জীবনের ঝরাপাতা/চৌদ্দ
বলেছি কাশিয়াবাগান আমাদের বহ, আত্মীয় সমাগমের একটা আড্ডা ছিল। যোড়াসাঁকোর সবাই প্রায় আসতেন। আত্মীয় ছাড়া কুটম্বদেরও নিত্য আগমন ছিল। মোহিনীবাবুর চারটি ভাই আপনার লোকেরই মত আনাগোনা করতেন। তার মধ্যে তাঁর দ্বিতীয় ভ্রাতা রমণীবাবুর সঙ্গে সরোজদিদির ছোট বোন ঊষাদিদির বিয়ে হয়ে গেল। রমণীবাবু আত্মীয়শ্রেণীভুক্তই হয়ে গেলেন এবং আজীবন আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কবান রইলেন। মোহিনীবাবু, যখন বিলাত প্রবাসে, রমণীবাবুই তখন তাদের বহৎ পরিবারটি পালন করতেন। আমার বাবা-মশায়ের সাহায্যে তিনি মিউনিসিপ্যাল কমিটিতে একটি বড় চাকরি পেলেন। তাঁদের চতুর্থ ভ্রাতা রজনীর আবিবাহ কাশিয়াবাগানে আনাগোনা ছিল। তখন তার ছাত্রজীবন। পড়াশুনায় খুব ভাল ছিল—আর আমাদের নানা বই থেকে মুখে মুখে গল্প শোনাত। আইভানহোর গল্প বোধহয় প্রথম তার কাছে শুনি, পুকুরে একটু একটু সাঁতার দিতে সে-ই শেখায়। আমি তখন ছোটর দলে, তার বেশি ভাব ছিল দিদির সঙ্গে। কলেজে পড়তে পড়তেই বোধহয় তার গগনদাদাদের ছোট বোন সুনয়নীর সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ হল। কাশিয়াবাগানে আনাগোনা কমে এল। যে রাত্রে তার বিয়ে, আমরা যোড়াসাঁকোর বাইরের বারান্দা থেকে খুব ঘটা করে, খাসগেলাসের বাতি জ্বালিয়ে, গড়ের বাদ্যি বাজিয়ে বর-আগমন দেখলুম। বর জুড়িঘোড়ার গাড়িতে বসা, মাথার উপর ছত্র ধরা—দেখতে খুব সুন্দর, সব ভাইদের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে গৌরবর্ণ। গাড়ির থেকে নেমে ৬।১ নম্বরের অন্তঃপুরে সে যে প্রবেশ করল-সেই অবধি অন্তরাল হয়ে গেল আমাদের চোখের থেকে ও জীবনের থেকে। গগন-দাদাদের সঙ্গে যোড়াসাঁকোর এ বাড়ির সামাজিকভাবে মেলামেশা নেই, আদান-প্রদান নেই, তখন পর্যন্ত—প্রাইভেটভাবে ছেলেদের যাতায়াত থাকলেও। পাথুরেঘাটার, কয়লাহাটার ও মদনবাবুদের বাড়ির পুরুষ ও মেয়েরাই তাঁদের বেশি আপন—মহর্ষির বাড়ির সবাই রক্তেতে নিকটতর হলেও ব্যবহারে পর। অথচ একদিন এল যেদিন এই রজনী ও সুনয়নীর মেয়ের সঙ্গেই দ্বিপদাদার ছেলে দিনুর বিয়ে হল। দিনুর সেই প্রথম পত্নী। তার অকালমৃত্যুর পর দিনুর দ্বিতীয়বার বিবাহ হল মদনবাবুদের বাড়িতে, ঠাকুর গোষ্ঠীর এমন একটি ঘরে যাদের সঙ্গে সামাজিকতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কাল যেমন নিকটকে দূর করে, তেমনি আবার দুরে সরাকে কাছে টেনে আনে। গগনদাদাদের বড় বোন বিনয়নীরই মেয়ে প্রতিমা-রথীর স্ত্রী। সে কিন্তু অনেক পরের কথা। সুনয়নীর সঙ্গে বিয়ের পর থেকে রজনী ঘরজামাই হয়ে সেই যে ৬।