ঝঙ্কার/বাল্য স্বপ্ন
আজি এ হৃদয়ে, সহসা কেন রে,
জাগিয়া উঠিছে তান?
ঘুমে ঢুলু ঢুল, হৃদয় আকুল,
গাহিছে প্রাণের গান।
দূর হ’তে আসে, স্মৃতি-সমীরণে,
একটী প্রাণের ছায়া;
আধখানি তান, আধখানি গান,
প্রভাত-রবির কায়া!
যেই দিন প্রেমে, জ্ঞানহার। হ’য়ে,
পাগল পরাণ মোর,
গেয়েছিল গান, আধ আধ তান,
সুরেতে হইয়া ভোর;
নিমেষে ভুলিয়ে, মায়ের কোলেতে
সেই অপরূপ প্রেম!
গ্রন্থিবিনোদন, হইল শোভন,
পাষাণে প্রকাশি হেম।
শ্যাম কলেবর, নিরখি মানব,
শ্যামে ডালি দিল প্রাণ,
শ্যামেতে মোহিয়া, শ্যামেতে ঢালিয়া,
গেয়েছিল এক গান।
সেই গানখানি, আজ বুকে আসি,—
আঁধার হৃদয় মোর,—
ক্ষণে ক্ষণে যেন, চপলার মত
খেলিছে হৃদয় ভোর।
স্বপন দোলায়, দোলায়ে বালায়,
খেলে হাসি হাসি প্রাণে—
সেরূপ জাগায়, পরাণ কাঁদায়,
বাঁধি রাখে পুন প্রেমে!
ধীর ধীর বায়, পাখীকুল গায়,
শিহরে পরাণ কাঁদে।
ধীরি ধীরি যাই, মৃদু চুমি খাই,
পুনরপি আশ মেটে।
শান্ত নিশিথিনী, অদ্ভুদ যামিনী,
শুইয়া জননী কোলে,—
দেখিছি স্বপন, লীলা সে আপন,
সুদূর দোলায় দুলে।
চাঁদিম খেলিত, লহর উঠিত,
ঝিকিমিকি করি যেন!—
ধরিতে যাইত, হাত প্রসারিত,
আশ মিটিত না কেন?
সেই ছিল মুখ, এই এবে দুখ,—
কাতর পরাণ কাঁদে,
যা ছিল তা ছিল, সকলই গেল,
বাঁধিয়া রাখিল প্রেমে!
প্রেমে ভরা তান, মাতোয়ারা গান,
স্বরগ উছলি যেন;
সতত আসিছে কাঁদাতে আমারে—
ভুলিতে পারি না কেন?