বিদায়।

কাতরপরাণ মাতা,
নয়নে উছলে ধারা,
বিদায় দিলেন মোরে শোকশান্ত মনে।

ধীরে ধীরে বারি ঝরে,
অদূরে সরষু গাহে,—
দীন নেত্রে যাচিলেন দেবতার পায়ে।

ফুটিল মাধবী ফুল,
গুঞ্জে ভ্রমে অলিকুল,
স্বপন আবেশে গিয়ে পড়িল তথায়।

অঞ্জলি অঞ্জলি আর’,
কত যে দিলেন পুন,

মরণের শেষ বায় লুটায় কেবল!

আঁখি পরে শুধু আমি,
চাহিয়া চাহিয়া কাঁদি,
নিশি-প্রাণে ভেসে যায় সঙ্গীতের ধারা!

গগনের প্রান্ত ভাগে,
স্বপন রাজ্যের মাঝে,
যেন যায় ধীরে ধীরে লুকাইতে তথা।

গোধূলি আসিছে ক্রমে,
জগত যাইছে নিভে,
কি যেন সে যবনিকা ঢাকিছে প্রাণেতে!

আঁধারে প্রাণের পরে,
একটী তারকা জাগে,
অকস্মাৎ হেরি যেন দূর নিধি পারে!

প্রবল তরঙ্গাঘাতে,
কাঁপে বুক থর থরে,
মৃদু ক্ষুদ্র দীপ যেন যামিনীর প্রাণে।

নিভে গেল, নিভে গেল,—

বুঝি সকলি ফুরাল,
একটী জ্যোতির কণা, তাও বুঝি গেল!

অনন্ত আঁধার শুধু
দিবার প্রাণের বঁধু!
খেলিতেছে রঙ্গচ্ছলে জগতের মাঝে!

সারা দিন একি খেলা,
সারা দিন একি কথা,
উদ্ভ্রান্ত উদাস চিত পাগলের মত?

অলীক স্বপন ভ্রমে,
তারাটী আমার কোলে,
ঘুম ঘোরে খেলা করে এইরূপ ক'বে।

নাচিয়া নাচিয় উঠে,
কাঁদিয়া কাঁদিয়া লুটে,—
মোহিনী তানের সাথে আপন হারায়ে।

দিগভ্রম হ’য়ে আমি
নীরবেতে জাগি যামি,
উচ্ছ্বসিত হৃদি মোর, প্রেম পারাবার!


কোথাও না পাই খুঁজে,
বিস্তীর্ণ সংসার মাঝে,
একটী মধুর হাসি,—প্রাণের বিকাশ।

স্নেহময় অঙ্ক পরে,
আর কি রে পাব ফিরে,
সে মধুর প্রাণঢালা গলিত সোহাগ?

নয়ন মুদিয়া গেল,—
সে হাসিমা প্রাণে র’ল,—
কল্লোলিনী কলস্বরে আবার গাহিল।