১নং-এ বাস করতে লাগল—আর আমাদের সঙ্গে তিলমাত্র সম্পর্ক রইল না। ওবাড়ির মেয়েদেরই মত সেও অসূর্যম্পশ্য হল এ বাড়ির সম্পর্কিত সকলের। তখনো তার ছোট ভাই সজনী ও সেজদাদা যোগিনীর কিন্তু মাহিনী রমণীবাবুদের সঙ্গে সঙ্গে কাশিয়াবাগানে সমান গতিবিধি রইল। যোগিনীর শুধু, গতি নয়, একেবারে স্থিতি বল্লেও চলে। মোহিনীবাবু, সুবিজ্ঞ, সুপণ্ডিত; রমণীবাবু প্র্যাকটিক্যাল কমনসেন্সবান-তিনিও পড়াশুনায় অগ্রণী, তখনই বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপক। এণ্ট্রান্সের সময় ইংরেজী বইগুলিতে তিনি আমাকে খুব তৈরী করে দিয়েছিলেন। সজনী ছেলেমানুষ, পাগলাটে, পরে বোধহয় একেবারেই পাগল হয়ে গিয়েছিল। আর যোগিনী—কি বলব? কখনো একান্ত মৌন-তখন দাদারা ঠাট্টা করতেন—“পিঞ্জরে বসিয়া শুক মুদিয়া নয়ন, কি ভাবিছ মনে?” চটত না কিন্তু, একেবারে নির্বিকার। কখনো খুব বাক্যবাগীশ। দশ-পঁচিশ প্রভৃতি খেলায় যে দানটা চায়, ঠিক সেইমত কড়ি ফেলতে একেবারে সিদ্ধহস্ত। তর্কে ও তাসে তাকে পরাস্ত করা প্রায় অসম্ভব। জীবনের শেষভাগে আমার মায়ের সাহায্যে বিলেত গিয়ে ব্যারিস্টার হয়ে এসেছিল। একটা কোন আশা নিয়ে গিয়েছিল। সে আশা পূর্ণ হবার নয় তাও জেনেছিল সেখানে থাকতে থাকতেই। ব্যারিস্টার হয়ে হাইকোর্টে যাতায়াত করত; কিন্তু জীবিকা অর্জন তার ব্রিজ খেলার জিতের উপরই বাঁধা ছিল। বিলেত থেকে ফেরবার আগে সকলের অগোচরে এক মেমকে বিয়ে করে তাকে ও একটি কন্যাকে রেখে এসেছিল, নিজের রোজগারে তাদের পালন পোষণ করত, সে বিষয়ে কর্তব্যশীল ছিল, কেবল স্বভাব-সুলভ মৌনবৃত্তি অবলম্বন করে পাঁচজনকে জানায়নি। অনেক পরে মায়ের মৃত্যুর পর এক ডাগর কন্যা যখন জাহাজে করে কলকাতায় উত্তীর্ণ হয়ে, মোহিনীবাবুদের গৃহে উপস্থিত হল, তখন সকলে জানতে পারলে। মেয়েটি খুব ভাল, এখন লেডি ডাক্তার। আর একজনকে মনে পড়ে, সে-ও আপন লোকের মত অকাতরে আসা-যাওয়া করত। সে হচ্ছে অবিনাশ চক্রবতী-কবি বেহারী চক্রবর্তীর অতি আদরের বড় ছেলে। তার উপর বেহারীবাবুর একটি কবিতা ছিল-“বাছনি আমার”—তাই দিয়ে সে সকলের পরিচিত। ভারি সরল, ভারি সাদাসিধে ও ভারি সঙ্গীত-প্রিয় ও সঙ্গীতের রসজ্ঞ সে। আমি একদিন একলা বসে বসে আপন মনে পিয়ানোতে বিথোভনের প্রসিদ্ধ ক্লাসিকাল রচনা “Moon-light Sonata” বাজাচ্ছিলাম। সে পাশের ঘরে বসে চুপ করে শুনছিল। আমার বাজনা শেষ হয়ে গেলে আমার কাছে এসে বল্লে-"মরি! মরি! কি সুন্দর।” তার পরদিন আমার উপর একটি কবিতা লিখে নিয়ে এসে আমায় উপহার দিলে—“প্রাণের বোনটি আমার সরলা সুন্দরী।” তার আসা-যাওয়া ক্রমে কমে এল, একেবারে বন্ধ হল। শেষে নাকি সে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল।
কাশিয়াবাগানে আর এক পরিবারের নতুন করে যাতায়াত আরম্ভ হল —সে আশু চৌধুরী ও তাঁর অনুজদের। এদের ভিতর আর এক রকমের চটক ছিল সেকালের “আধুনিকতা”। যত না পাবনাই এরা, তারচেয়ে বেশী কৃষ্ণনাগরিক। এদের বাঙ্গলা উচ্চারণে সেই মনোমোহন-লালমোহন-ঘোষীয়তা, ঐ দুই ভাইয়ের মতই এদেরও বচনপ্রাচুর্য। এঁদের মনস্তত্ত্ব অনেক নতুন ভাবের রাজ্যে ঘোরাফেরার গাঁথুনির উপর দাঁড়ান। সব ভাইদের মধ্যে আশবাবুই সবচেয়ে চটকদার। তাঁর ভিতর এমন একটি মোহিনী ছিল, যাতে সবাইকে বশ করতেন। তাঁদের সেজভাই কুমুদবাবুরও সেটা কতক কতক ছিল। এঁরা ছাড়া লোকেন ত আসতই যখনি ছুটি পেত। চৌধুরী ছোট ভাইদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল না আগে, এখানে হল। আশুবাবু কিন্তু তার পরম বন্ধু বিলেত থেকেই। এঁদের সকলের আসা-যাওয়ার সমসাময়িক আমার লেখার হাত খুলে যাওয়া।
