ঝঙ্কার/সাগর তটে
নীল নিধি রেখা পারে,
দাঁড়ায়ে উদাস প্রাণে,
কে তুমি রয়েছ হেথা আপনার মনে?
বিজন সে পথ অতি,
কেমনে যাইবে তুমি,
ক্ষত স্থান জলে যাবে, ব্যথা মাত্র পাবে।
সাথি কি পাইবে আর,
কবিতা কুসুম-হার,
আনমনে!—আর কভু পাইবে কি তারে?
হাসি হাসি মুখ তার,
নয়নে করুণ ধার,
দেখিতে কি কভু আর পাইবে জীবনে?
সুধাই তোমারে প্রাণ,
বল কত দিন আর,
দাঁড়ায়ে থাকিবে ওই সাগরের ধারে।
ধীরে ধীরে স্রোত মাঝে,
শুষ্ক তৃণ ভেসে যাবে,
স্মৃতি মাত্র পড়ে রবে তোমায় কাঁদাতে!
তবে কি কারণে বল,
বৃথা তুমি জ্বালা সহ,
দারুণ-দারুণ জ্বালা এই পৃথ্বীতলে?
নিমেষেতে ভুলে যাও,
প্রেমে বিগলিত হও,
গগনেতে ভাঙ্গাতান আপনি মিলাবে।
সুদূর কন্দর হ’তে,
বদ্ধ তান ছুটে আসে,
পাগল আমার চিত সতত কাঁদায়।
কে জানে কেন যে পুন,
ভুলে যাই সে সকল,
পর্ব্বতের গান এবে হারায় আমায়!
বিজন সে গীতখণ্ড,
সতত যে করে দ্বন্দ্ব,
কভু বা আসিয়া পড়ে পর্ব্বতের পায়।
এ হেন সুন্দর তার,
কভু কি দেখেছ আর,—
পুন এবে ভাঙ্গা হৃদি মাতাইয়ে গায়।
গাও তবে প্রাণ ভ’রে,
চাহিনা’ক জুড়াইতে,
সুদুরের গান বড় লাগিয়াছে ভাল।
দূর-দূর-দূর ওই,
চকোর চকোরী দুই,
ভাসিতেছে গান ভরে ভুলে গিয়ে কাল;
আমিও ভুলিয়ে যাব,
আমিও গাহিব পুন,
ভাঙ্গা তান গাব আর দেখিব সে আলো।
হৃদয় কি জুড়াবে না—
ক্রন্দন কি ফুরাবে না—
সতত ডরাই আমি সেই অন্ধ-কাল!
৫
ওই এলো—ওই এলো,
ঢাকিল আমায় পুন,
সহিতে না পারি আর যন্ত্রণা অপার;
নিশ্বাস রুধিয়ে গেল,
কোথা গেলে শ্বাস পাব,
বদ্ধ বায়ু ফাটিয়া বা যাইবে আমার!
ওহো জীবন আমার,
এই ছিল হে তোমার,—
কাঁদে প্রাণ আকুলিত অশ্রুবারিধার!
৬
—সহসা স্বপন সম,
কি যেন জাগায় মম,
দূরে ধরে স্বভাবের সুন্দর কানন।
বৃক্ষপরে শাখী বসি,
গান গায় হাসি হাসি,
আকাশের পানে চায়,—অনন্ত জীবন!
দেখে দূরে তার খয়ে,
আবার আসিয়া জোটে,
কোথা হ’তে কেবা আসে সুন্দর শোভন।
বিচিত্র এ খেলা ঘর,
বালক বালিকা সব,
সদা পুর্ণ করে যথা মানস আপন!
হেরিয়া সে ছবিময়,
মানসে উদয় হয়,
কত যে লহর তায় নাচাইয়া চলে;
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানস এক,
ভুলে গিয়ে স্বপনের,
জীবনের কথাগুলি হৃদিতন্ত্রে গাহে।
মানস আমার ফুল,
মানস আমার ভুল,
মানসের তরে প্রাণ সতত বিহরে।
কপোত কপোতী দুটী,
চঞ্চু ভরে বাসা করি,
আহ্লাদ সোহাগ ভরে লীলা সাঙ্গ করে!
এ হেন সুন্দর খেলা,
কভু কি দেখেছে ধরা?
আহা! প্রেমে বিগলিত স্বপনের মত!
ঢেলে দেয় শ্রোত মাঝে,
আপনা পাসরি দোঁহে,
আনমনে যায় শুধু কবিটীর মত।
কপটতা সে জানে না,
হৃদয়ও তার কহেনা—
আঁথি ঠারি নিষ্ঠুর রমণী কয় যত।
সদা সে বিহরে এবে,
আপন মানস ভুলে,
তাই এবে আমি থাকি পাখীটির মত।
কেন তবে রে জীবন,
কাঁদ এবে অকারণ,
হাসি-ফাঁসি বিস্মরণ হইবিরে কবে?
আসিছে অনন্ত ছায়া,
লোচন আমার আঁধা,
তবু কি রে ধাঁদাচক্রে ঘুরিবি জীবনে?
ধূধূধূধূ চ’লে যায়,
সংশয় হাসির প্রায়,
কি অনন্ত মধুচক্র, সেই সুখধামে;
সুকোমল দেহ তব,
অপাঙ্গ ভ্রুভঙ্গ সহ,
ওইথানে প’ড়ে রবে সমাধি সদনে!