ঝঙ্কার/প্রেমের তাচ্ছল্য
সাঁঝের আবেশে ঢলিয়ে ঢলিয়ে,
যবে সে বালিকা অলিন্দ পরেতে,
গাহিত সতত মোর পানে চেয়ে।–
হাসি হাসি মুখ,
অন্তরের কথা অন্তরে ঢাকিয়ে
কি জানি কেমনে দিয়েছিল প্রাণ,
এ জনমে আর নারিনু ফিরাতে!
কত যে তাহার তরে
আনিনু মল্লিকা মালতী ফুল,—গোলাপ একটী;
গাঁথিনু মালিকা যতন করিয়ে;
—অন্তরেতে তার কিবা যে জাগিছে,
নারিনু বুঝিতে এ জনমে আর—
আঁখি ঠারি ছিঁড়িয়া ফেলিল মালিকা সুন্দর!
যবে বিস্ফারিত নয়ন তাহার—
ধীরে ধীরে তাকাইত মোর পানে শুধু
ভুলে যেত সংসার অসার!—
তাই বুঝি সহিতেছি যন্ত্রণা অপার?
পাতার কুটীরে, তটিনীর তীরে,
পর্ব্বতের গুহ, বিজন বিপিনে,
আমার পরাণ সতত বিহরে;
তাই বুঝি তার ভাল নাহি লাগে?
রাজরাণী হ’তে তার বুঝি সাধ যায়,
—নহে কেন পাগলে কাঁদায়?
ক্রমে ক্রমে দূরে-দূরে, তারকা ফুটিত যবে,
চ’লে যেত ফেলিয়া আঁধারে!
আমি শুধু থাকিতাম ব’সে, গুনিতাম তারা।—
আঁধার যামিনী, শান্ত নিশিথিনী,
স্তম্ভিত ধরা, পাগলের পারা!
স্মৃতির বিহনে, ক্লান্ত আঁখিযুগ
—ঘুমায়ে পড়িত তথা।
স্বপন আবেশে, ভাসিতে ভাসিতে
কোথায় যাইয়া পড়িতাম আমি;–
দেখিতাম তথা, মোর সে বালিকা,—
গাঁথিছে মালিকা যতন করিয়ে!
হৃদয়ের ক্ষত মুছিয়া তখন,
অধীর নয়নে তথায় গিয়ে
চুমিতাম আমি বালিকা কপোলে
দিত সে মালিকা আমায় যবে!
—সহসা অমনি স্বপন টুটিত,
দেখিতাম তারা জাগিছে শিরেতে;
আঁধারে আঁধার মিশে দশদিশি
খেলিছে তাপস বুকেতে ল’য়ে!
শূন্য—হারা প্রাণ, কোথায়—কোথায়,—
খুঁজিয়া বেড়াতেম যথায় তথায়;
নাহি পেতেম ঢুঁড়ে শান্তি নিরালয়,
চারি ধারে মোর শ্মশান জাগিত!
অবশেষে যবে দেখিতাম ধীরে,
আপন হৃদয় শ্মশান হ’য়েছে,
তখন নীরবে বসিয়া থাকিতাম।
—ক্ষণে ক্ষণে তবু লুকান অনল,
লুকায়ে লুকায়ে জ্বলিয়া উঠিত!
এখনও যাহা যতন করিয়ে
রেখেছি চাপিয়ে ভস্মরাশি মাঝে!