অন্যত্র একবার বলেছি-‘বালকে' প্রকাশিত আমার প্রথম প্রথম রচনা উদ্যমের পর ভারতীতে ‘প্রেমিক-সভা’ বলে অস্বাক্ষরিত হাস্যরসান্বিত একটি লেখা লিখে Byron-এর মত আমি একদিন হঠাৎ জেগে উঠে দেখলুম বড় লেখক হয়ে গেছি, চারদিক থেকে প্রশংসা বর্ষণ হতে থাকল, এবং আর সবাইকে ছিপিয়ে রেখে রবিমামা অপ্রত্যাশিতভাবে অভিনন্দন করে লিখলেন—“নাম দিসনি বলে তোর এ লেখার ঠিক যাচাই হল। নতুন হাতের লেখার মত নয়, এ যেন পাকা প্রতিষ্ঠ লেখকের লেখা। এ যদি আমারই লেখা লোকে ভাবত, আমি লজ্জিত হতুম না।” এত বড় সমাদরে আমি আহ্লাদে লজ্জায় মৌন হয়ে গেলাম। কিন্তু এ-লেখা লিখে একটু, বিপদেও পড়লম। কেউ কেউ নিজের মাথায় টুপি খাপ খেয়ে বসছে সন্দেহ করে মাথা চুলকাতে লাগল, কেউ বা কথঞ্চিৎ মাথা-গরম হয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকাতে লাগল। কিন্তু এ চায়ের পেয়ালার ঝড় শীঘ্রই শান্ত হয়ে গেল। 'চিরকুমার সভা'র মত প্রেমিক-সভা ভেঙ্গে গেল না, সম্মানই কার্যকরী রইল।
কলম আমার খুলে গেল। এর পর সংস্কৃত কাব্যের আলোচনামূলক লেখা বেরতে থাকল। প্রথমেই কুমারসম্ভবের ‘রতি-বিলাপ'। হীরেন দত্ত পরম্পরায় বলে পাঠালেন—“ভারি একটা নতুনত্ব আছে এ-লেখায়।” তাঁর মৃত্যুর দু-তিন বৎসর পূর্বে ও যখন ‘নীলের উপোস' শোনাচ্ছিলুম তাঁকে- তার প্রতিপাদ্য বিষয় ও ভাষার তারিফ করতে করতে বললেন—“আপনার সব লেখা বই আকারে ছাপান না কেন? বাঙলার সাহিত্য-জগৎকে বঞ্চিত করে রাখছেন। আপনার ‘রতি-বিলাপ' একটা sensation এনেছিল-সেসব ত আজ পর্যন্ত বই করে গেঁথে রাখলেন না। এখনো ছাপিয়ে ফেলুন।”
তার পরে 'মালবিকা-অগ্নিমিত্র'। বঙ্কিমবাবুকে এইটি পড়তে পাঠিয়েছিলুম আগে লিখেছি। তাঁর এ বিষয়ে যে দুর্মূল্য চিঠি পেলুম, সে চিঠি গেছে পঞ্জাবের পলিটিক্যাল অগ্নিতে ভস্মীভূত হয়ে-সে কথাও পূর্বে বলেছি। 'মালবিকা-অগ্নিমিত্র’ সম্বন্ধে রবিমামার চিঠিও সঙ্গে সঙ্গে গেছে। শুধু এই বিষয়ের চিঠি নয় তাঁর ছেলেবেলা থেকে তাঁর যত চিঠি পেয়েছিলুম—অন্তত খান পঞ্চাশেক হবে—সবই অকালে কালগভে প্রলীন হয়ে গেছে।
তার পরে বেরল ‘মালতী-মাধব’। এ সবই আমার এফ-এ ও বি-এতে পাঠ্যপুস্তক ছিল। ‘মৃচ্ছকটিক’ আরম্ভ করেছিলুম, শেষ হয়নি। ‘কবি মন্দির’ নাম দিয়ে এগুলি একত্রে গ্রন্থাকারে বের করতেও প্রবৃত্ত হয়েছিলুম—দীনেশ সেনের তত্ত্বাবধানে, কেননা তখন নিজে আমি লাহোর যাত্রাভিমুখে। দু-তিন ফর্মা মাত্র ছাপিয়ে দিয়ে দীনেশবাবু আর শ্রমস্বীকার করে অগ্রসর হলেন না—ছাপান ফর্মাগুলি কোথায় রাখলেন, তারও সন্ধান পেলুম না—ছাপান ফর্মাগুলি কোথায় রাখলে, তারও সন্ধান পেলুম না—ছাপাখানা তাদের পাওনা আমার কাছ থেকে কড়ায় গণ্ডায় অগ্রিম নিয়ে নিয়েছিল। নিজে প্রবাসে থেকে কারো হাতে বই ছাপানর ভার দেওয়া নিরর্থক অর্থের শ্রাদ্ধমাত্র বুঝে নিলুম। তারপর দেশে এসে যখনই নিজে চেষ্টাপরায়ণ হয়েছি, জগৎজোড়া যুদ্ধের করালমূর্তি দেখা দিয়েছে—কাগজের দুষ্প্রাপ্যতাবশত সকলে আমায় নিরস্ত করেছে।
