জ্ঞাতি-শত্রু/পঞ্চম পরিচ্ছেদ
পঞ্চম পরিচ্ছেদ।
যখন হাঁসপাতালে উপস্থিত হইলাম, তখন বেলা প্রায় ছয়টা। সূর্য্যদেব তখন পশ্চিম গগনে ঢলিয়া পড়িয়াছেন। তাঁহার প্রখর প্রচণ্ড কিরণ ক্রমেই শীতল হইয়া আসিতেছে। মৃদুমন্দ মলয় পবন ধীরে ধীরে প্রবাহিত হইতেছে। বায়সাদি বিহঙ্গমকুল একে একে কুলায়াভিমুখে গমন করিতেছে। সরকারি কি সওদাগরী আপিসের কেরাণিগণ, দৈনিক কার্য্য শেষ করিয়া, অবসন্ন দেহে ধীরে ধীরে গৃহের দিকে অগ্রসর হইতেছে। সন্ধ্যা সমাগমে পুলিসকর্ম্মচারিগণ সুসজ্জিত হইয়া শান্তিরক্ষার জন্য নির্দ্দিষ্ট স্থানে গমন করিতেছে।
হাঁসপাতালের সাহেবের সহিত আমার সদ্ভাব ছিল। আমার আগমন বার্ত্তা পাইয়া তিনি তখনই আমাকে তাঁহার ঘরে ডাকিয়া পাঠাইলেন। আমি সত্বর তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিলাম এবং যে জন্য সে সময়ে সেখানে গিয়াছিলাম, তাহা প্রকাশ করিলাম।
আমার কথা শুনিয়া সাহেব তখনই সেই মৃতদেহের সন্ধান লইলেন এবং কিছুক্ষণ পরেই আমাকে লইয়া অপর একটী ঘরে প্রবেশ করিলেন।
ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, একজন সাহেব-ডাক্তার হরিসাধনবাবুর মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করিয়া পরীক্ষা করিতেছেন। বড় সাহেবের সহিত আমাকে দেখিয়া তিনি মস্তকোত্তলন করিলেন এবং ইংরাজী ভাষায় আমার সমভিব্যাহারী সাহেবকে বলিলেন, “আমার বড় ভাল বোধ হইতেছে না। লোকটার পাকস্থলীতে আর্শেনিক দেখা যাইতেছে। আমার বোধ হয় কোন খাদ্যদ্রব্যের সহিত আর্শেনিক মিশ্রিত ছিল। ইনি সেই খাদ্য ভক্ষণ করিয়াছেন।”
বড়সাহেব কোন উত্তর না করিয়া স্বয়ং পরীক্ষা করিলেন। পরে আমার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “আপনার সন্দেহ সত্য। লোকটা আর্শেনিক খাইয়া মারা গিয়াছে। যদি আপনি সময়ে দাহকার্য্যে বাধা না দিতেন, তাহা হইলে এ অদ্ভুতরহস্য আর কখনও উদ্ঘাটিত হইত না। আমি শীঘ্রই রিপোর্ট পাঠাইয়া দিতেছি।”
আমি আন্তরিক সন্তুষ্ট হইলাম। ভাবিলাম, ইহার মধ্যে কোন গোপনীয় রহস্য আছে। যখন হরিসাধন বাবু বিষপ্রয়োগে মারা পড়িয়াছেন, তখন কোন লোক যে তাঁহারই কোন আহার্য্য পদার্থের সহিত পূর্ব্বে বিষ মিশ্রিত করিয়া রাখিয়াছিলেন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। হরিসাধন বাবুর এমন কোন দুঃখ ছিল না, যাহাতে সেই আনন্দের দিনে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করিবেন।
এই প্রকার চিন্তা করিয়া আমি আর কোন কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া হাঁসপাতালের বড়সাহেবকে শত শত ধন্যবাদ প্রদান করতঃ তাঁহার নিকট বিদায় লইলাম।
পথে আসিয়া একবার ভাবিলাম, থানায় ফিরিয়া যাই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে কাশীপুরে শক্তিসাধনের বাসায় যাইতে অভিলাষ জন্মিল। কিন্তু পুলিসের বেশে যাইলে পাছে নিষ্ফল হইতে হয়, এই ভয়ে আমি থানায় ফিরিয়া গেলাম এবং সেখানে গিয়া ছদ্মবেশ পরিধান করতঃ একখানি ভাড়াটিয়া গাড়ী করিয়া কাশীপুরে গমন করিলাম।
বাগবাজারের পোল পার হইয়া আমি শকট হইতে অবতরণ করিলাম এবং পদব্রজে অতি ধীরে ধীরে শক্তিসাধনের বাসার দিকে গমন করিলাম। পূর্ব্বেই তাঁহার নিকট হইতে তাঁহার বাসার সন্ধান পাইয়াছিলাম, সুতরাং আমায় বিশেষ কষ্ট পাইতে হইল না।
