ডে ফিরিয়া আসিলেন; এবং লণ্ডনের বিশপ গিবনসের সহায়তায় কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইয়া, বিশিষ্টরূপ বিদ্যা উপার্জ্জন করিলেন। এই রূপে অভিলাষানুরূপ বিদ্যা লাভ করিয়া, মেডকস পাদরির কর্ম্মে নিযুক্ত হইলেন। উত্তরোত্তর তাঁহার পদবৃদ্ধি হইতে লাগিল। পরিশেষে, তিনি বিশপের পদ প্রাপ্ত হইলেন। দেখ! লেখা পড়ায় আন্তরিক যত্ব থাকার কি গুণ! যে ব্যক্তি রুটিওয়ালার দোকানে থাকিয়া কর্ম্ম শিথিয়া, উত্তর কালে ঐ ব্যবসায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করিবেক বলিয়া স্থির হইয়াছিল, সেই ব্যক্তি বিশপের পদ প্রাপ্ত হইলেন।