ইতিমধ্যে মায়ের সঙ্গে সোলাপুরে মেজমামার কাছে থাকতে গেলুম কয়েক মাসের জন্যে। সেখানে মারাঠি ক্লাবে দুর্গাপূজার ‘দশেরা’ বা বিজয়া দশমীর উৎসবের দিন বরোদার গাইকোয়ার এলেন। মহারাজা অতি ভদ্র—মায়ের প্রতি ও আমার প্রতি যে সৌজন্য দেখালেন, তাতে মুগ্ধ হলুম। কিন্তু সেদিন যে উৎসব দেখলুম, তাতে একেবারে চমৎকৃত হলুম। খালি লাঠি-তলোয়ার খেলার ও নানাবিধ ব্যায়ামের প্রদর্শনী —আর বীরত্বমূলক বক্তৃতার ধারা। আমাদের দেশের বাঈনাচ, গান ও মদ্যপান প্রভৃতির ধারা নয়।
তার পরে গেলুম, পুণায় বম্বে প্রসিডেন্সীর সিভিলিয়ানদের একটা Fancy-dress Ball-এ। সমস্ত ঘর-ভরা সাহেব-মেমদের মধ্যে আমরা তিনজন মাত্র ইণ্ডিয়ান—মেজমামা, মা ও আমি। মনে পড়ে মা সন্ন্যাসিনীর সাজে গিয়েছিলেন, আমি সরস্বতীর। মাকে এই সন্ন্যাসিনীর বেশ খুব শোভা পেত। বসন্ত-উৎসবের অভিনয়েও তিনি সন্ন্যাসিনীর ভূমিকা নিয়েছিলেন। নতুনমামী হয়েছিলেন উপেক্ষিতা নায়িকা—যতদূর মনে পড়ে সন্ন্যাসিনীর বরে তিনি নায়কের প্রেমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিতা হয়েছিলেন।
পুণায় যাওয়া সেবার এই ‘সিভিল-সার্ভিস নাচ’ উপলক্ষে। কিন্তু সে ব্যাপারটা আমার মনে কোন স্থায়ী রেখা কাটল না—পদ্মপত্রে জলের মত সরে গেল। লোকেনের সেই কথাটি মনে পড়ল—যেদিন সে অনুভব করেছিল ইংরেজদের ও তার মধ্যে কি একটি দুর্মোচনীয় ব্যবচ্ছেদ-রেখা। সে যাত্রায় আমার মনের ভিতর একটা স্থায়ী ভাবের বিক্ষোভ তুললে পুণায় শহরের মধ্যে শনিবার পেট দিয়ে যেতে একটি পেশোয়া-স্তম্ভের সম্মুখীনতায়। ভারতীতে সেবার আমার একটি প্রবন্ধ বেরল—‘বাঙালী ও মারাঠি’। ‘বীরাষ্টমী’ উৎসবের বীজ মনে মনে উপ্ত হল সেই দশেরার দিনের খেলা দেখায় ও এই পেশোয়াদের বীরত্ব-স্তম্ভের সন্দর্শনে। বাঙালীর জাতীয় উৎসব পন্থায় পরিবর্তন আনিয়ে তার জাতীয় চরিত্রের আমূল পরিবর্তনের একটি সূত্র আমার হাতে ধরালেন জগৎ-ব্যাপারের মহাসূত্রধর।
আজকাল ঘরে ঘরে, স্কুলে স্কুলে, সভায় সভায় মেয়েদের নাচ। সেকালে তাল রেখে রেখে স্টেজের উপর দু-পা চলাও গর্হিতাত্মক ছিল। একবার “আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি নাচিবি ঘিরি ঘিরি গাহিবি গান” রবীন্দ্রনাথের এই গানের সঙ্গে ছোট মেয়েদের একটু নাচের ধাঁচা ঢুকিয়ে দিলুম কত ভয়ে ভয়ে। কিন্তু তার চেয়ে সাহসিক কাজ আর একটা হয়েছিল।
সাড়ে সাত বছরে বেথুন স্কুলে ঢুকেছিলাম—প্রায় দশ বছর পরে, আমার সতের বছর বয়সে বি-এ পাশ করে স্কুল থেকে বেরিয়ে এলুম। কিন্তু স্কুলের সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন হল না। বছর বছর প্রাইজের সময় তদানীন্তন লেডি-সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট মিস্ চন্দ্রমুখী বসু ও পরে কুমুদিনী খাস্তগিরি আমায় অনুরোধ করে আনাতে লাগলেন মেয়েদের প্রাইজের দিনের গান-বাজনায় তৈরি করে দেবার জন্যে। আমার নিজের গান একটি শেখালুম
‘নমো নমো ভারত জননি—
বিদ্যামকুটধারিণী!