যে বাড়ীতে শক্তিসাধন বাস করিতেন সেই বাড়ীখানি ক্ষুদ্র হইলেও দ্বিতল। বাহির হইতে এক মহল বলিয়াই বোধ হইল। বাহিরে সদর দরজার ডানদিকে একখানি ক্ষুদ্র বৈঠকখানা ছিল কিন্তু সেঘরে তখন কোন লোকই ছিল না।
আমি সহসা ভিতরে প্রবেশ করিতে সাহস করিলাম না। বাড়ীর একপার্শ্বে একটা প্রকাণ্ড মাঠ ছিল। সেই মাঠে তখন অনেক লোক সায়ংভ্রমণে নিযুক্ত ছিলেন। আমিও সেই আছিলা করিয়া মাঠে পায়চারি করিতে আরম্ভ করিলাম। কিন্তু মধ্যে মধ্যে শক্তিসাধনের বাড়ীর সদর-দরজার দিকে লক্ষ্য করিতে লাগিলাম।
কিছুক্ষণ এইরূপে অতীত হইলে সহসা অট্টহাস্যধ্বনি আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। শব্দের গতি লক্ষ্য করিয়া দেখিলাম, শক্তিসাধন বাবুর বাড়ী হইতেই সেই হাস্যধ্বনি উত্থিত হইতেছে। আমার অত্যন্ত সন্দেহ হইল। ভাবিলাম, যিনি ভ্রাতার আকস্মিক মৃত্যুতে একেবারে ম্রিয়মাণ হইয়া পড়িয়াছেন, তাঁহার বাড়ীতে এ প্রকার আনন্দের রোল কেন? তবে কি উহা শক্তিসাধন বাবুর বাড়ী নহে?
এইরূপ চিন্তা করিয়া আমি একজন ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করিলাম, “মহাশয়! শক্তিসাধন বাবুর বাড়ী কোথায় বলিতে পারেন?”
লোকটী আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিলেন না। তিনি বলিলেন, তিনি সেখানকার অধিবাসী নহেন। সুতরাং শক্তিসাধন বাবুর সহিত তাঁহার পরিচয় নাই। আমি হতাশ হইলাম না; অপর একব্যক্তিকে ঐ প্রশ্ন করিলাম। সৌভাগ্যক্রমে তিনি শক্তিসাধনের বন্ধু, তিনিই আমায় মাঠের পার্শ্বস্থ সেই বাড়ী দেখাইয়া দিলেন।
আমি আর কোন কথা না কহিয়া সেখান হইতে প্রস্থান করিলাম এবং প্রায় অর্দ্ধঘণ্টা পরে আবার সেই মাঠে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। তখন রাত্রি প্রায় সাড়ে সাতটা। মাঠ হইতে শক্তিসাধনের বাড়ীর একটী জানালা দেখিতে পাইলাম। জানালাটী একতলায় এবং অর্দ্ধোন্মুক্ত অবস্থায় ছিল। আমি অতি ধীরে ধীরে সেই জানালার নিকট যাইয়া পায়চারি করিতে আরম্ভ করিলাম। কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল, সেই জানালার দিকে।
কিছুক্ষণ এইরূপ পায়চারি করিতে করিতে আবার সেই হাস্যধ্বনি আমার কর্ণগোচর হইল। এবার আমি স্পষ্টই বুঝিতে পারিলাম যে, শক্তিসাধনের বাড়ী হইতেই সেই অট্ট হাস্যধ্বনি উত্থিত হইতেছে। মনে বড় সন্দেহ হইল। আমি আর নিশ্চিন্তভাবে পায়চারি করিতে পারিলাম না। অতি সন্তর্পণে সেই জানালার নিকট গিয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম। কিন্তু এমনভাবে অপর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে লাগিলাম, যেন কোন লোকের প্রত্যাশায় সেইখানে দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করিতেছি।
আমাকে ঐভাবে অপেক্ষা করিতে দেখিয়া দুই একজনের সন্দেহ হইল। কেহ কেহ কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। কিন্তু আমার উত্তর শুনিয়া সকলে হৃষ্টচিত্তে আপনাপন কার্য্যে প্রস্থান করিলেন।
কিছুক্ষণ এইরূপে দাঁড়াইলে পর, আমি সেই ঘরের ভিতর হইতে বামাকণ্ঠে যেন কাহাকে বলিতে শুনিলাম, “আমার দ্বারা ও কাজ হইবে না। তুমি ব্রাহ্মণের-সন্তান, আমি বাগ্দিনী। কোন সাহসে আমি তোমায় ভাত রাঁধিয়া দিব? আমায় কি পরকালের ভয় নাই?”
