ছিন্নপত্র (১৯১২)/৮৩
শিলাইদহ,
১৩ই মে, ১৮৯৩।
আজ টেলিগ্রাম পেলুম যে Missing gown lying Post office এর দুটো অর্থ হতে পারে। এক অর্থ হচ্চে হারা গাত্রবস্ত্র ডাকঘরে শুয়ে আছেন। আর এক অর্থ হচ্চে—গাউনটা মিসিং এবং পোষ্ট অফিসটা লাইং। দুই অর্থই সম্ভব হতে পারে—কিন্তু যে পর্য্যন্ত প্রতিবাদ না শুনি সে পর্যন্ত প্রথম অর্থ টাই গ্রহণ করা গেল। কিন্তু মজা হচ্চে এই—সঙ্গে সঙ্গে যে চিঠিখানি এসেচে তাতে পরিষ্কার করে বলা আছে একটা গাউন যে পাওয়া যায়নি তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই।
বেচারা চিঠি! তার জিম্মায় যে কয়টি কথা লেফাফায় পূরে দেওয়া হয়েচে সেই কয়টি কথা কাঁধে করে নিয়ে দীর্ঘ পথ ঢিকতে ঢিকতে চলে আস্চে— ইতিমধ্যে যে পৃথিবীতে কত কি হয়ে যাচ্চে তা সে জানে না, এবং তার ছোট ভাই যে এক লম্ফে তাকে ডিঙিয়ে তার সমস্ত কথার একটিমাত্র সংক্ষেপ রূঢ় প্রতিবাদ নিয়ে এসে হাজির হল তারও সে জবাব দিতে পারে না; সে ভালমানুষের মত বলে “আমি কিছু জানিনে বাপু, আমাকে সে যা বলে দিয়েচে আমি তাই বয়ে এনেচি।” বাস্তবিক এনেচে বটে। একটি কথার এদিক ওদিক হয়নি—সমস্ত পথটি মাড়িয়ে, দীর্ঘ পথের কত চিহ্ন, আষ্টেপৃষ্ঠে কত ছাপ নিয়েই বেচারা ঠিক সময়ে এসে উপস্থিত হয়েচে। তা হোক্ তার খবর ভুল, আমি তাকে ভালবাসি। আর তারে চড়ে’ চক্ষের পলকে টেলিগ্রাফ এলেন—কোথাও পথশ্রমের কোন চিহ্ন নেই—লেফাফাখানি একেবারে রাঙা টক্ টক্ করচে—হড়্ বড়্ তড়্ বড়্ করে দুটো কথা বল্লেন আর ভিতর থেকে আটটা দশটা কথা পড়ে গেছে- তার মধ্যে ব্যাকরণ নেই ভদ্রতা নেই কিছু নেই—একটা সম্বোধন নেই একটা বিদায়ের শিষ্টতাও নেই, আমার প্রতি যেন তার কিছুমাত্র বন্ধুতার ভাব নেই; কেবল কোনোমতে তাড়াতাড়ি কথাটা যেমন তেমন করে বলে ফেলে দায় কাটিয়ে চলে যেতে পারলে বাঁচে।