আতার বিচি


আতার বিচি নিজে পুঁতে পাব তাহার ফল
দেখব ব’লে ছিল মনে বিষম কৌতূহল।
তখন আমার বয়স ছিল নয়,
অবাক লাগত কিছুর থেকে কেন কিছুই হয়।
দোতলাতে পড়ার ঘরের বারান্দাটা বড়াে,
ধুলো বালি একটা কোণে করেছিলুম জড়াে।
সেথায় বিচি পুঁতেছিলুম অনেক যত্ন করে,
‘গাছ বুঝি আজ দেখা দেবে’ ভেবেছি রােজ ভােরে।
বারান্দাটার পূর্বধারে টেবিল ছিল পাতা,
সেইখানেতে পড়া চলত- পুঁথিপত্র খাতা
রােজ সকালে উঠত জমে দুর্ভাবনার মতো;
পড়া দিতেন, পড়া নিতেন মাস্টার মন্মথ।
পড়তে পড়তে বারে বারে চোখ যেত ঐ দিকে,
গোল হত সব বানানেতে, ভুল হত সব ঠিকে।
অধৈর্য অসহ্য হত, খবর কে তার জানে
কেন আমার যাওয়া-আসা ঐ কোণটার পানে।
দু মাস গেল, মনে আছে, সেদিন শুক্রবার—

অঙ্কুরটি দেখা দিল নবীন সুকুমার।
অঙ্ক-কষার বারান্দাতে চুন-সুরকির কোণে
অপূর্ব সে দেখা দিল, নাচ লাগালাে মনে।
আমি তাকে নাম দিয়েছি আতা গাছের খুকু—
ক্ষণে ক্ষণে দেখতে যেতেম, বাড়ল কতটুকু।
দুদিন বাদেই শুকিয়ে যেত সময় হলে তার,
এ জায়গাতে স্থান নাহি ওর করত আবিষ্কার।
কিন্তু যেদিন মাস্টার ওর দিলেন মৃত্যুদণ্ড,
কচিকচি পাতার কুঁড়ি হল খণ্ড খণ্ড,
আমার পড়ার ত্রুটির জন্যে দায়ী করলেন ওকে,
বুক যেন মাের ফেটে গেল— অশ্রু ঝরল চোখে।
দাদা বললেন, কী পাগলামি, শান-বাঁধানাে মেঝে,
হেথায় আতার বীজ লাগানাে ঘাের বােকামি এ যে।
আমি ভাবলুম সারা দিনটা বুকের ব্যথা নিয়ে,
বড়ােদের এই জোর খাটানাে অন্যায় নয় কি এ!
মূর্খ আমি ছেলেমানুষ, সত্য কথাই সে তাে—
একটু সবুর করলেই তা আপনি ধরা যেত।


শ্রাবণ ১৩৪৪