আবার সেই অট্টহাস্য। এবার কিন্তু পরিষ্কার বুঝিতে পারিলাম, শক্তিসাধনই ঐ প্রকার অট্টহাস্য করিতেছেন। অট্টহাস্য করিয়া তিনি উত্তর করিলেন, “যদি এতই পরকালের ভয়, তবে এ কার্য্যে হাত দিলে কেন?”
কিছুক্ষণ কি ভাবিয়া রমণী আবার উত্তর করিল, “দেখ শক্তিবাবু! দশ বৎসর বয়সে আমি বিধবা হই। তাহার কিছুদিন পর তোমায় দেখিতে পাই। তুমিও কেমন আমায় দেখিতে ভালবাসিতে, প্রায়ই আমাদের বাড়ীতে যাইতে, আমার মায়ের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতে। সেই অবধি আমাদের প্রণয় হয়। তাহার পর মা মারা পড়িল, তুমিই আমায় আশ্রয় দিলে। সেরূপ বিপদে পড়িয়া আমি জ্ঞান হারাইলাম এবং তোমাকেই মন প্রাণ সমর্পণ করিলাম। ইহাতে যদি পরকালে শাস্তি পাইতে হয়, সে শাস্তি সানন্দে গ্রহণ করিব, কিন্তু ইচ্ছা করিয়া কেন ব্রাহ্মণ-সন্তানকে আমার হাতের ভাত খাওয়াইব।”
রমণীর কথা শুনিয়া শক্তিসাধন পুনরায় বলিলেন, “তবে আমি আহার করিব কোথায়? যতদিন দাদা জীবিত ছিলেন, ততদিন তোমায় জেদ করি নাই।”
রমণী কিছু দুঃখিত হইল, বলিল, “তুমি এক কাজ কর,— নিকটে কোন হোটেলওয়ালায় সহিত বন্দোবস্ত কর।”
শক্তি আবার হাসিয়া উঠিলেন। হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “সে একই কথা। তোমার হাতে খাওয়া আর কোন হোটেলে অন্নাহার করা একই কথা।”
রমণী আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “সে আবার কি কথা?”
শ। কেন? তুমি কি মনে কর, হোটেলওয়ালাগণ সকলেই ব্রাহ্মণ? কখনও নহে। এমন কি, যাহারা রন্ধন করে, তাহারাও ব্রাহ্মণ-সন্তান নহে। তবে আমি সকল হোটেলের কথা বলিতেছি না, কোন কোন স্থানে প্রকৃত ব্রাহ্মণ-সন্তান দ্বারাই পাক-কার্য্য সমাধা হইয়া থাকে। কিন্তু সেরূপ হোটেল এখন এখানে পাই কোথা?
র। এত তাড়াতাড়ির প্রয়োজন কি? অন্বেষণ কর, শীঘ্রই সেরূপ হোটেলের সন্ধান পাইবে।
শ। তবে এই কয়দিন খাই কোথায়?
র। কেন, তোমার দাদার স্ত্রী কিম্বা বাড়ীর কোন লোক কি তোমায় ঐ সম্বন্ধে কোন কথা বলিয়াছেন?
শ। না—এখনও বলেন নাই বটে, কিন্তু শীঘ্রই ঐ সকল কথা শুনিতে হইবে। শুনিবার আগেই নিজের বন্দোবস্ত করা ভাল নয় কি?
রমণী কিছুক্ষণ কোন উত্তর করিল না। পরে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার দাদা কি কোন উইল করিয়া যান নাই?”
