ছিন্নপত্র (১৯১২)/৪০

শিলাইদহ,
রবিবার, ৪ঠা জানুয়ারী,
১৮৯২।

 কিছু আগেই পাবনাথেকে এ— তার মেম্ এবং কচিকাচা নিয়েএসে উপস্থিত। মেম্ চা খায়, আমার চা নেই—মেম্ ছেলেবেলাথেকে ডাল দুচক্ষে দেখতেপারে না, আমি অন্য খাদ্যের অভাবে ডাল তৈরিকরতে দিয়েচি, মেম্ ইয়ার্স্ এণ্ড, টু ইয়ার্স্ এণ্ড মাছ ছোঁয় না, আমি মাগুর মাছের ঝোল রাঁধিয়ে নিশ্চিন্তহয়ে আছি। কি ভাগ্যি কাণ্ট্রি, সুইট্‌স্‌ ভালবাসে তাই একটা বহুকালের শক্ত শুকনো সন্দেশ বহুকষ্টে কাঁটা দিয়ে ভেঙে খেলে। এক বাক্স বিস্কুট গতবারের রসদের অবশেষস্বরূপে ছিল সেটা কাজেলাগ্‌বে। আমি আবার একটা মস্ত গলদকরেচি— আমি সাহেবকে বলেছি, তোমার মেম্ চা খায় কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমার চা নেই, কোকো আছে। সে বল্লে আমার মেম্ চায়ের চেয়ে কোকো বেশি ভালবাসে। আমি আলমারি ঘেঁটেদেখি কোকো নেই—সবগুলোই কলকাতায় ফিরেগেছে। আবার তাকে বল্‌তেহবে চা-ও নেই কোকোও নেই পদ্মার জল আর চায়ের কাৎলি আছে—দেখি কি রকম মুখের ভাব হয়। সাহেবের ছেলে দুটো এমন দুরন্ত, এবং দুষ্টু দেখতে, সে আর কি বল্‌ব। মাঝে মাঝে সাহেব মেমেতে খুব গুরুতর ঝগড়া হয়েযাচ্চে আমি এ বোটথেকে শুন্‌তে পাচ্ছি। ছেলেদের কান্না, চাকরবাকরদের চেঁচামেচি, এবং দম্পতির তর্কবিতর্কের জ্বালায় অস্থিরহয়ে আছি। আজ আর কোন কাজকর্ম্ম লেখাপড়ার সুবিধে দেখ্‌চিনে। মেম্‌টা তার ছেলেকে ধমকাচ্চে “What a little শুয়ার you are!” দেখত, আমার ঘাড়ে এসব উপদ্রব কেন?