চরিতাবলী/লঙ্গোমণ্টেনস

লঙ্গোমণ্টেনস

এই ব্যক্তি ডেনমার্কের অন্তঃপাতী লঙ্গসবর্গ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইঁহার পিতা প্রতিদিন জন খাটিয়া সংসারযাত্রা নির্বাহ করিতেন; সুতরাং, তাঁহার পুত্ত্রদিগকে লেখা পড়া শিখাইবার ক্ষমতা ছিল না। লঙ্গোমণ্টেনসের আট বৎসর বয়সের সময় পিতৃবিয়োগ হয়। সুতরাং, তিনি নিতান্ত নিরাশ্রয় হইয়া পড়িলেন। তাঁহার মাতুল তাঁহাকে, লেখা পড়া শিখিবার নিমিত্ত নিতান্ত উৎসুক দেখিয়া, এক বিদ্যালয়ে পাঠা- ইয়া দিলেন। তিনি তথায় অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন।

 লঙ্গোমণ্টেনসের আর কয়েক সহোদর ছিল। তাহারা লেখা পড়া শিখিতে পায় নাই। এক্ষণে, তাঁহাকে বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইয়া লেখা পড়া করিতে দেখিয়া, তাহাদের অত্যন্ত ঈর্ষ্যা জন্মিল। আমরা লেখা পড়া শিখিতে পাইলাম না, ও কেন শিখিবে, এই হিংসাতে তাহারা তাঁহার উপর এত উৎপাত আরম্ভ করিল যে, তিনি বিরক্ত হইয়া দেশত্যাগ করিয়া ফিনলণ্ড প্রদেশের অন্তঃপাতী উইবর্গ নগরে গমন করিলেন।

 কিছু দিন বিদ্যালয়ে থাকিয়া, তাঁহার ভাল করিয়া লেখা পড়া শিখিবার নিমিত্ত অতিশয় ইচ্ছা হইয়াছিল। এক্ষণে তিনি, এই স্থানে উপস্থিত হইয়া, লেখা পড়ার চেষ্টা দেখিতে লাগিলেন। কিন্তু, কোন সুযোগ ঘটিয়া উঠিল না। অন্ততঃ, খাওয়া, পরা ও পুস্তকক্রয়ের সংস্থান না হইলে, লেখা পড়া চলিতে পারে না। অনেক চেষ্টা দেখিয়াও, তিনি এই সমুদয়ের সংস্থান করিয়া উঠিতে পারিলেন না; অবশেষে, অনেক ভাবিয়া এক বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইলেন। তিনি দিবাভাগে তথায় থাকিয়া অধ্যয়ন করিতেন; রাত্রিতে অন্য স্থানে কর্ম্ম করিয়া, কিছু কিছু উপার্জন করিতেন; তাহাতেই কষ্টে আহারাদিনির্বাহ হইত।

 ক্রমাগত এগার বৎসর এইরূপ কষ্ট পাইয়া, উইবর্গে থাকিয়া, তিনি আন্তরিক যত্ব সহকারে বিলক্ষণ লেখা পড়া শিথিলেন। কিছু দিন পরে, তিনি স্বদেশে প্রতিগমন করিলেন, এবং ডেনমার্কের রাজধানী কোপনহেগন নগরে ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, তথায় গণিতশাস্ত্রের অধ্যাপক নিযুক্ত হইলেন। তিনি মৃত্যুর দুই বৎসর পূর্ব্ব পর্য্যন্ত ঐ কর্ম্ম করিয়াছিলেন। তদ্ব্যতিরিক্ত, তিনি নানা বিষয়ে নানা গ্রন্থ রচনা করিয়া গিয়াছেন।

 দেখ! যে ব্যক্তির পিতা প্রতিদিন জন খাটিয়া কষ্টে সংসার নির্বাহ করিতেন, সেই ব্যক্তি, অত্যন্ত কষ্ট পাইয়াও, আন্তরিক যত্ন সহকারে বিদ্যা উপার্জন করিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হইয়াছিলেন।