ছবি-আঁকিয়ে

ছবি আঁকার মানুষ ওগো পথিক চিরকেলে,
চলছ তুমি আশেপাশে দৃষ্টির জাল ফেলে;
পথ-চলা সেই দেখাগুলো লাইন দিয়ে এঁকে
পাঠিয়ে দিলে দেশ-বিদেশের থেকে।
যাহা-তাহা যেমন-তেমন আছে কতই কী যে,
তোমার চোখে ভেদ ঘটে নাই চণ্ডালে আর দ্বিজে।
ঐ যে গরিবপাড়া,
আর-কিছু নেই ঘেঁষাঘেঁষি কয়টা কুটীর ছাড়া।
তার ও পারে শুধু
চৈত্রমাসের মাঠ করছে ধূ ধূ।
এদের পানে চক্ষু মেলে কেউ কভু কি দাঁড়ায়?
ইচ্ছে ক’রে এ ঘরগুলোর ছায়া কি কেউ মাড়ায়?
তুমি বললে, দেখার ওরা অযোগ্য নয় মোটে;
সেই কথাটিই তুলির রেখায় তক্ষনি যায় রটে।
হঠাৎ তখন ঝেঁকে উঠে আমরা বলি, তাই তো,
দেখার মতোই জিনিস বটে, সন্দেহ তার নাই তো।
ঐযে কারা পথে চলে, কেউ করে বিশ্রাম,
নেই বললেই হয় ওরা সব, পোঁছে না কেউ নাম—
তোমার কলম বললে, ওরা খুব আছে এই জেনো।
অমনি বলি, তাই বটে তো, সবাই চেনো-চেনো।
ওরাই আছে, নেইকো কেবল বাদশা কিংবা নবাব;
এই ধরণীর মাটির কোলে থাকাই ওদের স্বভাব।
অনেক খরচ ক’রে রাজা আপন ছবি আঁকায়,
তার পানে কি রসিক লোকে কেউ কখনো তাকায়?

সে-সব ছবি সাজে-সজ্জায় বােকার লাগায় ধাঁধা,
আর এরা সব সত্যি মানুষ সহজ রূপেই বাঁধা।

ওগাে চিত্রী, এবার তােমার কেমন খেয়াল এ যে,
এঁকে বসলে ছাগল একটা উচ্চশবা ত্যেজে।
জন্তুটা তাে পায় না খাতির হঠাৎ চোখে ঠেকলে,
সবাই ওঠে হাঁ হাঁ করে সবজি-ক্ষেতে দেখলে।
আজ তুমি তার ছাগ্লামিটা ফোটালে যেই দেহে
এক মুহূর্তে চমক লেগে বলে উঠলেম, কে হে!
ওরে ছাগলওয়ালা, এটা তােরা ভাবিস কার—
আমি জানি একজনের এই প্রথম আবিষ্কার।


জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৪

আলমােড়া