তীর্থরেণু/বিদায়
বিদায়
বিদায়! যে দেশে গেলে ফেরে নাকো আর
এবার আমারে যেতে হ'বে সেই দেশে;
বিদায় জন্মের মত বন্ধুরা আমার,—
যদিও তাহাতে কারো যাবে নাকো এসে।
তোমরা হাসিবে বটে শত্রুরা আমার,
এ চির প্রয়াণ-বার্তা,অতি সাধারণ;
সবারে জানিতে তবু হ'লে এর স্বাদ
একদিন; ওগো মিত্র ওগো শত্রুগণ!
একদিন অন্ধ-করা অন্ধকার তীরে
দাঁড়ায়ে আপন কর্ম্ম স্মরিবে যখন,
কখনো দহিবে ক্ষোভে, কভু অসন্তোষে,
পরম কৌতুকে হেসে উঠিবে কখন।
সংসারের রঙ্গগৃহে যখনি যেজন
অভিনয় সাঙ্গ করি’ চলে যেতে চায়,—
উল্লাস-অবজ্ঞা-ভরা বিপুল গর্জন
একবার ফিরাইয়া আনিবেই তায়।
মানুষ দেখেছি ঢের এ দীর্ঘ জীবনে,
দেখেছি অনেকে আমি অন্তিম শয্যায়;—
বৃদ্ধ বিপ্র, বৃদ্ধ বেশ্যা, বৃদ্ধ বিচারক,—
সবারি সমান দশা মৃত্যু যাতনায়।
মিথ্যা প্রায়শ্চিত্ত আর মিথ্যা চান্দ্রায়ণ,
মিথ্যা গঙ্গাযাত্রা, মিছে মৃদঙ্গের রোল,
সফরে চলেছে ওই আত্মারাম বুড়া,—
তার লাগি মিছে অশ্রু, মিছে ‘হরিবোল'।
হাসে শয়তানী হাসি হেটো লোক যত,
জীবনের ভুল ধরি’ পরিহাস করে;
এমনি করিয়া শেষ হয় প্রহসন,—
তাও লোকে ভুলে যায় দিন দুই পরে!
হায়! ক্ষুদ্র পতঙ্গিকা! ক্ষণিকের জীব!
অদৃশ্য সূতায় বাঁধা রঙীন্ পুতুল!
নির্বাণের করতলে ঘাড়-নাড়া বুড়া!
কি তোরা? কোথায় যাস্?—চেয়ে জুলজুল!
আজ আমি দাঁড়াইয়া যেই সন্ধিস্থলে,
কে পারে দাঁড়াতে হেথা অব্যাকুল মনে?
যে জানে ভয়ের কিছু নাহি পৃথ্বীতলে,
জীবনে যে খ্যাতিহীন, অজ্ঞাত মরণে।