বরপুত্রের তপ-অর্জিত
গৌরব মণিমালিনী!’
এটি জগদীশ বসুকে নতুন মামার সঙ্গীত-সমাজ থেকে মানপত্র দেওয়ার উপলক্ষে রচিত হয়েছিল—অনেকেই এর আগে শোনেন নি। শত গানে স্বরলিপি আছে। বেথুন স্কুলে প্র্যাকটিস যখন চলছিল, তখন বিপিন পাল তাঁর কাগজে এই গান সম্বন্ধে একটা মন্তব্য লিখলেন—“তাঁর মেয়েরা বাড়িতে একটি নতুন গান অভ্যেস করছিল—তার কথা তাঁর কানে ভেসে এল। একটা আশ্চর্যতা অনুভব করলেন। এতদিন দেশে যত জাতীয়সঙ্গীত রচিত হয়ে এসেছে, সবেরই ভাব হতাশাময়, অতীতের স্মরণে শোকমূলক ক্রন্দনময়। এই গানের প্রাণ আর এক রকমের—বর্তমানের উপর দাঁড়িয়ে তেজস্বিতার সঙ্গে উৎসাহময় ও ভবিষ্যতের নিশ্চিততায় আনন্দময়।” কিন্তু প্রাইজের দিন যখন স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে এই গান গীত হল তিনি—বেথুন স্কুলের একজন কমিটি মেম্বর—একটু স্বতন্ত্র হয়ে পড়লেন, উসখুস করতে লাগলেন। পরের দিন চন্দ্রমুখী বসুকে ডেকে পাঠিয়ে জানালেন—এ গান স্কুলে গাওয়ান ঠিক হয়নি—কেননা, তার শেষ লাইনগুলি হচ্ছে—
এসেছে বিদ্যা, আসিবে ঋদ্ধি
শৌর্যবীর্যশালিনী।
অপমানক্ষত জুড়াইবি মাতঃ
খর্পকরবালিনি!
আমার সময়ে ছেলেমেয়েদের একই বিদ্যামন্দিরে co-education ছিল না। যখন আমি এফ-এ ক্লাসে উঠলুম সুধীদাদাদের মত আমারও ‘Science’ একটা পাঠ্য-বিষয় করবার প্রবল ইচ্ছা ছিল। বেথুন কলেজে তার সুযোগ নেই। আমি এডুকেশন-বিভাগে অনেক নিষ্ফল আবেদন-নিবেদন করলুম—কোন বন্দোবস্ত হল না। অবশেষে বাবামহাশয়ের বন্ধু ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের Science Association-এ সান্ধ্য লেকচারে যোগদানের আয়োজন হল আমার জন্যে। ভিন্ন ভিন্ন কলেজের এফ-এ ক্লাসের ছাত্রতে ভরা থাকত লেকচার হল। আমি একমাত্র ছাত্রী হলুম। প্রথমে ডাক্তার সরকার ও ফাদার লাঁফোর সঙ্গে তাঁদের ঘরে গিয়ে বসে থাকতুম, আমার সঙ্গে সুধীদাদা ও আমার দাদা থাকতেন। যখন লেকচারের সময় আসত লেকচারাররা উঠে হল-অভিমুখে যেতেন, সেই সময় আমিও উঠতুম, আমার দু-পাশে দুই দাদা থাকতেন। ছেলেরা ফিস ফিস করে বলত—‘Body-guards!’ আমাদের তিনজনের জন্যে সামনের লাইনে তিনখানা চেয়ার লাগান থাকত, ছাত্রদের জন্যে বেঞ্চ।
এই রকম করে Physics শিক্ষা হল আমার। বেথুনে বটানি নিতে পারতুম—যার দরুন কোন apparatus-এর দরকার হত না। কিন্তু আমার দৃঢ় পণ ছিল আমি বাড়ির ছেলেদের সমান সমান Physics-ই নেব। এই লেকচার শোনা ছাড়া বাড়িতেও সাহায্য পেতুম যোগেশবাবুর কাছে—আশুবাবুর মেজ ভাই। তখনো তিনি বিলেত যাননি—মেট্রপলিটনেই বোধ হয় বিজ্ঞানের অধ্যাপক। আমার জিদ বজায় রইল, পদার্থ-বিজ্ঞানে আমার প্রাথমিক প্রবেশ লাভ হল, পাসও হলুম এবং সায়ান্স এসোসিয়েশন থেকে একটি রৌপ্যপদক পেলুম। সেই পর্যন্ত ফাদার লাঁফোর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠভাবে জানাশোনা হয়ে গেল। তিনি শুধ, সেণ্টজেভিয়ারের একজন মাস্টার নন, সামাজিক মেলামেশায়—ডিনারে, ইভনিং পার্টিতে, সব আমোদ-প্রমোদে সদা সামিল হন; গল্প-গুজব, হাসিখুশি ও সৌজন্যে ভরা।
