সাজাদপুর,
১০ই জুলাই, ১৮৯৩।

 এসব গান যেন একটু নিরালায় গাবার মত। সুরটা যে মন্দ হয়েচে এমন আমার বিশ্বাস নয়, এমন কি ভাল হয়েছে বল্লে খুব বেশি অত্যুক্তি হয় না। ও গানটা আমি নাবার ঘরে অনেকদিন একটু একটু করে সুরের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করেছিলুম। নাবার ঘরে গান তৈরি করবার ভারি কতকগুলি সুবিধা আছে। প্রথমতঃ নিরালা, দ্বিতীয়ত অন্য কোনো কর্ত্তব্যের কোনো দাবী থাকেনা। মাথায় এক টিন জল ঢেলে পাঁচ মিনিট গুন গুন করলে কর্ত্তব্যজ্ঞানে বিশেষ আঘাত লাগেনা—সব চেয়ে সুবিধা হচ্চে কোনো দর্শক-সম্ভাবনামাত্র না থাকাতে সমস্ত মন খুলে মুখভঙ্গী করা যায়। মুখভঙ্গী না করলে গান তৈরি করবার পূরো অবস্থা কিছুতেই আসে না। ওটা কিনা ঠিক যুক্তিতর্কের কাজ নয়—নিছক ক্ষিপ্তভাব। এ গানটা আমি এখনো সর্ব্বদা গেয়ে থাকি—আজ প্রাতঃকালেও অনেকক্ষণ গুন্ গুন্ করেছি, গাইতে গাইতে গভীর একটা ভাবোন্মাদও জন্মায় অতএব এটা যে আমার একটা প্রিয় গান সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

 এখানে আমি একলা খুব মুগ্ধ এবং তদ্গতচিত্তে অর্দ্ধনিমীলিত নেত্রে গেয়ে থাকি এবং জীবন ও পৃথিবীটা একটি সূর্য্যকরোজ্জ্বল অতি সূক্ষ্ম অশ্রুবাষ্পে আবৃত হয়ে সাতরঙা ইন্দ্রধনু-রেখায় রঞ্জিত হয়ে দেখা দেয়—প্রতিদিনের সত্যকে চিরদিনের সৌন্দর্য্যের মধ্যে তর্জ্জমা করে দেওয়া যায়—দুঃখকষ্টও আভাময় হয়ে ওঠে। অনতিবিলম্বেই খাজাঞ্চি এক ছটাক মাখন, এক পোয়া ঘি ও ছয় পয়সার সর্ষপ তৈলের হিসাব এনে উপস্থিত করে। আমার এখানকার ইতিহাস এইরকম।