অজয় নদী

এক কালে এই অজয়নদী ছিল যখন জেগে
  স্রোতের প্রবল বেগে
 পাহাড় থেকে আনত সদাই ঢালি
আপন জোরের গর্ব করে চিকন-চিকন বালি।
অচল বােঝা বাড়িয়ে দিয়ে যখন ক্রমে ক্রমে
  জোর গেল তার কমে,
নদীর আপন আসন বালি নিল হরণ করে,
 নদী গেল পিছন-পানে সরে;
  অনুচরের মতাে
 রইল তখন আপন বালির নিত্য-অনুগত।

কেবল যখন বর্ষা নামে ঘােলা জলের পাকে
বালির প্রতাপ ঢাকে।
পূর্বযুগের আক্ষেপে তার ক্ষোভের মাতন আসে,
বাঁধন-হারা ঈর্ষা ছােটে সবার সর্বনাশে।
আকাশেতে গুরুগুরু মেঘের ওঠে ডাক,
বুকের মধ্যে ঘুরে ওঠে হাজার ঘূর্ণিপাক।
তার পরে আশ্বিনের দিনে শুভ্রতার উৎসবে
সুর আপনার পায় না খুঁজে শুভ্র আলাের স্তবে।
দূরের তীরে কাশের দোলা, শিউলি ফুটে দূরে,
শুষ্ক বুকে শরৎ নামে বালিতে রােদ্দুরে।
চাদের কিরণ পড়ে যেথায় একটু আছে জল
যেন বন্ধ্যা কোন্ বিধবার লুটানাে অঞ্চল।
নিঃস্ব দিনের লজ্জা সদাই বহন করতে হয়,
আপনাকে হায় হারিয়ে-ফেলা অকীর্তি অজয়।


জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৪
আলমােড়া