কে গাহিল।

কে গাহিল—কি মধুর-ওই যে আবার౼
ছুটিল সঙ্গীত-স্রোত ভাসায়ে গগণ!

একি?—এ যে ভেসে যায় হৃদয় আমার
নিশীথে কে করে হেন সুধা বরিষণ!
আবার—আবার—গায়,
পুন চিত্ত ভেসে যায়,
নারী-কণ্ঠ!——বটে তাই,
ছুটিয়া গবাক্ষে যাই
দেখিলাম-কি দেখিনু—কি বলিব হায়!
স্থির সৌদামিনী-লতা পড়িয়া ধরায়।


জ্যোৎস্না-প্লাবিত দূর সরসীর তটে,
কৌমুদি কিরণে স্নাত পাষাণ সোপানে,
পড়িয়া প্রতিমা খানি যেন চিত্রপটে,
বিস্তৃত নয়ন দুটি গগনের পানে
বাম গণ্ড বাম করে,
বাতাশে কুন্তল নড়ে,
নিশিগন্ধা বসন্তের,
কিম্বা শশী শরদের,
ললিত সপ্তমে গায় সঙ্গীত লহরি
পীযূস প্রবাহে মত্তা নীরব সর্ব্বরা।


আবার সঙ্গীত-স্রোত উঠিল উথলি,
আবার প্রকৃতি-চিত্ত উঠিল আকূলি,
নাচিল সরসি জল নাচিল পবন,
নাচিল শাখায় পাতা লতায় প্রসূন,
হরষিত নীলাম্বরে,
হাসিয়া কিরণ ঝরে,
মরি কি গভীর তান,
আকূল করিল প্রাণ,
অবসে মৃদুল খাদে গড়ায়ে পড়িল,
হৃদয়ের স্রোত মম সঙ্গীতে মিশিল।

8


শুনিয়াছি বসন্তের কোকিল-কূজন,
শুনিয়াছি বাঁশরীর মধুর নিক্কণ,
হাসি-পূর্ণ বিম্বাধরে,
নর্ত্তকী মধুর স্বরে,
গাহিয়াছে মুলতান,
শুনিয়াছি সেই গান,
কিন্তু হেন উম্মাদিনী জীবন্ত রাগিনী
শুনি নাই-হেন গীত চিত্ত বিপ্লাবনী।


শুনিলাম—কিন্তু কভু শুনি বনা আর
সুধুই হারানু চিত্ত সঙ্গীত শ্রবণে,
সুখের পিপাসা চিত্তে কেন দুর্নিবার
সাধের সামগ্রী কেন দুর্লভ জীবনে?
ইচ্ছা করে দিবানিশি,
এই গবাক্ষেতে বসি,
ওই সুমধুর গান,
শুনিয়া যুড়ই প্রাণ,
বুঝেনা স্বাধীন পাখী পথিকের মন
ঢালিয়া সঙ্গীত-স্রোত করে পলায়ন।


শুনিব না আর, যদি গাই একবার
হৃদয়-কবাট আমি করি উদ্‌ঘাটন,
গাহ তুমি বরষিয়া সুধা পিরবার,
রেখে দিই চিত্তে আমি করিয়া বন্ধন।
কি শয়নে কি স্বপনে,
উথলি উঠিবে প্রাণে,
বাজিবে তরঙ্গ বুকে,
উঠিবে উথলি সুখে,

তুলিয়া সপ্তমে তুমি গাহ বিহঙ্গিনী
বেঁধে রাখি বক্ষঃস্থলে তব প্রতিধ্বনি।