জীবনের ঝরাপাতা
দোলযাত্রা ফাল্গুন ১৮৭৯ শকাব্দ
প্রকাশক। শ্রীমহেন্দ্রনাথ দত্ত
শিশু সাহিত্য সংসদ প্রাইভেট লিঃ
৩২এ আপার সার্কুলার রােড। কলিকাতা ৯
स
মুদ্রক। শ্রীশৈলেন্দ্রনাথ গুহরায়
শ্রীসরস্বতী প্রেস লিঃ
৩২ আপার সার্কুলার রোড। কলিকাতা ৯
প্রচ্ছদপট। শ্রীনরেন্দ্রনাথ দত্ত
গ্রন্থন। ন্যসানাল ট্রেডার্স
১২ হলওয়েল লেন। কলিকাতা ৯
পরিবেশক। দাশগুপ্ত এণ্ড কোং প্রাইভেট লিঃ
৫৪।৩ কলেজ স্ট্রীট। কলিকাতা ১২
মূল্য চার টাকা
প্রকাশকের নিবেদন
এক একটা জীবন যুগের সঙ্গে এমন জড়িয়ে থাকে, যেন তাকে কেন্দ্র করে জীবন-কাহিনী যুগ-কাহিনীর প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায়। এমনি এক জীবনের অধিকারিণী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাগিনেয়ী সরলা দেবী। সে যুগটাকে বলা যায় বাঙলার তথা ভারতের নবজাগরণের যুগ। মহর্ষি পরিবারের বিশেষ দান আছে এই নবজাগরণের যুগে। মহীরুহের মত মহর্ষি ব্রাহ্মসমাজের মধ্যস্থলে বিরাজমান-শাখাপ্রশাখায় নবসংস্কৃতির উন্মেষ। সত্যেন্দ্রনাথ ভারতের প্রথম সিভিলিয়ান হয়ে ফিরে এসেও ‘হিন্দ, মেলা’য় যোগদান করছেন ও স্ত্রীশিক্ষা স্ত্রীস্বাধীনতা প্রচারে সচেষ্ট। স্বর্ণকুমারী দেবী দর্শনচর্চা, সাহিত্যসেবা ও ‘সখি-সমিতি’ সংগঠনে নিয়োজিত। সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালীর অর্থকরী উন্নয়নে নিবিষ্ট আর রবীন্দ্রনাথ নিজস্ব প্রতিভায় ধীরে ধীরে সমগ্র গগনমণ্ডল আলোয় উদ্ভাসিত করে তুলছেন।
আজকের বাঙালী-মানসকে বুঝতে হলে এই গৌরবময় যুগের ইতিহাস আমাদের বুঝতে হবে। সরলা দেবী ছিলেন এই যুগপ্রবাহের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে জড়িত। সে সময়ের ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, জাতি ও ধর্মের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটেছিল ও সর্বভারতীয় স্তরেও বহু, মনীষীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। জাতীয়তার প্রভাবে দেশ তখন উজ্জীবিত হচ্ছে। সভা, সমিতি, মেলা, আন্দোলনের একটা জোয়ার এসেছে। সরলা দেবী এসবের আবর্তে ঘূর্ণমান শুধু নন, মেয়েদের সংগঠনে সাহায্য করে, ছেলেদের শরীরচর্চা ক্লাবগঠনে উৎসাহিত করে, নানা অনুষ্ঠান, অধিবেশনে গান গেয়ে সে ঘূর্ণির পরিধি বিস্তারে প্রচেষ্ট। বন্দে মাতরম্ সঙ্গীতকে রবীন্দ্রনাথের দেওয়া সুরে জাতীয় সঙ্গীতরূপে প্রতিষ্ঠা সরলা দেবীরই কৃতিত্বের পরিচায়ক। বাঙলার বিপ্লব-আন্দোলনের অন্যতম উদ্গাতারূপেও তিনি আখ্যাত। ঠাকুরবাড়ির নতন ঐতিহ্যের মধ্যে তিনি মানুষ, সে ঐতিহ্যে আছে যেমন মা-বিচ্ছিন্ন দাসীর দাপট, স্নেহ-বর্জিত মাস্টারমশায়ের সন্ত্রাস, তেমনি আছে ঠাকুরবাড়ির নিজস্ব স্নিগ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশ যা অন্য থেকে স্বতন্ত্র। উৎসবমুখর সনাতনী হিন্দ-অনুষ্ঠান ব্রাহ্ম ঠাকুর-বাড়িতে নেই, কিন্তু সেখানে মাঘোৎসবকে কেন্দ্র করে কত নুতন সঙ্গীত, নৃত্য ও অনুষ্ঠানের রীতিতে বাঙলা দেশ ঐশ্বর্যমণ্ডিত হয়েছে। বাংলা দেশে প্রচলিত বহ, রীতির প্রবর্তন হয়েছে এই ঠাকুর-বাড়ি থেকে জন্মদিন —পালনের রীতি, শাড়ী-পরার আধুনিক রীতি, রাখি-বন্ধন ও বসন্তোৎসব পালনের রীতি এমনি কত।
‘জীবনের ঝরাপাতা’ সরলা দেবীরই দেওয়া নাম। মনে হয় সে যুগকে, সে পরিবেশকে তিনি গভীরভাবে ভালবাসতে পেরেছিলেন। তাই তাঁর জীবনকাহিনী হয়েছে যেন যুগ-আলেখ্যর একটি ঘনিষ্ঠ অধ্যায়, অতি সূক্ষ্ম রেখাও যেখানে প্রতিভাত হতে পেরেছে।
কাহিনীটি সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় ১৩৫১ সনের ২৫শে কার্তিক সংখ্যা থেকে শুরু হয় এবং ১৩৫২ সনের ২৬শে জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা পর্যন্ত চলে। ‘বিবাহোত্তর জীবনকথা’ তিনি লিখে যেতে পারেননি। এই অংশটি এবং ‘গ্রন্থোক্ত ব্যক্তি ও বিষয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয়’ অংশটি শ্রীযুক্ত যোগেশচন্দ্র বাগল মহাশয় অশেষ যত্নসহকারে সঙ্কলিত করে দিয়েছেন। সেজন্য তিনি ধন্যবাদার্হ। সরলা দেবীর একমাত্র পুত্র শ্রীযুক্ত দীপক দত্তচৌধুরী মহাশয় ‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থাকারে প্রকাশনার অনুমতি দিয়ে আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন।
বাঙলার পাঠক-পাঠিকা কর্তৃক গ্রন্থটি সমাদৃত হলে শ্রম সার্থক মনে করব।
সূচীপত্র
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।