চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ/প্রথম খণ্ড/দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

দুই

 গীত-গোবিন্দের শেষ শ্লোকে কবি জয়দেব নিজেই তাঁর মাতাপিতার পরিচয় দিয়ে গিয়েছেন।

 পিতা শ্রীভোজদেব, জননী বামা দেবী। এ ছাড়া কবির সাংসারিক জীবনের আর কোন পরিচয়ই পাওয়া যায় না তাঁর লেখা থেকে।

 তাঁর লেখা থেকে আর দুটি নাম পাওয়া যায়। একটি নাম হলো তাঁর কোন প্রিয় বন্ধুর, পরাশর। গীতগোবিন্দ কাব্য লিখে কবি ফুলের মালার মতন সেই কাব্যকে প্রিয় বন্ধুর গলায় উপহারস্বরূপ দিয়ে গিয়েছেন। আর একটি নাম হলো, তাঁর প্রিয়তমা পত্নীর, পদ্মাবতী। পদ্মাবতীর চারণ কবিরূপে যেভাবে কবি নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন, প্রিয়তমা পত্নীর সেই নামোল্লেখের ভেতর থেকে বোঝা যায়, কি নিবিড় প্রেম ছিল তাঁদের দুজনার মধ্যে। জীবনের মর্ম্মমূলে থেকে যে নিবিড় প্রেম তাঁকে জাগিয়ে তোলে, সেই প্রেমেরই দিব্য প্রকাশ দেখি তাঁর সৃজিত কাব্যে।

 একান্ত দুঃখের বিষয়, বাংলার এই মহাকবির জীবনের কাহিনী কালের অতল তলে হারিয়ে গিয়েছে, পড়ে আছে শুধু কতকগুলি কাহিনী আর কিম্বদন্তী। তাই থেকে এখানে চেষ্টা করেছি, কল্পনায় আর সত্যে মিশিয়ে বাংলার সেই অমর কবির জীবনকে গেঁথে তুলতে।