বি-এ ক্লাসে যখন উঠলুম, তখন লক্ষ্ণৌ মিস্ থোবার্নের স্কুল থেকে দুটি খ্রীস্টান মেয়ে এসে আমার সহপাঠী হল। একজন বাঙালী শরৎ চক্রবর্তী ও একজন হিন্দুস্থানী—নাম এথেল র্যাফেল। শরৎ একেবারে আদর্শ নেটিভ খ্রীস্টান মেয়ে—মিশনারি আগ্রহে ভরা। তার নিজের মুখের কথায় জানলুম—হিন্দু মেয়েদের খ্রীস্টান করার জন্যে তাদের বাড়ি থেকে চুরি করে আনা, লুকিয়ে রাখা, আত্মীয়দের ধোঁকা দেওয়া—সব কিছুতে অভ্যস্ত সে। এথেল আর একরকম প্রকৃতির। সেও খ্রীস্টধর্মে গোঁড়া বিশ্বাসী, কিন্তু ছল-চাতুরির ভিতর দিয়ে যায় না। সুন্দরী নয়, কিন্তু তার চোখ দুটির ভিতর এমন একটি ‘wistfulness’ আছে—দেখলেই তার প্রতি মায়া বসে। রবিমামাও সেটি লক্ষ্য করেছিলেন—যখন তাকে একদিন আমাদের বাড়িতে দেখেন।
বেথুন কলেজে এসে আমার সহপাঠী হয়ে তার বুকের ভিতর একটা মস্ত আলোড়ন চলতে থাকল। পঞ্জাব ও পশ্চিমে সেকালে দস্তুর ছিল মিশনরিরা কাউকে খ্রীস্টধর্মে দীক্ষিত করলে তাদের বংশগত ভারতীয় নাম ত্যাগ করিয়ে ইংরেজি নামে ভূষিত করত। তাই এথেল এখন ‘মিস্ র্যাফেল’। তারা বংশে রাজপুত, তার বংশপরম্পরাগত পদবী হচ্ছে ‘সিংহ’। আমাদের সংসর্গে এসে সে জাতীয়তার দ্বারা প্রবলভাবে আক্রান্ত হল। একটা গ্রীষ্মের ছুটিতে লক্ষ্ণৌ গিয়ে সেখানকার ম্যাজিস্ট্রেটকে নোটিস দিয়ে নিজের ‘এথেল র্যাফেল’ নাম পরিত্যাগ করে—‘লীলা সিংহ’ নাম পরিধান করলে। বোধ হয় কলকাতার য়ুনিভার্সিটি ক্যালেণ্ডারে তার ‘লীলা সিংহ’ নামই বেরিয়েছিল। ‘লীলা সিংহ’ নামেই, ফ্রক ছেড়ে শাড়ি পরেই সে থোবর্ন কলেজ থেকে আমেরিকায় খ্রীস্টান মেয়েদের প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছিল। স্বদেশপ্রীতি তার ভিতর সর্বতোভাবে জাগ্রত হয়ে উঠল। আজকাল মিশনরিদেরও পলিসি হচ্ছে কনভার্টদের দেশীয় নামই বজায় রাখা। বরঞ্চ লাহোরে এই নিয়ে একটা গোলযোগ হয়েছিল। চাকরির সুবিধার জন্যে একজনরা নিজেদের মিশনরি-দত্ত ইংরেজি নামের আবরণ ছাড়েন নি। ইংরেজের scale-এ বেতন পেলেন তাতে। কিন্তু গবর্নমেণ্ট জানতে পেরে তাঁদের জোর করে ইংরেজির সঙ্গে দেশী পদবীর একটা লেজুড় জোড়াতে বাধ্য করলে, যাতে সহজেই ধরা যায় যে, আসলে নেটিভ তাঁরা এবং বেতনের হারও তাঁর কমে গেল। লীলা সিংহ তাঁর বংশগত নাম নিজে হতে পুনর্গ্রহণ করে আত্মমর্যাদা ফিরে পেলেন।
বি-এ পাশের পর আমি দু-তিন বছর ‘ভারতী’র সেবকার্যে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত করলুম। তখনো বিয়ের কোন কল্পনাই মাথায় আসেনি—একেবারে যেন ‘আপনার মন আপনার প্রাণ আপনারে সঁপিয়াছি।’ সংস্কৃতে এম-এ দেবার জন্যে বাড়িতে প্রস্তুত হতে লাগলুম। মহেশ ন্যায়রত্ন শুনতে পেয়ে শাসালেন—“দেখব কেমন করে সংস্কৃত কলেজের ছাত্র না হয়ে বাড়িতে পড়ে এম-এ পাস করে।” আমার অধ্যাপক পণ্ডিত শীতলচন্দ্র বেদান্তবাগীশের জিদ চড়ে গেল—তিনি আমাকে পাস করাবেনই। সাংখ্যকারিকা পড়ান আরম্ভ হল। দুই-এক স্কুলে আমার প্রশ্নে তিনি অত্যন্ত প্রীত হলেন—বললেন ‘আর একটিমাত্র ছাত্র তাঁকে এই রকম প্রশ্ন করেছিল—সে হীরেন দত্ত—একখানি হীরের টুকরো।’