শ। কই, সে সকল কথাত এখনও শুনি নাই।
র। নিশ্চয়ই তিনি উইল, করিয়া গিয়াছেন। আর যখন তুমি তাঁহার সহোদর, তখন তিনি যে তোমার জন্য কোন প্রকার বন্দোবস্ত করিয়া গিয়াছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। আর যখন তোমার দাদার কোন পুত্ত্রাদি নাই, তাঁহার স্ত্রী তোমায় যথেষ্ট স্নেহ করেন, তখন, নিশ্চয়ই তিনি তোমার ভরণ-পোষণের বন্দোবস্ত করিবেন; অন্ততঃ তাঁহার বাড়ী হইতে অন্ন উঠিবে না।
শক্তিসাধন অস্পষ্ট স্বরে বলিলেন, “কিছুই জানি না। তবে দাদা যে আমার শত্রু ছিলেন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।”
রমণী বলিল, “তোমার জাতিচ্যুত করিয়া তোমার দাদা শত্রুতা করিয়াছেন বটে, কিন্তু তিনি যে আজীবন তোমায় প্রতিপালন করিলেন, তাহাও কি শত্রুতার পরিচায়ক? তিনি তোমায় জাতিচ্যুত করেন নাই—সমাজ জাতিচ্যুত করিয়াছেন। যাহা সমাজ করিয়াছে, তাহার জন্য তাঁহাকে দোষ দাও কেন?”
শ। তিনি আমার বিপক্ষে সাক্ষী না দিলে সমাজ আমাকে কখনও জাতিচ্যুত করিতে পারিত না। তাহা ভিন্ন, দাদা অন্য অনেক বিষয়ে আমাকে বঞ্চিত করিয়াছিলেন, সেই জন্যই আমার ভরণপোষণ ভার গ্রহণ করিয়াছিলেন।
র। যাহাই হউক, এখন এ বিপদ ঘটাইলে কেন? সন্দেহ হইয়াছিল, পাঁচজনকে বলিলেই ত ইইত, একেবারে থানায় খবর দিবা আবশ্যকতা কি ছিল? তুমি কি সত্যই রসময়কে বিষ দিতে দেখিয়াছ?
বাধা দিয়া শক্তি উত্তর করিলেন, “রসময় ভয়ানক লোক। বহুকাল হইতে তাহার উপর আমার আক্রোশ আছে। এই সুযোগে উহার দোষ চাপাইয়া উহাকে পুলিশের হস্তে সমর্পণ করিবার অভিপ্রায়েই এই কার্য্য করিয়াছি।
রমণ। যদি প্রমাণ না হয়, যদি সত্য সত্যই তোমার দাদা কলেরায় মারা পড়িয়া থাকেন, তাহা হইলে তোমার কি দুর্দ্দশা হইবে ভাবিয়া দেখিয়াছ কি?
বাধা দিয়া শক্তি বলিয়া উঠিলেন, “সে বিষয় নিশ্চিন্ত থাক, দুর্গা! দাদা নিশ্চয়ই বিষপানে মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছেন।”
রমণী আর কোন কথা কহিল না। শক্তিও আর কোন উচ্চবাক্য করিলেন না। রাত্রি প্রায় নয়টা বাজিল দেখিয়া আমি আর সেখানে অপেক্ষা করিলাম না, তখনই থানার দিকে ফিরিলাম। পথে একখানি ভাড়াটিয়া গাড়ীতে আরোহণ করিয়া কোচমানকে থানায় লইয়া যাইতে আদেশ করিলাম। কিছু দূর যাইলে পর ভাবিলাম, রসময় কেমন লোক, না জানিলে এ রহস্য কিছুতেই বুঝিতে পারিব না। শক্তিশাধন সামান্যলোক নহে। যখন তিনি উপকারী জেষ্ঠ্যের মৃত্যুতে নিজের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিতে উদ্যত, তখন তাঁহার অসাধ্য কর্ম্ম জগতে অতি বিরল। বিশেষতঃ, তিনি বহুকাল হইতে নীচ জাতীয়া রমণীর সহিত বসবাস করিয়া আসিতেছেন বলিয়া তাঁহার নিজের মনোবৃত্তি সকল নিস্তেজ হইয়া গিয়াছে, ব্রাহ্মণ-সন্তান হইয়া এবং উচ্চ-বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াও নানাবিধ নীচ কার্য্যে প্রবৃত্তি জন্মিয়ছে। সুতরাং তাঁহার কথায় কোনরূপে বিশ্বাস করা উচিত নহে। যক্ষণ না বিশিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাইবে, ততক্ষণ রসময়বাবুর উপর কোন প্রকার অত্যাচার করিতে দিব না।
এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে আমি থানায় আসিয়া উপস্থিত হইলাম। পরে ছদ্মবেশ ত্যাগ করিয় কিছু বিশ্রাম করিতে মনস্থ করিলাম।