তীর্থরেণু/নব্য অলঙ্কার
ললিত শব্দের লীলা সকলের আগে কবিতায়;
পয়ার সে বর্জ্জনীয়, বরণীয় ছন্দে বিচিত্রতা;
নিশ্চয় নির্ণয় নাই, গ’লে যেন মিলিবে হাওয়ায়;
ভারে যাহা কাটে শুধু, রবে না এমন কোনো কথা।
যথা অর্থ সংজ্ঞা খুঁজে উদভ্রান্ত না হয় যেন চিত;
নাই ক্ষতি নিভুল শব্দটি যদি নাই পাওয়া যায়;
ব্যক্ত আর অব্যক্তের যুক্তবেণী মদির সঙ্গীত!
তার মত প্রিয় আর নাহি কিছু নাহি এ ধরায়।
সে যেন বিমুগ্ধ আঁখি ওড়নার সূক্ষ্ম অন্তরালে,
স্পন্দহীন মধ্যাহ্বের সে যেন গো আলোক-স্পন্দন;
সে যেন সন্তাপহারী শরতের সন্ধ্যাকাশ-ভালে
প্রদীপ্ত ও দীপ্তিহীন নক্ষত্রের মৌন সংক্রমণ!
আমরা চাহি গো শুধু লীলায়িত ‘ছায়া-সুষমায়’,
রঙে প্রয়োজন নাই, কি হ’বে রঙীন্ তুলি নিয়ে?
‘ছায়া-সুষমা’ই শুধু বিচিত্রের মিলন ঘটায়,—
বাঁশী আর শিঙারবে,—স্বপনে স্বপনে দেয় বিয়ে।
নিষ্ঠুর বিদ্রূপ আর অশুচি বাচাল পরিহাস,—
পরিহার কর দুই প্রাণঘাতী ছুরির মতন;
রন্ধন-গৃহের যোগা ও যে নীচ রসুনের বাস,
দেবতার (ও) পীড়াকর; তাঁদেরো কাঁদায় অকারণ।
কবিতার কুঞ্জগৃহে বাগ্মিতা প্রবেশ যদি করে,—
বাগ্মিতার গ্রীবা ধরি’ মোচড় লাগায়ো ভাল মতে;
অনুশীলনের লাগি সাধু শ্লোক এনো ভাষান্তরে,—
সে কাজ বরঞ্চ ভাল;—কবিতারে মাঠে মারা হ’তে।
বাণীর লাঞ্ছনা, হায়, বর্ণনা করিতে কেবা পারে,—
অনধিকারীর হাতে কি দুর্দ্দশা, বিড়ম্বনা কত!
হীরা, জিরা মিলাইয়া শিকল সে গেঁথেছে পয়ারে,
নির্জ্জীব, বৈচিত্র্যহীন;—অর্ব্বাচীন অনার্য্যের মত।
শব্দের ললিত লীলা,—সমাদর সর্ব্বযুগে তার;
উড়িয়া চলিবে শ্লোক মুক্তপাখা পাখীর মতন!
পাওয়া যাবে সমাচার প্রয়াণ-চঞ্চল চেতনার,
আরেক নূতন স্বর্গ,ভালবাসা আরেক নূতন!
কবিতা সে হ’বে শুধু সঙ্গীতে সঙ্কেতে উদ্বোধন,—
আভাসের ভাষাখানি,—প্রভাতের মঞ্জিম বাতাস;
দু’পাশে দোলায়ে যাবে গোলপ কমল অগণন!
বাকি যাহা,—সে কেবল পণ্ডশ্রম, পাণ্ডিত্য-প্রয়াস।