বালিয়া,
১১ই মার্চ, ১৮৯৩ ।

 ছোট্ট বোটখানি। আমার মত লম্বা লোকের দৈর্ঘ্যগর্ব্ব খর্ব্ব করাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য দেখ্‌তে পাচ্চি। ভ্রমক্রমে মাথা একটুখানি তুল্‌তে গেলেই অমনি কাষ্ঠফলকের প্রচণ্ড চপেটাঘাত মাথার উপর এসে পড়ে—হঠাৎ একেবারে দমে যেতে হয়; সেইজন্যে কাল থেকে নতশিরে যাপন করচি। কপালে যত দুঃখ যত ব্যথা ছিল তার উপরে আবার প্রত্যেকবার দাঁড়াতে গিয়ে নতুন ব্যথা বাড়ছে। সে জন্যে তত আপত্তি করিনে কিন্তু কাল মশার জ্বালায় ঘুম হয়নি সেটা আমার অন্যায় মনে হচ্চে।

 এদিকে আবার শীত কেটে গিয়ে গরম পড়ে এসেছে; রৌদ্র উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং পাশের জানলা দিয়ে মন্দ মন্দ সজল শীতল বাতাস পিঠের উপর এসে লাগ্‌চে। আজ আর শীত কিম্বা সভ্যতার কোনো খাতির নেই—বনাতের চাপকান চোগা হুকের উপর উদ্বন্ধনে ঝুল্‌চে। ঘণ্টাও বাজচে না, সসজ্জ খানসামা এসেও সেলাম করচে না—অসভ্যতার অপরিচ্ছন্ন শৈথিল্য ও আরাম উপভোগ করচি। পাখীগুলো ডাকচে এবং তীরে দুটো বড় বড় বটগাছের পাতা বাতাসে ঝরঝর করে শব্দ করচে— কম্পিত জলের উপরকার রৌদ্রালোক বোটের ভিতরে এসে ঝিকমিক করে উঠচে— বেলাটা এরকম ঢিলেভাবেই চলেছে। কটকে থাক্‌তে ছেলেদের ইস্কুল ও বি—বাবুর আদালতে যাবার তাড়া দেখে সময়ের দুর্ম্মূল্যতা এবং সভ্য মানবসমাজের ব্যস্ততা খুব অনুভব করা যেত। এখানে সময়ের ছোট ছোট নির্দ্দিষ্ট সীমা নেই—কেবল দিন এবং রাত্রি এই দুটি বড় বড় বিভাগ।