কিন্তু এম-এ শেষ পর্যন্ত পড়া হল না মহেশ ন্যায়রত্নের challangeএর উত্তর দেওয়া হল না। আমার মনের ভিতর ভারি একটা চাঞ্চল্য আসতে লাগল—বাড়ির পিঞ্জর ছেড়ে বাইরে ছুটে যাওয়ার জন্যে, কোন একটা নিরুদ্দেশ যাত্রার জন্যে, ভাইদের মত স্বাধীন জীবিকা অর্জনের অধিকারের জন্যে। মাকে বাবামশায়কে বিরক্ত করে করে অবশেষে বাবামহাশয়ের সক্রোধ সম্মতি পেলুম। বাকী রইল কর্তা দাদামশায়কে জানান, তাঁর সম্মতি নেওয়া। তিনি নতুন যুগের নিজের ছেলেমেয়েদেরই স্বাধীন ইচ্ছা ও তদনুযায়ী ব্যবহারের কখনো বিরুদ্ধতা করেন না। নাতিনাত্নীদের বেলায় ত করবেনই না জানা ছিল। মেজমামা যখন মেজমামীকে বিলেত নিয়ে যান, কর্তা দাদামশায় বাধা দেননি—বিলেত থেকে ফিরলে যখন তাঁকে নিয়ে গবর্নমেণ্ট হাউসের পার্টিতে যান কর্তা দাদামশায় বাধা দেননি—যদিও যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রভৃতিরা ঘরের বউকে সেখানে দেখে লজ্জায় পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিলেন, দেউড়ি দিয়ে হেঁটে মেজমামী যখন গাড়িতে চড়ছিলেন, বাড়ির পুরাতন ভৃত্যদের চোখ দিয়ে দর দর করে জল পড়ছিল। মা ও মামীরা তখন গঙ্গাস্নানে গেলে বাড়ি-ভিতর থেকে পাল্কী চড়ে গঙ্গার ঘাটে পৌঁছে, পাল্কীশুদ্ধ গঙ্গায়
ডুব দিইয়ে নিয়ে আসা হত তাঁদের। এ-বাড়ি থেকে গগন দাদাদের বাড়িতে কখন যেতে হলেও পাল্কী চড়ে যেতেন। সেই সব প্রাচীন সংস্কার ভঙ্গ করে যখন তাঁরা মেজমামার ইচ্ছানুযায়ী পথানুবর্তিনী হলেন, কর্তাদাদামশায় কোন বাধা দেননি তখন—আমার বেলায় কেন দেবেন? তবুও তাঁকে বলতে হবে, আশীর্বাদ নিতে হবে। তিনি আমার যাবার ইচ্ছা শুনে কোন আপত্তি প্রকাশ করলেন না। শুধু বড়মাসিমাকে ডেকে বললেন—“সরলা যদি অঙ্গীকার করে জীবনে কখনো বিয়ে করবে না, তাহলে আমি তার তলোয়ারের সঙ্গে বিয়ে দিই যাবার আগে।”
এই রোমাণ্টিক প্রস্তাবে আমি নিজের ভিতর ডুবে ভেবে দেখলুম—কখনোই যে বিয়ে করব না, এ রকম প্রতিজ্ঞা নিতে কি প্রস্তুত আমি? আমাদের বাড়িতে থিয়সফির প্রভাবের দিনে কাশী থেকে একজন মাতাজীর প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। মা বলতেন—“সরলার বিয়ে দেব না, ঐ মাতাজীর মত দেশের কাজে উৎসর্গিত থাকবে।” ছেলেবেলায় মা-বাপ স্রোতের যে মুখে ভাসান, তৃণটি সেই মুখেই চলতে থাকে। আমার মনোবৃত্তিও অ-বিবাহের মুখে চলে চলে তারই তটে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পরে মায়ের নিজের মত বদলে গিয়েছিল, খুব চাইতেন আমার বিয়ে দিতে, আমি কিন্তু আর ধরাছোঁয়া দিইনে—যাদের নাম করতেন, তাদেরই না-পছন্দ করতুম। কিন্তু কর্তা দাদামশায় যখন প্রতিজ্ঞা করতে বললেন যে, এ জীবনে কখনো বিয়ে করব না, আমার মনে বিদ্রোহ এল। নিজকে যাচিয়ে দেখলুম এরকম প্রতিজ্ঞা নিয়ে ‘চিরকুমারীত্ব’ স্বীকার করতে প্রস্তুত নই। কোন মেয়েই সেইটে তার অন্তিম লক্ষ্য করতে পারে না। যতদিন স্বচ্ছন্দে-বিহার চলে চলুক, কিন্তু একদিন যে পরচ্ছন্দে নিজেকে চালানর ইচ্ছে হতে পারে, সে ইচ্ছে পূরণের পথে আপনার হাতেই চিরকালের মত বেড়া তুলে দিতে মন মানলে না।
বাবামশায় যে সম্মতি দিয়েছিলেন তার ভিতর একটি গুপ্ত আশা তাঁর নিহিত ছিল—যাব কোথায়? উপযুক্ত চাকরি কোথায় আমার জন্যে বসে আছে? তা কিন্তু ছিল। সরলা রায়দের সঙ্গে আমি যখন মহীশূর ভ্রমণে গিয়েছিলুম, তখন মহারাজার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়নি—তিনি গিয়েছিলেন উটকামণ্ডে। কিন্তু সেখানকার দেওয়ান-প্রমুখ সকল বড় কর্মচারীরা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের দৌহিত্রী বলে আমায় অত্যন্ত উচ্চ নজরে দেখেছিলেন। আমি ডাক্তার রামস্বামীর মাতুল, মহারাজের প্রিয়পাত্র, রাজ্যে অতি প্রভাবশালী, মহারাণী গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সর্বেসর্বা নরসিং আয়েঙ্গার দরবার বক্সিকে একখানি টেলিগ্রাম পাঠালুম—
‘‘Want to serve the school. Wire if opening.”
দু-দিনের মধ্যে টেলিগ্রামের উত্তর এল—
“Always opening for you. Start as soon as you like.’’
পরে তাঁর কাছে গল্প শুনলুম, আমার টেলিগ্রাম পেয়ে তিনি আনন্দে বিভোর হয়ে মহারাজাকে গিয়ে বলেছিলেন—“একটি A1 পরিবারের মেয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমাদের স্কুলে আসতে চাইছেন। অমূল্য সুযোগ।”
মেজমামা তখন সেতারায়। মহীশূর যেতে বম্বে দিয়ে সেতারা পথে পড়ে। মা সেতারা পর্যন্ত আমার সঙ্গে গেলেন। মেজমামা সেতারা থেকে আমার অভিভাবক হয়ে আমায় মহীশূরে ছাড়তে গেলেন। মেয়েদের চাকরি করা সম্বন্ধে তাঁর মনে কোন দ্বিধা নেই—সব রকম সমাজ-সংস্কারের তিনি পক্ষপাতী। মহর্ষির দৌহিত্রী হয়ে চাকরি করতে যাওয়ায় কোন পারিবারিক লাঘব তিনি অনুভব করলেন না। আমায় পৌঁছিয়ে, সব রকম সুবন্দোবস্ত আছে দেখেশুনে নিশ্চিন্ত হয়ে তিনি ফিরে গেলেন।
কুমুদিনী খাস্তগিরি তখন মহীশূরে ঐ স্কুলেই এসিস্ট্যাণ্ট সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট। ঘটনাক্রমে তাঁর ঐ সময় চাকরি ছেড়ে কলকাতায় আসার প্রয়োজন হল। দেওয়ান বা দরবার বক্সির আমার জন্যে নতুন post সৃষ্টি করতে হল না। কুমুদিনী দিদির স্থান আমার জন্যে তখনি উন্মুক্ত হয়ে গেল। তাঁদের ইচ্ছা সকলের অপ্রিয় উপস্থিত যে ইংরেজ মেম লেডি সুপারিণ্টেণ্ডেণ্টের পদে বহাল আছে, তার সঙ্গে কড়ারের বছরটা উত্তীর্ণ হয়ে গেলেই আমাকে তার পদে অভিষিক্ত করবেন। একটা বছর এইভাবে চলুক।
আমি আত্মীয়স্বজনবিরহিত জীবনযাত্রায় পদক্ষেপ করলুম। আমার জীবনের মোড় ফিরল।