ঝঙ্কার/অভাগা
তিমির যামিনী,—ভস্মীভূত হৃদয় সহিত;
স্মৃতি ক্ষীণ,
গায় দীন,—
পুড়ে পুড়ে হইয়াছে খাক্ জীবন তরীর।
নাহি মানে হাল,
সদা বিচঞ্চাল,
ভেসে যায় লহরে লহরে সমুদ্র পানেতে!
ধীর কাল,
অতি কাল—
আসিছে অনন্ত ছায়া;
ঘুরিছে জীবন-তরী এবে অকুল পাশারে!
তুমি মাত্র সার মোর,
তুমি মাত্র এ ভবার্ণবের,—
অকুলেতে পার কর,– ভব-কর্ণধার!
ছিড়েছে বন্ধন,—
এবে অকিঞ্চন,
বেঁচে আছে হেতুমাত্র পৃথিবী ধিৎকার!
তবে কি কারণ,
বল তপোধন,—
দাও এ তাপিরে তাপ, সুধাই তোমারে?
গিরি শৃঙ্গ হ’তে কত,
আঁখিজল অবিরত,—
চলিছে, ভাসিছে, এবে অনন্ত উচ্ছ্বাস,
মিলিবে কি তব পায়,
কাঁদিয়া কাঁদিয়া বায়,
মৃদুচ্ছ্বাস কভু কি হে ঢালিবে প্রাণেতে?
মৃদু মৃদু ভায় যবে,
ফুলকুল ধায় তবে;
খেলা করে,—হিল্লোলে উছলে সাধে।
প্রাণে তবে জাগে ধীরে,
কি যেন—কি যেন বলে,—
আবার মিলায়ে যায় সাধের উচ্ছ্বাস।
কি যেন রে ঘুম ঘোরে,
মধুর স্বপন সাজে,
সতত বিহরে এবে আমার প্রাণেতে।
সুধিয়া না পাই তার,
বচন সুধার ধার,
ধরি ধরি কর তার—কোথায় পলায়!
কল্পনা-কুসুম আঁকা,
পাখা বিস্তারিয়ে বাঁকা,
ধেয়ে উঠে শূন্য পানে—কোথায় মিলায়!
যায় কি সে তব কাছে,
দেখায় মানবে এবে,—
হেন দুর্ব্বলতা দেব, কেমনে সহিব বল?
যাচি প্রাণ বিনিময়,
রাখ বাণী দয়াময়,
কাতর কিঙ্করে এবে দয়া-ধার শোধ।
নিতি নিতি আমি কাঁদি,
নিতি নিতি আমি সছি,
এ বিপুল বিশ্ব মাঝে কেবল হে আমি কাঁদি।
প্রাণাধিকে, বলে যারে,
বাহু প্রসারিয়ে সাধে,—
এ পরাণ আমার;–
দারুণ তাচ্ছল্য ভরে, সেই সে ললনা মোরে,
হানে বাণ থির সন্ধানিয়ে!
ধীর, থির, আপন মনেতে,—
তাই এবে কাঁদায় জীবনে।–
নহে কিরে পারে এবে আমার হারাতে?
ফুলধনু স্বপনের,—
আঁকা মাত্র হৃদয়ের,
তাই এবে ধেয়ে যায় শ্মশানে শ্মশানে—
কেন আর ভুলিতে পারিনে?